ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

দূর হোক বিনিয়োগের বাধা

ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

দূর হোক বিনিয়োগের বাধা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি ঢাকায় বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি। উৎসাহব্যঞ্জক এ ভাষণে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, বিশ্বকে বদলে দেওয়ার মতো অভিনব সব ধারণা রয়েছে বাংলাদেশের। এসব ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। কীভাবে মানুষ ব্যবসার মাধ্যমে সুখী হয়, এর বর্ণনা করে তিনি বলেন, টাকা উপার্জন করে মানুষ নিঃসন্দেহে আনন্দ পায়। কিন্তু অন্যকে সুখী করার মধ্যে নিহিত আছে অতিরিক্ত আনন্দ।
বস্তুত বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশ বিদেশী বিনিয়োগে পিছিয়ে রয়েছে। জিডিপির অনুপাতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে না। এদেশে ব্যবসার পরিবেশ তথা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনো অনেক বাধা রয়েছে। এগুলো হলো- অর্থায়নের সীমিত সুযোগ, দুর্নীতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য, উচ্চ করহার ইত্যাদি। এছাড়াও আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, নীতির ঘনঘন পরিবর্তন, সুশাসনের অভাব, আইনের জটিলতা, প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতা, সমন্বয়ের অভাব ইত্যাদি কারণেও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হয়ে থাকে। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা গেলে এদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কারণ, এখানে রয়েছে জনসংখ্যাগত সুবিধা। রয়েছে সাড়ে ১৭ কোটির বেশি মানুষ, যাদের বড় অংশ তরুণ ও কর্মক্ষম। বড় বাজার এবং সস্তা শ্রমশক্তি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রস্থলে হওয়ায় এদেশের সঙ্গে ভারত, চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে রয়েছে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের অর্থনীতি দ্রুত বর্ধনশীল। সরকার বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ট্যাক্স হলিডে, রপ্তানি প্রণোদনা, শুল্কমুক্ত যন্ত্রাংশ আমদানির সুবিধা ইত্যাদি প্রদান করে থাকে। দেশে শতাধিক ইপিজেড ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর অর্থনৈতিক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার বিনিয়োগ আকর্ষণে কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা মূলত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এসব অপার সম্ভাবনারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, এখানে বিনিয়োগ করলে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো এ অঞ্চলের বিশাল সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে।
দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন মন্দাভাব বিরাজ করায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়নি। গতি পাচ্ছে না দারিদ্র্য বিমোচনের কার্যক্রম। চাঁদাবাজি, মস্তানিসহ সব ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগে প্রায় স্থবিরতা নেমে আসে। বিগত সরকার দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ; রেল, সড়ক ও নৌপথের যথাযথ উন্নয়ন এবং সমুদ্রবন্দরগুলোয় যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা বন্ধসহ দুর্নীতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারেনি। যার ফলে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তারা এদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসেনি।
সম্প্রতি বিশাল আয়োজনের মধ্য দিয়ে ৪ দিনব্যাপী দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সম্মেলন শেষ হয়েছে। এ দেশের ইতিহাসে বিনিয়োগকারীদের এত বড় সম্মেলন এর আগে আর কখনো হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তির কারণেই সম্ভব হয়েছে। এ সম্মেলনে আগামীর বাংলাদেশের একটি স্বপ্নময় ছবি ফুটে উঠেছে। সম্মেলনে সাড়ে ৪শ’র মতো বিনিয়োগকারী অংশ নিয়েছেন। সবাই বাংলাদেশের বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা নিয়ে যার যার দেশে ফিরে গেছেন। