ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২

গাছপালা পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু

হেনা শিকদার

প্রকাশিত: ২১:০৩, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

গাছপালা পরিবেশের অকৃত্রিম বন্ধু

.

পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার ভূমিকা অপরিহার্য। গাছপালা শুধু প্রকৃতির শোভাই বৃদ্ধি করে না, বরং আমাদের গ্রহের বাস্তুতন্ত্রের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। অক্সিজেন সরবরাহ থেকে শুরু করে কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ, মাটি ক্ষয় রোধ, জলচক্র নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন প্রজাতির আবাসস্থল তৈরি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাস করা পর্যন্ত গাছের অবদান বহুমাত্রিক এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তৃত। ক্রমবর্ধমান পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে গাছ এবং বনভূমির গুরুত্ব উপলব্ধি করা, তাদের সুরক্ষা ও পরিচর্যা করা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশের ভারসাম্য বলতে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল, জলমন্ডল, শিলামন্ডল এবং জীবমন্ডলের মধ্যে স্থিতিশীল আন্তঃক্রিয়াকে বোঝায়। এ ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গাছপালা একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গাছপালা এই মিথস্ক্রিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যেখানে গাছপালা ও বনভূমি বেশি, সেখানে ভালো বৃষ্টিপাত হয়। এর ফলে ভূমিতে জলের পরিমাণ বাড়ে, যা কৃষিকাজ ও ফসলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও গাছপালা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, মাটির ক্ষয় রোধ করে এবং ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। 
বৃক্ষরোপণ পরিবেশের দূষণ রোধ ও বিশ্ব উষ্ণতা কমাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। নিঃস্বার্থ, প্রকৃত ও উপকারী বন্ধু হিসেবে বৃক্ষ মানবসভ্যতার ভিত্তি স্থাপন এবং মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
গাছপালা বৃষ্টিপাত ঘটানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর কারণ হলো, গাছপালা প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলীয় বাষ্প বাতাসে ছাড়ে, যা মেঘ তৈরিতে সাহায্য করে এবং স্থানীয় আবহাওয়ার ধরনকে প্রভাবিত করে। একটি কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে বৃষ্টিপাত কৃষিকাজের সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। এছাড়াও ঝড়, বৃষ্টি ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় গাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। গাছের শিকড় মাটি আঁকড়ে ধরে ভূমিধস প্রতিরোধ করে এবং বন্যার সময় জলের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে।
গাছপালা সালোকসংশ্লেষণ নামক একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এই প্রক্রিয়ায় গাছপালা সূর্যরশ্মি, জল এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে গ্লুকোজ (তাদের খাদ্য) তৈরি করে এবং অক্সিজেন উপজাত হিসেবে নির্গত করে। এই অক্সিজেন বায়ুম-লের একটি অপরিহার্য উপাদান, যা মানুষসহ প্রায় সকল জীবন্ত প্রাণীর শ্বাসকার্যের জন্য অত্যাবশ্যক। অন্যদিকে গাছপালা বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে, যা গ্রিন হাউস গ্যাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। 
