
অবৈধ অস্ত্র সব সময়েই বিপজ্জনক, যা সমাজের স্থিতিশীলতা এবং মানুষের স্বস্তি বিনষ্টকারী। কবির ভাষায় বলা চলে, অবৈধ অস্ত্র সব সময়েই এক অন্ধকার জিনিস। সব সময়েই বিধ্বংসী প্রতীক। কথা হলো বৈধ অস্ত্রও অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হতে পারে। আবার লুট হয়ে যাওয়া বৈধ অস্ত্রও হয়ে ওঠে অবৈধ অস্ত্র। বৈধ অস্ত্রের তবু একটা নিরীক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু লুট বা চুরি হয়ে যাওয়া অস্ত্র, যা হয়ে ওঠে অবৈধ অস্ত্র, তা কখন কী অপকর্মে ব্যবহৃত হবে, তার আগাম ধারণা পাওয়া অসম্ভব। তাই লুট হওয়া অস্ত্র যতক্ষণ না বৈধ আইনের আওতায় চলে আসে, ততক্ষণ শঙ্কা দূর হয় না। সে কারণেই লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার অত্যাবশ্যক ও জরুরি।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে সুসংবাদ দিতে পারেননি নীতিনির্ধারকরা। বৈঠক সূত্রে জানানো হয়, ১ হাজার ৩৮৭টি অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি এখনো। পুলিশের সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা-ফাঁড়িসহ পুলিশের নানা স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছিল। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান গুলি প্রভৃতি।
লুণ্ঠিত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর শুরু হয় যৌথ অভিযান। ইতোমধ্যে সেই অভিযানের সাত মাস পার হয়ে গেছে। এরপরও প্রায় দেড় হাজার লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার না হওয়া উদ্বেগজনকই বটে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠবে, অস্ত্রগুলো কাদের কাছে আছে? সংশ্লিষ্টদের দাবি, লুট হওয়া অস্ত্র জেল পলাতক আসামি, পেশাদার অপরাধী এমনকি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। আরেকটি বিষয়ও উদ্বেগজনক। সেটি হলো, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামির মধ্যে ৭০০ জন এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে কিছু জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিন নিয়ে জেলখানা থেকে বেরিয়ে আসে। রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যেও পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার ঘটনা ঘটছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনদিন জটিল হচ্ছে। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। অপরাধের মাত্রা বেড়েছে, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে ঘাটতি স্পষ্ট। ক্রমবর্ধমান চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড এবং কিশোর গ্যাংসংক্রান্ত সহিংসতা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জনজীবনের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার খুবই জরুরি।
অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে, এটিই প্রত্যাশা। রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক উভয় শ্রেণির অপরাধীর হাতে লুট হওয়া অস্ত্র থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এখানে কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। আইন তার নিজের গতিতে চলুক। অপরাধী ধরা পরুক, উদ্ধার হোক লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্র।
প্যানেল