ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

সচল সাত বিমানবন্দর

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

সচল সাত বিমানবন্দর

বৈশ্বিক শিল্পায়নের জোয়ার তৃতীয় বিশ্বের দেশেও এসে লেগেছে। শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও পর্যটনের অপার এক সম্ভবনাময় দেশ বাংলাদেশ। জনবহুল দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়া বাকি সবই সম্ভবনার। দেশের প্রকৃতি ও আবহাওয়া, সস্তাশ্রম এবং কর্মক্ষম যুবশক্তি, এ দেশের বড় সম্পদ। পর্যটন খাতসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ২৮টি বিমানবন্দরের মধ্যে সাতটির কার্যক্রম দ্রুত সচল হচ্ছে, যা সড়ক ও রেলপথের পাশাপাশি বেগবান করবে যোগাযোগ।
পরিত্যক্ত সাতটি বিমানবন্দর সচল করতে সংস্কার ব্যয় নিরূপণসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। দুই যুগ ধরে ফাইলবন্দি থাকা বগুড়া বিমানবন্দরে আসছে জুলাই থেকেই যাত্রীবাহী বিমান চলবে। পর্যটন অঞ্চল মৌলভীবাজারের শমসেরনগর, ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা ঈশ্বরদী বিমানবন্দর সচল হবে। যদিও ১৯৬২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত রূপপুরের সঙ্গে ঢাকার বিমান যোগাযোগ স্বাভাবিক ছিল। সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও স্থাপিত হয়েছে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। অর্থনীতির অমিত সম্ভাবনাময় ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট এবং রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দরও সচল করার জোর প্রচেষ্টা চলছে।
পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলো সচল করা হবে পর্যায়ক্রমে। তবে অবকাঠামো নির্মাণ, সংস্কার ও আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি যেখানে আগে শেষ হবে, সেগুলো আগে সচল হবে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে বিমানবন্দরগুলো সচল হলে বাণিজ্যিকভাবে বিমান পরিচালনা করা যেতে পারে। সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে দ্রুত শিল্পায়ন, ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। পর্যটন খাতের বিকাশের লক্ষ্যে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত, পাকিস্তান আমলে সচল, অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে পরিত্যক্ত বিমানবন্দরগুলোর কার্যক্রম পুনরায় চালু হলে বদলে যাবে পর্যটনসহ অর্থনীতির সার্বিক চেহারা। ইতিহাস অনুসন্ধানে জানা যায়, ব্রিটিশ সরকার তাদের শাসনকালে বিশ শতকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট পরিসরে কিছু বিমানবন্দর নির্মাণ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৮) এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫) কালে ব্রিটিশ সৈনিকদের সহজে যাতায়াতের লক্ষ্যে এ বিমানবন্দরগুলো নির্মাণের প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। বাংলাদেশে ৩টি আন্তর্জাতিক (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট) এবং ৫টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে। ৭টি স্বল্প পরিসরের (শুধু উড্ডয়ন এবং অবতরণ) বন্দর রয়েছে। এছাড়াও এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নির্মিত কয়েকটি এয়ারস্ট্রিপ রয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ৭ জুন ১৯৫৪ সালে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ করাচি থেকে ঢাকায় ডিসি ৩ বিমানে যাত্রীপরিবহন শুরু করে। ১১ মার্চ ১৯৫৫ সালে সরকারি বিমান সংস্থার সঙ্গে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ একীভূত হয়ে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমান নাম ধারণ করে পিআইএ। ব্রিটিশ আমলের রাজকীয় বিমান ঘাঁটির বাইরে, ১৯৬২ সালে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, যশোর, ঈশ্বরদী এবং ঠাকুরগাঁওয়ে নির্মিত হয় নতুন বিমানবন্দর। পরিত্যক্ত এসব বিমানবন্দর চালুর পাশাপাশি ফ্লাইট বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ছাড়াও অন্য বিমান পরিচালনা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে ইতোমধ্যে। আশা করা যায়, আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপগুলো মাইলফলক হিসেবে ভূমিকা রাখবে।

×