
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত এবং ইউরোপের দেশ ইতালি, রোমানিয়াসহ বিশ্বের শ্রমবান্ধব দেশগুলোতে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠছে শ্রমবাজার। চলতি বছরের প্রথম দিকে শ্রমিক যাওয়ার হার গতানুগতিক থাকলেও এক মাস না যেতেই শ্রমসেক্টরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর শীর্ষ পদের কর্মকর্তারা তাদের অধীনস্থ রুটিন কাজের ওপর জবাবদিহি বাড়ানো শুরু করলে পরের মাসেই আবারও শ্রমিক যাওয়ার ব্যবধান বাড়তে থাকে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে ৪২ হাজারের বেশি কর্মী বিদেশে বৈধভাবে পাড়ি জমান। এটি ইতিবাচক সংবাদ।
ক’বছর আগে লিবিয়ায় শ্রমশক্তি রপ্তানির সুসংবাদটি দেশবাসীকে স্বস্তি দিয়েছিল। সেখানে কর্মী পাঠানোর ব্যাপারে সমঝোতা স্মারক রয়েছে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি লিবিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুলে যায় প্রথমবারের মতো। তবে ২০১১ সালে সেখানে চরম অস্থিতিশীলতা শুরু হলে বদলে যায় পরিস্থিতি। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে লিবিয়াযাত্রা। বর্তমানে লিবিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারে আবারও। বিদেশে নতুন কর্মী গেলে দেখা দেয় রেমিটেন্সের নতুন সম্ভাবনা। রেমিটেন্সের স্বাভাবিক গতিতে প্রতিবন্ধকতা এলে সেটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়। কোভিড-পরবর্তী বিশ^মন্দায় রেমিটেন্স প্রাপ্তিতে কিছুটা নিম্নগতি হয়েছিল, যা এখন আর নেই। কিন্তু অবৈধ পথে অর্থাৎ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে অর্থ এলে তার হিসাব থাকে না এবং জাতীয় অর্থনীতিতেও তা দৃশ্যমান হয় না।
রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির প্রাণপ্রবাহ। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির ওপর যে চাপ তৈরি হয়েছে, তা মোকাবিলার জন্য তৎপর রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রবাসীদের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। তাছাড়া সংখ্যায় অল্প হলেও এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানির বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া চাই। ফেব্রুয়ারিতে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার, যা একক মাসের হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ। ব্যাংকাররা বলেন, রমজান ও ঈদুল ফিতরের আগে রেমিটেন্সের চাপ এবং অবৈধ হুন্ডি চ্যানেলের ব্যবহার কমে আসাই রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির বড় কারণ। ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছর জাপানে ২৯০ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই হাজার ৯৪৫ জন, যুক্তরাজ্যে দুই হাজার ১৯৩ জন ও ইতালিতে দুই হাজার ৯৮৫ জন কর্মী গেছেন। অর্থাৎ জাপানে ৪৩ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৯৪ শতাংশ ও ইতালিতে ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে বিদেশে কর্মীর পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাবে। দেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সিন্ডিকেট ভেঙে সরকারের সহায়তায় কর্মী প্রেরণ করতে পারলে শ্রমিকদের জন্য অনেক ভালো হতো। এ বিষয়ে সরকারের পাশাপাশি নিজেরা দায়িত্ব সচেতন হয়ে কাজ করতে পারলে প্রতিটি দেশেই বাংলাদেশের দক্ষ শ্রমিক পাঠানো সম্ভব। আমাদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হচ্ছে সৌদি আরব। এই বাজারে যেন কোনো ধরনের অস্থিরতা তৈরি না হয়, সেটিকে সরকারের পাশাপাশি বায়রার সদস্যদের খেয়াল রাখতে হবে। এমনিতেই মালয়েশিয়া, দুবাই, ওমান, বাহরাইন, ইরাকসহ অনেক শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে আছে। নতুন করে যাতে আর কোনো শ্রমবাজার বন্ধ না হয়, সে দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যাওয়া শ্রমবাজারের বাধা অপসারণে উদ্যোগী হওয়া চাই।
প্যানেল