
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আন্দোলন বা দাবিদাওয়া আদায়ের নামে যেভাবে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটছে, তা এক গভীর উদ্বেগের বিষয়। যে-কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বা আন্দোলন নাগরিক অধিকার হলেও, তা কখনোই সহিংসতার রূপ নিতে পারে না। কিন্তু আজকাল দেখা যাচ্ছে, বিশেষ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা ব্যক্তিবিদ্বেষ থেকে এমন কিছু গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে যারা জনস্বার্থে নয়, বরং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকে উদ্দেশ্য হিসেবে নিচ্ছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন, এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় দেশের অর্থনীতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে একপ্রকার আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। শিশু-কিশোররাও নিরাপদ নয়। অথচ এই অপকর্মগুলো অনেক সময় ‘আন্দোলনের অংশ’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়। আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান সম্ভব- এটাই হওয়া উচিত গণতান্ত্রিক মানসিকতা। শক্তিপ্রয়োগ বা ভাংচুর করে দাবিদাওয়া আদায় কখনোই দীর্ঘস্থায়ী সমাধান দিতে পারে না। বরং এতে করে দেশের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষুণ্ন হয়, তেমনি নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাও বাধাগ্রস্ত হয়।এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন সচেতন ও সক্রিয় নাগরিক প্রতিরোধ। নাগরিকদের, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে—আন্দোলন মানে রাস্তা অবরোধ নয়, আগুন ধরানো নয়, বরং সচেতনভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। সেই সঙ্গে প্রশাসনকে আরো সক্রিয় হতে হবে। যারা পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের সহিংসতা ঘটাচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই, আমাদের সমাজ হোক মানবিক, শান্তিপূর্ণ এবং দায়িত্বশীল। ভাংচুর-লুটপাটের মাধ্যমে নয়, যৌক্তিক সংলাপ আর সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমেই গড়ে উঠুক একটি শান্তিময় ও উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ।
মল্লিকপুর, সুনামগঞ্জ, থেকে