গাছপালাকে প্রাকৃতিক বায়ু পরিশোধকও বলা হয়। কারণ তারা শুধু কার্বন-ডাই অক্সাইডই নয়, অন্যান্য দূষিত পদার্থও শোষণ করে বাতাসকে পরিষ্কার  ও বিশুদ্ধ করে। সালোকসংশ্লেষণ দিনের বেলায় সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে ঘটলেও গাছপালা রাতে শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। তবে একটি সুস্থ গাছের ২৪ ঘণ্টার সামগ্রিক প্রভাব হলো অক্সিজেন উৎপাদন। কিছু বিশেষ ধরনের ইনডোর প্ল্যান্ট, যেমন- তুলসী, অ্যালোভেরা, স্নেক প্ল্যান্ট, অর্কিড, বাঁশ এবং স্পাইডার প্ল্যান্ট রাতেও অক্সিজেন নির্গত করতে পারে। এর কারণ হলো তাদের বিশেষ বিপাক প্রক্রিয়া (কিছু ক্ষেত্রে ঈঅগ সালোকসংশ্লেষণ)। এই বৈশিষ্ট্যটি আবদ্ধ স্থানে বায়ু পরিশুদ্ধির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ডেসিডুয়াস প্রজাতির গাছপালা তাদের জীবভর কর্তৃক প্রায় ৪৫ থেকে ৫৫ শতাংশ কার্বন শোষণ করে। এছাড়াও রাস্তার পাশে বড় আকৃতির পুরনো বয়স্ক গাছ কার্বন শোষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বায়ুমন্ডল থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড অপসারণ এবং কাঠ ও মাটিতে কার্বন সংরক্ষণে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বনায়ন এবং পুনর্বনায়ন এই কার্বন অপসারণ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তোলে। উদ্ভিদ কোষের ক্লোরোপ্লাস্ট নামক অঙ্গাণুটি কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করার প্রধান স্থান। গাছের শিকড় মাটিকে আঁকড়ে ধরে, যা বৃষ্টি বা বাতাসের কারণে মাটি ক্ষয় রোধে অত্যন্ত কার্যকর। গাছের আচ্ছাদন বৃষ্টির সরাসরি আঘাত থেকে মাটিকে রক্ষা করে এবং ভূমি ক্ষয়ের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। পতিত পাতা ও অন্যান্য জৈব পদার্থ মাটিতে মিশে মাটির গঠন উন্নত করে, জল ধারণক্ষমতা বাড়ায় এবং পুষ্টি উপাদান যোগ করে। এছাড়াও গাছপালা উপকারী মাটির অণুজীবের কার্যকলাপকে উৎসাহিত করে, যা মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, বর্তমানে ভারতে ভূমিক্ষয়ের সবচেয়ে বড় অপ্রাকৃতিক কারণ- বৃক্ষছেদন। বন্যা বা বাতাস দুই থেকেই মাটিকে রক্ষা করে গাছের মূল। অন্যদিকে গাছপালা অপসারণ ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষয়ের হার বাড়িয়ে তোলে। কৃষকদের জন্য মাটির ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মূলত যে কোনো ফসল উৎপাদন ব্যবস্থার কেন্দ্রেই থাকে মাটি। স্বাস্থ্যকর মাটি না হলে ভালো ফলন আশা করা যায় না। অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি, যেখানে কৃষি ও বনায়নকে একত্রিত করা হয়, মাটির ক্ষয় কমাতে এবং ফলন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। শস্যের ঘূর্ণনও মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং ক্ষয় কমায়। উদ্ভিদ শিকড়ের সাহায্যে মাটি আটকে রেখে মাটি ক্ষয় রোধ করে। তাই বৃক্ষরোপণ করে এবং জমিতে ঘাস লাগিয়ে মাটি ক্ষয়রোধ করা যায়। উল্লেখ্য, মাটির স্বাস্থ্য শুধু ক্ষয়রোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সুস্থ মাটি একটি অত্যাবশ্যক জীবন্ত বাস্তুতন্ত্র হিসেবে কাজ করে, যা জল নিয়ন্ত্রণ করে, উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের জন্য সমর্থন যোগায়, দূষণকারী পদার্থ ফিল্টার করে, পুষ্টি চক্র সম্পন্ন করে এবং শারীরিক স্থিতিশীলতা প্রদান করে। নিবিড় কৃষি, বন উজাড়, ক্ষয়, দূষণ এবং অনুপযুক্ত সার ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাপী মাটির স্বাস্থ্য হুমকির মুখে। তবে পুনর্জন্মমূলক চাষ বা সমন্বিত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনার মতো কৃষি চর্চা মাটিকে রক্ষা ও পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করতে পারে।
