ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

সুশাসনের অভাব কেন

বিলকিস নাহার মিতু

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

সুশাসনের অভাব কেন

দেশে লুটতরাজের ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পরে ৫ আগস্ট থেকে এদেশ যেন এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে পার করছে। আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, লুটতরাজ, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ নানা বিষয় আমরা লক্ষ্য করে এসেছি। দেশের এই দুরবস্থার জন্য এক ধরনের স্বার্থান্বেষী মহল যেমন লেগে আছে  তেমনি মাদকাসক্ত ও কিশোর গ্যাঙও যুক্ত এর সঙ্গে। আইনের পরোয়া না করে যা খুশি তাই করে  বেড়াচ্ছে তারা। ছিনতাই, খুন যেন নিত্যদিনের ঘটনা। এরমধ্যে আবার ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে গত সোমবার ৭ এপ্রিল সারাদেশে পালিত হয় বিক্ষোভ মিছিল। মিছিলে অংশ নেয় সব ধরনের মানুষ কিন্তু সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খুলনাসহ সারাদেশে এই বিক্ষোভের মধ্যে শুরু হয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে লুটতরাজ। বাটার  শো রুম থেকে শুরু করে কে এফ সি, ইউনিমার্টসহ বেশ কয়েকটি দোকান ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুট করা হয়। আবার লুট করে সেগুলো সামাজিক  যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে প্রচার করে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের বেশ কয়েকজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এই লুটতরাজ একদিকে যেমন নিরাপত্তা শঙ্কা  তৈরি করছে অন্যদিকে অর্থনৈতিক অবস্থা ও বিনিযোগকারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।  
যেদিন এই ঘটনা ঘটে সেদিন ঢাকায় চলছিল আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন ‘ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ এবং এতে কয়েকশ বিদেশী বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করতে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। দেশের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তাদের মনে নেতিবাচক প্রভাভ  ফেলেছে আর এজন্য দায়ী বিক্ষোভের নামে লুটপাট করা ব্যক্তিরা। লুটপাটের ঘটনার পর কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের বেশ কয়েকটি শাখার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।  দেশের এই চলমান লুটপাট, খুন, ছিনতাই বেড়ে যাবার জন্য দায়ী সুসাসনের অভাব। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এগুলো প্রতিহত করতে ব্যর্থ বলে জনগন নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে নিজেই আবার অন্যায়ের পাল্লা ভারী করে। যারা লুটপাট করে তাদের প্রতি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় না বলেই তারা বারবার অন্যায় করার সাহস পাচ্ছে। গত সোমবার আমরা দেখলাম কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হলো ব্যবসায়ীদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি কঠোর না হয়  দেশের এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দামানো সম্ভব নয়। জনগনকে অবশ্যই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে কিন্তু অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার নামে লুটতরাজ করা কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ নয় সে বিষয়টুকুও তাদের বুঝতে হবে। আইন নিজের হাতে না নিয়ে আইনের হাতে অপরাধীকে ধরিয়ে দিতে হবে। অপরাধীকে যথাযোগ্য শাস্তি দিতে হবে এবং কোনো প্রকার দয়া দেখানো যাবে না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না যায়, তবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে যা আমাদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে। তাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থে এবং সাধারণ জনগণের জানমালের রক্ষার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক ভূমিকা পালন করার দাবি জানাচ্ছি।
 সরকারি বি এল কলেজ, খুলনা থেকে

×