
ছবি: জনকণ্ঠ
বছর ঘুরে আবার এলো পহেলা বৈশাখ, যা কিছু জীর্ণ-পুরোনো, অশুভ ও অসুন্দর, তা পেছনে ফেলে নতুনের কেতন উড়িয়ে বাঙালি বরণ করে এ দিন। শুরু হলো আরও একটি নতুন বছর-১৪৩২ বঙ্গাব্দ। সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা ৮ আগস্ট নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। প্রধান উপদেষ্টা তার প্রথম ভাষণে জাতির উদ্দেশ্যে বাক স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তার জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণেই, তিনি তার ও সরকারের সমালোচনার মাধ্যমে ভুলগুলো শুধরে দেওয়ার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান করেন। অতীতে সাইবার ক্রাইমসহ বিভিন্ন কালো আইনের খড়গে মানুষ অনেকটা বাকরুদ্ধ থাকলেও, এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরই জনসাধারণ বাকপটু হয়ে, সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে সরব হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্যের ন্যয় এমনই একজন সরকারি নারী কর্মচারী যার নাম তাপসী তাবাচ্ছুম ঊর্মি বাক-স্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগ করতে শুরু করেন।
তাপসী তাবাচ্ছুম ঊর্মি প্রধান উপদেষ্টার রিসেট বাটন ও আবু সাঈদকে নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। ফেসবুকে কয়েকটা শব্দ পোস্ট দেখা মাত্রই বিদ্যুৎ গতিতে ওএসডি, সাময়িক সাসপেন্ড ও বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক আদালতে এক হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞ প্রদান করা হয়েছে। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ বছর অধ্যয়ন করেছেন, সেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। যা কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, পুরো পৃথিবীর জন্য বিরল দৃষ্টান্ত। এ রেকর্ড অদূর ভবিষ্যতে ভাঙবে বলে সচেতন মহল মনে করে না।
ওয়াকিবহাল মহল মনে করে উপরোক্ত ইস্যুকৃত ০৭/০৯/২০২৪ খ্রিঃ এর ১১৩১ নং প্রজ্ঞাপনে একাধিক দুর্বলতা রয়েছে। এ স্মারকে তাপসী তাবাচ্ছুম ঊর্মিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টার সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করার মাধ্যমেও তাকে এ সুযোগ প্রদান করা যেত। স্মারকে এমন কোনো বিষয় উল্লেখ করা ছিল না যে, তিনি অসৎ দায়িত্বজ্ঞানহীন বা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন, অতীতে তার কোনো মন্দ রেকর্ড ছিল বা অতীতে কখনো কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়েছিল ইত্যাদি। তিনি একজন নবীন কর্মকর্তা, তার চাকরি ২ বছরও পূর্ণ হয়নি, অর্থাৎ চাকরিটি স্থায়ী হয়নি।
ঊর্মি কোটায় নিয়োগকৃত নন, তিনি মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কার্য্যালয়ে তিনি সহকারী কমিশনার হিসেবে ¯’ানীয় সরকার, রাজস্ব এবং জুডিশিয়াল মুন্সিখানা(জেএম) শাখায় অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তার এ অকাল পরিণতিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্য্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা অঝোরে কেঁদেছেন। কিছু শব্দ ফেসবুকে পোস্ট করা ব্যতীত অন্য কোনো ভুল তার নেই। আমি বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই বলছি।
প্রধান উপদেষ্টা দেশব্যাপী তুমুল বিতর্ক ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পর রিসেট বাটনের ব্যাখা দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ নিলেন। অন্যদিকে ঊর্মি আত্মপক্ষ সমর্থনের এই সুযোগটি হতে বঞ্চিত হলো। সে হয়তো এই সুযোগ পেলে বিষয়টি ভুল হিসেবে স্বীকার করে নিতে পারতেন। তার অব¯’ান পরিষ্কার করতে পারতেন। বাংলাদেশ সরকারও একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে হতো না। তখন ঊর্মির শাস্তি ভর্ৎসনা বা সতর্ক করে দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারতো। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি ২০১৮ সালে কোটাবিরোধী আন্দোলনে ঊর্মির সরব উপ¯ি’তি ছিল।
আমার কোনো ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না যে, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে ঊর্মি সাময়িকভাবে বহিষ্কার হয়েছেন। তিনি এটুকু সমালোচনা নিতে পারবেন না, এটা অকল্পনীয়। আমার মনে হয় অতি উৎসাহীরা সরকারের আস্থাভাজন হতে ত্বরিত গতিতে ঊর্মিকে বহিষ্কার করেন।
মাদকাসক্তরা তাদের মাদক ক্রয় অর্থ জোগাড় করতে প্রথমে মা, বোন ও গৃহবধূদের ওপর নির্য্যাতন করে থাকে। একজন নারী কর্মজীবী হলে, এক্ষেত্রে সে কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকে। অর্থাৎ মাদকমুক্ত বিশ্ব গড়তে নারী ক্ষমতায়ন অতীব জরুরি বলে মনে করি।
ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি না থাকলে এ পৃথিবীটা হয়তো একদিনও টিকে থাকত না। বাংলাদেশের সরকার ঊর্মিদের মতো নবীন শিশুতুল্য কর্মকর্তাসহ দেশের এ ধরনের ভুলভ্রান্তিকরাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রয়োগ না করে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে হয়তো এ ফুলগুলো অংকুরেই বিনষ্ট হতো না। বাংলাদেশ সরকার তাকে নিয়ে এতটা টানা হেঁচড়া না করে, তার বয়স বিবেচনা, অভিজ্ঞতা বিবেচনা, চাকরিকালীন তার সততা, জবাবদিহিতা, কর্মদক্ষতা, প্রথম বারের মতো এমন ঘটনা হওয়ায় তাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে পারতো। তা না করে অন্য মামলার তুলনায় এ মামলায় গতি বাড়িয়ে দিয়ে দ্রুত তার শাস্তি নিশ্চিত করতে তৎপর বলে সচেতন মহল মনে করেন।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে হলে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে দেশের মানুষকে। অনাকাক্সিক্ষত কিন্তু সত্য, বাঙালির নববর্ষ কখনোই সব বাঙালির কাছে সমানভাবে আসেনি। কারও কাছে এসেছে খরা হয়ে। এটি পীড়াদায়ক। সামাজিক-সংস্কৃতিক ঐক্য গড়ে ওঠেনি বিধায়ই এ বৈষম্যের পরিখা গভীর ও প্রশস্ত হয়েছে। তবে পহেলা বৈশাখ বৈষম্যের দেয়াল ভাঙার কথা বলে; গড়তে, তুলতে বলে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব। নতুন বছর শান্তি ও সমৃদ্ধির বার্তা বয়ে আনুক। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে সুর মিলিয়ে বলি-বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক।
এ অবস্থায় নববর্ষে দেশবাসীকে ক্ষমার বার্তা দেওয়ার লক্ষ্যে হলেও, মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে একজন শিশুতুল্য কর্মকর্তা হিসেবে নারীর ক্ষমতায়নে তাপসী তাবাচ্ছুম ঊর্মিকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মহোদয়কে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
শিহাব