
কৃষিতে তৈরি হয়েছে অপার সম্ভাবনার সুযোগ। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির সর্বোত্তম ব্যবহার করে সমলয় পদ্ধতির চাষাবাদের যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। যান্ত্রিক এ পদ্ধতি কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা যোগ করবে। কৃষি বিভাগ কৃষি প্রণোদনার আওতায় কম খরচে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে এবং ব্যাপক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে। যদি কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা যায়, তবে দেশে উৎপাদিত প্রায় সকল কৃষিপণ্যই ফলন হবে বেশি। হাজারো বছরের সনাতনী পদ্ধতির চেয়ে এ পদ্ধতি প্রয়োগে অন্তত ১৫ দিন আগে ধান ঘরে তোলা যাবে। চলতি বোরো মৌসুমে শেরপুর জেলায় ৯২ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় ১০০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে হয়েছে চাষাবাদ। আগামী দিনে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ আরও বাড়বে। দিনকে দিন সমলয় পদ্ধতির চাষাবাদের প্রতি কৃষকের ঝোঁক বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলা কৃষি বিভাগ আধুনিক যন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে।
এক সময় বাংলাদেশ ছিল কৃষিপ্রধান। সময়ের হাত ধরে শিল্পায়ন ও নগরায়ণের ফলে দেশের মানুষ কৃষিমুখিতা কমিয়ে হয়েছে বিদেশমুখী। শিল্প-কলকারখানায় চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করার প্রয়াস পেয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানবজীবনের সকল পর্যায়ের মতো কৃষিতেও লেগেছে সম্ভাবনার ছোঁয়া। সীমিত ভৌগোলিক সীমায় অধিক জনসংখ্যার দেশে নাগরিকদের খাদ্য চাহিদার দিকে বরাবরই মনোযোগ থাকে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের। দেশে কৃষির প্রাচীন পদ্ধতিতে একরপ্রতি ৬৫-৭০ মণ ধান উৎপাদন হয়। কিন্তু আধুনিক সমলয় পদ্ধতিতে চাষ করলে একরপ্রতি ধান পাওয়া যায় ৮০-৮৫ মণ। ফলে, দেশের কৃষককুল দুদিক দিয়েই লাভবান হবেন। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ এবং কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর যন্ত্রের মাধ্যমে ধান মাড়াই করার কারণে একদিকে যেমন শ্রমিক সংকট মোকাবিলা করা যাবে, অন্যদিকে আধুনিক চাষাবাদে কমে যাবে উৎপাদন খরচও। এ ছাড়াও উচ্চফলনশীল জাতের ধানের বীজ ব্যবহার করায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ১০/১৫ দিন আগেই ফসল ঘরে তোলা যায়। কৃষি খাত যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষককুল। ফলে, দেশের কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসা সময়ের বিষয় মাত্র।
বাংলাদেশের কৃষির আধুনিকায়নে টেকসই যান্ত্রিকীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের কৃষি বিভাগ। এতে লাভজনক হবে কৃষি ও কৃষক। উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে, পণ্যের দাম ভোক্তার হাতের নাগালে থাকবে, কৃষিপণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে- এমনটি আশা করা যায়। দেশের কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে, সার্বিক চাষাবাদ প্রক্রিয়া লাভজনক করতে কৃষিবিভাগ সমলয় পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ ও ধান কাটা সবই যন্ত্রের মাধ্যমে করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ভর্তুকি মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতিও দিয়েছে। কৃষি বিভাগ এ পদ্ধতিতে চারা রোপণ করতে স্থানীয় কৃষকদের ট্রেতে বীজতলা তৈরিসহ সহজে চারা ওঠানোর প্রশিক্ষণও দিয়েছে। কৃষি বিভাগের উদ্যোগ আরও বেগবান হোক, এমনটিই আমরা আশা করব।
প্যানেল