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরকার ও দেশী বিনিয়োগকারীদের একটা নেটওয়ার্কও গড়ে উঠেছে। সম্মেলনে ২০৩৫ সালের বাংলাদেশের যে রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, ভবিষ্যতে পলিসির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততার বিষয় দুটিও নিশ্চিত করা হয়েছে। সম্মেলনে বিডার নবনিযুক্ত নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সম্মেলন শেষে এটা বোঝা গেছে যে, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের জন্য দীর্ঘমেয়াদে পাইপলাইন তৈরি হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের প্রস্তাব বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ রক্ষা করা হবেÑ এ বিষয়টিতেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিনিয়োগকারীরা কয়েকটি চ্যালেঞ্জের কথাও বলেছেন। এ চ্যালেঞ্জের প্রধান দুটি হলো নীতির ধারাবাহিকতা ও সম্পদের সহজলভ্যতা। এছাড়া দুর্নীতিকেও চ্যালেঞ্জ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো, এর মর্মবস্তু ধারণ করা গেলে ভবিষ্যতে একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে আমাদের বেগ পেতে হবে না। বেশি বিনিয়োগ মানে বেশি কর্মসংস্থান। দেশে বেকারত্বের পরিমাণ অনেক। আমরা যে সময়টা পার করছি, তা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের যুগ। বেকারত্বের অবসান ঘটানো মানে দেশের অগ্রযাত্রার গিয়ার ওপরে ওঠা। প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলাদেশ যে অপার সম্ভাবনা ধারণ করে, গত ৫৩ বছরে সেই সম্ভাবনার খুব কমই কাজে লাগাতে পেরেছি আমরা। রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতার অভাব ও দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়াই এ ব্যর্থতার কারণ। বর্তমান সরকারের এ দুই দুর্বলতা নেই। ফলে, একটা সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা আশা করতেই পারি।
এখন যা জরুরি, তা হলো বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য সত্যিকার অর্থেই একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা যাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়েন, ইজি ডুয়িং বিজনেসের সূচকগুলো যেন ঊর্ধ্বমুখী থাকে, এসব দিকে নজর দিতে হবে আমাদের। সবচেয়ে প্রয়োজন রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। বিনিয়োগকারীরা একটি অস্থির ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে যে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন, তা বলাই বাহুল্য। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, দেশে যাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, সে বিষয়ে তারা যেন আন্তরিক থাকেন। বর্তমান অন্তর্র্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে অভূতপূর্ব বিনিয়োগ সম্মেলনের কোনো তাৎপর্য থাকবে না।
বিনিয়োগ সম্মেলনে সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় মার্কিন কোম্পানি বাংলা ইউএস এলএলসির সিওও ড. মুমতাজুর রহমান দাউদের। তিনি জানান, ২৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে বাংলাদেশে হাসপাতাল ও সার কারখানা গড়ে তোলা হবে। ১৬০ কোটি ডলার মানে ১৯ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে ৩০০ শয্যার হাসপাতাল করা হবে। যাতে থাকবে উন্নতমানের সব সেবা। ৬০ কোটি ডলার ব্যয়ে চট্টগ্রামে একটি সারকারখানা করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পরে বিনিয়োগ করা হবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়। এসব পরিকল্পনাই হয়েছে গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ বদলে যাওয়ার পর। বিনিয়োগের জন্য এটিই সঠিক সময়। এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের কোম্পানির প্রতিনিধিরা প্রাধান্য দিচ্ছেন ওষুধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কৃষি খাতকে। ঝুঁঁকিমুক্ত বিনিয়োগ পরিবেশ পেয়ে অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশের কৃষি ও জ্বালানি খাতকে বেছে নিয়েছে নেদারল্যান্ডসের আর্থিক প্রতিষ্ঠান এফএমও। প্রতিষ্ঠানটির এশিয়া অঞ্চলের কৃষি, খাদ্য ও পানি বিনিয়োগ কর্মকর্তা প্রিসেন প্রহলাদসিং বলেন, আমরা বাংলাদেশ সম্পর্কে যা জেনেছি, তাতে এখানে বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত। একই মত নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ১২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক এনার্জির। যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এনার্জির প্রতিনিধি সৈয়দ আশরাফ ফারুকী সানি বলেন, ১ হাজার মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্যানেল স্থাপন করার জন্য একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে। এটি প্রায় বিলিয়ন ডলারের একটি ইউএস ভিত্তিক বিনিয়োগ।
