ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

পাকিস্তানের বোধোদয় হোক

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৯ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৮, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

পাকিস্তানের বোধোদয় হোক

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে একাত্তরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার অভিযোগে দেশটির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়াসহ অমীমাংসিত তিনটি বিষয়ের সুরাহা চেয়েছে ঢাকা। এ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকেপড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান এবং ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রেরিত বিদেশী সাহায্যের অর্থ হস্তান্তর। পাকিস্তানও বিষয়গুলো সুরাহার জন্য আলোচনার সদিচ্ছা ব্যক্ত করেছে। পাশাপাশি বৈঠকে আলোচনায় দুই দেশ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে ব্যাপক মতবিনিময় হয়। দুই দেশের অভিন্ন ইতিহাস, সাংস্কৃতিক বন্ধন ও জনগণের অভিন্ন আকাক্সক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো দ্রুত চূড়ান্তকরণ, নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ এবং বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও সংযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। পাকিস্তান তাদের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ মৎস্য ও সামুদ্রিক বিষয়ে কারিগরি প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দিয়েছে। পাকিস্তানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির প্রস্তাবে বাংলাদেশ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছে এবং শিক্ষা খাতে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।
উল্লেখ্য, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য অস্ত্র সমর্পণ করেছিল। সেদিন আত্মসমর্পণ করে প্রাণ বাঁচাতে পেরেছিল পাকিস্তানি সেনারা। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ঘটেছিল বাংলাদেশের। স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশের মানুষ। এই যুদ্ধে অসংখ্য নিরীহ বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। অগণিত নারীকে করেছিল ধর্ষণ ও হত্যা। এই নারকীয়তায় পাক হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল এ দেশে থাকা তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী। তারপরও পাকিস্তানের আত্মসমর্পণকৃত সব সেনা স্বাভাবিক অবস্থায় পাকিস্তানে ফিরে গিয়েছিল। বীরের মর্যাদায় তাদের সাদরে গ্রহণ করেছিল পাকিস্তান। তাদের অমানবিক আর পাশবিক অত্যাচারের ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ মানুষের যে বিপুল ক্ষতি হয়েছিল, তা তলিয়ে দেখা কিংবা পুরো বিষয়টি তদন্ত করার কথা ভাবেনি দেশটি। এমনকি পাকিস্তান আজও বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের হত্যার জন্য ক্ষমা চায়নি কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেনি।
বাংলাদেশ অগণিত শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বর্তমানে পাকিস্তানের গণহত্যার জন্য ক্ষমা চাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবি করছে। সর্বশেষ, ২০১০ সালেও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বৈঠক হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, দেড় দশক পর এখন যে বৈঠক হলো, তাতেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টি এমন নয়। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আলোচনার সদিচ্ছা জানানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে, যা ইতিবাচক। তাছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে মজবুত, কল্যাণমুখী ও ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঐতিহাসিকভাবে বিদ্যমান অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা হওয়া জরুরি।

প্যানেল

×