
বাংলাদেশ-চীন কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দেশের জনগণকে এক হাজার শয্যার একটি হাসপাতাল শুভেচ্ছা উপহার দেবে চীন সরকার। হাসপাতালের নাম ‘চায়না-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ জেনারেল হাসপাতাল’ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে হাসপাতাল নির্মাণসহ স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে চীন। তাদের এ মহাপরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে তিনটি নতুন হাসপাতাল নির্মাণে বিনিয়োগ করবে চীন। নীলফামারীতে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল, চট্টগ্রামে একটি জেনারেল হাসপাতাল ও ঢাকায় একটি পুনর্বাসন হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে। নীলফামারীতে তিস্তা প্রকল্পের কাছে ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ১৬ একর জায়গা প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। ঢাকার পাশে সাভার কিংবা ধামরাইয়ে দুর্ঘটনায় আহত-প্রতিবন্ধী রোগীদের পুনর্বাসনের জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি রিহ্যাবিলেটেশন হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে চীন। এছাড়াও চট্টগ্রামের দক্ষিণ কর্ণফুলীতে ৫০০-৭০০ শয্যার একটি জেনারেল হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে চীনের। দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করতে যথেষ্ট আগ্রহ আছে বন্ধুপ্রতিম দেশটির। বিশেষায়িত টারসিয়ারি হাসপাতালটি বিশ্বের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় নির্মাণ করা হবে। এই হাসপাতালকে কেন্দ্র করে একটি চিকিৎসা হাব গড়ে তোলা হবে উত্তরবঙ্গে।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের পুনর্বাসনের জন্য একটি রোবটিক ফিজিওথেরাপি সেন্টার স্থাপনের সিদ্ধান্তও হয়েছে শাহবাগস্থ বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসেছে। চীনের সহায়তায় সংস্কার ও আধুনিকায়ন হলে অনেক সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে। সেবার মান হবে আরও উন্নত। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে চীনের সরব উপস্থিতি দীর্ঘকাল ধরে। দেশের হাসপাতাল ব্যবসায়ীরা মেডিক্যাল সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি, ওষুধ কোম্পানিগুলো নিয়মিত ওষুধের কাঁচামাল এপিআই (অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট) চীন থেকে আমদানি করে। প্রতি বছর বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী মেডিক্যাল পড়াশোনা করতে চীনে যান। নিঃসন্দেহে চীনের এই মেগা বিনিয়োগ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের জন্য একটি বড় মাইলফলক হতে যাচ্ছে। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাদের দেশের সচ্ছল রোগীরা ভারত, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে যায়। তবে বেশি যান প্রতিবেশী দেশ ভারতে। যদিও ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর ভারত বাংলাদেশী পর্যটক ও রোগীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ রেখেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চীন সরকার এবং সে দেশের কোম্পানিগুলো যদি বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ করে, তাহলে দেশের মানুষের জন্য তা হবে অনিন্দ্য আশীর্বাদ। রোগীদের অর্থ ও সময় নষ্ট করে আর বিদেশে ছুটতে হবে না। দেশেই নিশ্চিত হবে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা। স্বাস্থ্যসেবায় ভারত নির্ভরতা অনেকাংশে কমে যাবে। ভৌগোলিক অবস্থান ও বিভাগীয় সদর দপ্তর বিবেচনায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আধুনিক মানের হাসপাতাল হলে নদীভাঙন কবলিত এলাকার মানুষসহ উত্তরবঙ্গের বিপুলসংখ্যক জনগণ হবে উপকৃত। এ প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসন ও স্থানীয় জনগণ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। অচিরেই দেশের জনগণ আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা লাভ করবে এবং সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ঘটবে বলেই প্রত্যাশা।
প্যানেল