আর্থিক খাতের চলমান সংস্কার কার্যক্রমই বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশমুখী করছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। তার মতে, দেশে যে সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা হচ্ছে, তাতে আকৃষ্ট হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। দেশী কোম্পানির জ্বালানি সংকট, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা দূর হলে এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেবা আরও সহজ করা গেলে যৌথ বিনিয়োগেও আগ্রহী হবে বিদেশী কোম্পানি এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সম্মেলনে অংশ নেয়া উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধির যে ধারা, তা হলো সাম্প্রতিক অর্জন। ২০১৬ সালে (২০১৫-১৬ অর্থবছরে) বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার প্রথমবারের মতো ৭ শতাংশ অতিক্রম করে। এই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর তৃতীয়বারের মতো ৭ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধির হার অর্জিত হয়েছিল। অন্যভাবে বললে, আশানুরূপ বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার যথেষ্ট টেকসই ছিল না। প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগের একটা ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতি কতটা গতিশীল এবং সে দেশে ভোক্তাশ্রেণি কীভাবে বড় হচ্ছে, তা বোঝার জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির উচ্চ হার একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি উন্নয়নশীল কোনো অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও নির্দেশ করে। পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগ বেশি এলে একটি পর্যায়ে তা আবার প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
বাংলাদেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বড় ধরনের বিদেশী বিনিয়োগ প্রাপ্তির প্রত্যাশা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা দলিল অনুসারে, ২০১৬-২০ সময়ে দেশে গড়ে প্রতিবছর অন্তত ৬০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ টানার দরকার ছিল, যা বিগত সরকার পারেনি। বিগত সরকার বিনিয়োগ সহায়ক অবকাঠামো সৃজন, জ্বালানি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন, শিল্প স্থাপনে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও সহায়তা প্রদান এবং বিধি-বিধান ও আইন-কানুন সহজ করতে না পারায় বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বেসরকারি বিনিয়োগের হার আশানুরূপ হারে বাড়েনি। সাবেক সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বিদেশী বিনিয়োগের জন্য এখনো যথেষ্ট সহায়ক বলে বিবেচিত হয়নি।
এখনো দেশে ব্যবসা করার জন্য নানা ধরনের বাড়তি ব্যয় বহন করতে হয়। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা, জটিল কর কাঠামো, বন্দরে কালক্ষেপণ ইত্যাদি সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি ঘুষ-দুর্নীতির বিচিত্র ছড়াছড়ি যে কোনো বিনিয়োগের ব্যয় বাড়িয়ে তুলতে বাধা। এসব কারণেই বিদেশী বিনিয়োগের বড় অংশই আসলে বিদ্যমান বা চলমান বিনিয়োগে থেকে অর্জিত আয় ও মুনাফার পুনর্বিনিয়োগ থেকে যায়। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুসারে,  বিদেশী বিনিয়োগের অর্ধেকই হলো পুনর্বিনিয়োগ। বাকি অর্ধেকটার এক-তৃতীয়াংশ হলো আন্তঃকোম্পানি ঋণ আর দুই-তৃতীয়াংশ হলো নতুন বা ইকুইটি বিনিয়োগ।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি দেশে পরিণত হবে, সেটি ছিল একটি বানানো গল্প। বলা হয়েছিল যে, এই পথযাত্রায় সহজ শর্তে বিদেশী ঋণ ও বিদেশী সহায়তা কমে আসতে থাকবে। বিপরীতে ক্রমবর্ধমান অর্থায়ন চাহিদা মেটাতে বাণিজ্যিক ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়তে পারে। কিন্তু ব্যয়বহুল বাণিজ্যিক ঋণ যে বাড়তি দায় সৃষ্টি করবে, তা মেটাতে গিয়ে লেনদেনের ভারসাম্যের ওপর চাপ বাড়তে পারে। এ রকম একটি অবস্থায় প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগই হতে পারে অর্থায়নের টেকসই উৎস। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এখন বিদেশী বিনিয়োগই বাইরের অর্থায়নের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে। ২০২৩ এসব দেশের ৩৯ শতাংশ বাইরের অর্থায়ন আসে বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে, আর ২৪ শতাংশ রেমিটেন্স থেকে। অন্যদিকে এলডিসিগুলোয় সমন্বিতভাবে বিদেশী অর্থায়নের প্রধান উৎস বা ৩৬ শতাংশ এখনো আনুষ্ঠানিক বিদেশী সহায়তা। রেমিটেন্স থেকে আসে ২৮ শতাংশ আর বিদেশী বিনিয়োগ থেকে ২১ শতাংশ। ক্রমাগত উচ্চহারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সত্ত্বেও এলডিসি থেকে উত্তরণের যাত্রায় গুণগত ও টেকসই বিদেশী বিনিয়োগ টানা বাংলাদেশের জন্য ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তারপরেও বিগত সরকার উন্নয়শীল দেশ বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করেছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও এর গুরুত্ব অনেক। এ দেশ বিনিয়োগের কেন্দ্রস্থল। ড. ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সেই সুযোগটিই গ্রহণ করবে নিশ্চয়ই।

লেখক : সাবেক কর কমিশনার ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান-ন্যাশনাল এফএফ ফাউন্ডেশন

×