ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

বাজারে অস্থিরতা

প্রকাশিত: ২০:০৯, ১৭ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২১:০২, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

বাজারে অস্থিরতা

আবারও বাংলাদেশে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। দেশের অধিকাংশ ভোক্তা সয়াবিন তেল ব্যবহার করে থাকেন। তেলের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, সয়াবিন তেলের দাম নতুন করে বাড়ানো হয়েছে প্রতিলিটারে ১৪ টাকা। এতে প্রতিলিটারে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮৯ টাকা। এত দিন যা ছিল ১৭৫ টাকা। এ ছাড়াও খোলা সয়াবিন ও পামতেলের দাম প্রতিলিটারে ১২ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৬৯ টাকা। গত ৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল লিটারে ৮ টাকা। ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির কথা জানালে সরকার শুল্ক ও করে ছাড় দিয়ে মূল্য বৃদ্ধি ঠেকিয়ে রাখে। এছাড়াও বাজারে বেড়েছে চাল, পেঁয়াজ, মাছ ও সবজির দাম। আগে থেকে বাড়তে থাকা চাল-ডালের দাম কমারও কোনো লক্ষণ নেই। ভর্তুকি কমাতে ও রাজস্ব বাড়াতে দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদক দেশগুলো হচ্ছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও যুক্তরাষ্ট্র। সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অনেকাংশে নির্ভর করে এই দেশগুলোর উৎপাদন এবং রপ্তানি পরিস্থিতির ওপর। ২০২০ সালের পর থেকে করোনা মহামারি এবং এর পরবর্তীতে সাপ্লাই চেনে বিঘ্ন ঘটার কারণে তেলের উৎপাদন কমে যায়। যার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ে। পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যান্য দেশে তেলের দাম কমলেও বাংলাদেশ এর লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হয়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং ডিলাররা অনেক সময় অতিরিক্ত মজুত করে রাখে। যা বাজারে সংকট তৈরি করে ও দামের অস্থিরতা বাড়ায়। যেহেতু সয়াবিন তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল, এজন্য বাংলাদেশ সরকারের আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন করা দরকার। যা তেলের দাম কমাতে সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে উৎপাদন বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সয়াবিনের উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়া এবং যথেষ্ট পরিমাণে স্টোরেজ সুবিধা না থাকার কারণে, সয়াবিন তেলের দামে অনাকাক্সিক্ষত উত্থান-পতন দেখা যায় প্রায়ই। দেশে সয়াবিনের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি প্রদান করা যেতে পারে। এছাড়াও সয়াবিনের চাষে উৎসাহিত করতে সরকার ভর্তুকি দিতে পারে, যাতে কৃষকরা বেশি পরিমাণে সয়াবিন উৎপাদন করতে আগ্রহী হয়। যদি স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, তাহলে আমদানি কমিয়ে দেশের অর্থনীতি এবং বাজারের ওপর চাপ কমানো সম্ভব। গবেষক ও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশের তেলের মজুত ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে তেলের সংকট এড়ানো সম্ভব। সরকার যদি বাজার মনিটরিং আরও শক্তিশালী করে এবং কারসাজি রোধে ব্যবস্থা নেয়, তবে নিত্যপণ্যের দাম আরও সহনীয় হতে পারে।

প্যানেল

×