গাছপালা প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জলীয় বাষ্প বাতাসে নির্গত করে, যা মেঘ গঠনে এবং বৃষ্টিপাতে সাহায্য করে। বনভূমি স্থানীয় এবং আঞ্চলিক বৃষ্টিপাতের ধরনকে প্রভাবিত করে। গাছের শিকড় বৃষ্টির জলকে মাটিতে প্রবেশ করতে সাহায্য করে, ভূগর্ভস্থ জলের স্তর পুনরুদ্ধার করে এবং ভূপৃষ্ঠের জলপ্রবাহ কমিয়ে বন্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। গাছপালা প্রাকৃতিক স্পঞ্জের মতো কাজ করে, যা জল ধরে রাখে এবং ধীরে ধীরে তা পরিবেশে ছাড়ে। বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্পের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আসে বাষ্পীভবন ও গাছের প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। গাছপালা জল সঞ্চয়, পরিষ্কার এবং সংরক্ষণে সহায়তা করে। বিশেষ পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর মাধ্যমে জল সংরক্ষণ করা সম্ভব। বৃষ্টির জল এবং ব্যবহৃত জল ধরে রাখার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জলস্তর ‘রিচার্জ’ করা যায়। গাছপালা শুধু জলচক্রে সাহায্যই করে না, জল সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা অতিরিক্ত পানি প্রাকৃতিক উপায়ে জমিয়ে রাখতে পারে এবং নদীসমূহের নিকটবর্তী ও ঘন ঘন প্লাবিত অঞ্চলে মাটি ধুয়ে যাওয়া বন্ধ করতে পারে। গাছের শিকড় মাটি থেকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে, ভূপৃষ্ঠের প্রবাহ কমায় এবং ভারি বৃষ্টির সময় পানির গতি কমিয়ে দেয়, যা বন্যার সম্ভাবনা হ্রাস করে। 
বনভূমি এবং পৃথক অবস্থানে থাকা গাছও বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য আশ্রয়, খাদ্য এবং প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি করে। বিভিন্ন ধরনের বন বিভিন্ন ধরনের জীব সম্প্রদায়কে সমর্থন করে, যা একটি অঞ্চলের সামগ্রিক জীববৈচিত্র্যে অবদান রাখে। গাছের শাখা, কান্ড এবং শিকড় বিভিন্ন ধরনের মাইক্রোহ্যাবিটাট তৈরি করে, যা বিভিন্ন জীবের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। বনভূমি ধ্বংসের ফলে আবাসস্থল হ্রাস পায়, যা প্রজাতি বিলুপ্তির একটি প্রধান কারণ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভেন্না গাছের মতো গাছপালা স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পরিবেশে বায়ু পরিশোধন করে ও মাটির ক্ষরণ প্রতিরোধে সহায়ক। গ্রামের পরিবেশে ছায়া প্রদান করে এবং প্রাণীজীবনের জন্য আশ্রয়স্থল তৈরি করে। উদ্ভিদ তার খাদ্য তৈরি, বৃদ্ধি, পরাগায়ন ও বীজের বিস্তারণের জন্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। উদ্ভিদ অনেক প্রাণীর আবাসস্থল এবং অনেক প্রাণী উদ্ভিদের পরাগায়নে সাহায্য করে, যার ফলে নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়। বৃক্ষ ছাড়া কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব অকল্পনীয়। জীববৈচিত্র্য হলো প্রকৃতপক্ষে বিপুলসংখ্যক জিনের ভান্ডার এবং বিভিন্ন জীবের এই জিন ভান্ডার মানুষের কাছে এক অমূল্য সম্পদ।
জীববৈচিত্র্য পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অপরিহার্য। প্রতিটি প্রজাতি বাস্তুতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের অন্তর্নিহিত ভূমিকা রয়েছে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে অনেক প্রজাতি তাদের আবাসস্থল হারায় এবং খাদ্য শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটে, যা সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বনভূমি কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বন ধ্বংসের ফলে এই কার্বন বায়ুম-লে নির্গত হয়, যা বিশ্ব উষ্ণায়নকে আরও বাড়িয়ে তোলে। গাছের আচ্ছাদন অপসারণের ফলে মাটি ক্ষয় বৃদ্ধি পায়, ভূমি অনুর্বর হয়ে পড়ে এবং মরুভূমি সৃষ্টি হতে পারে। বনভূমি ধ্বংসের কারণে জলচক্র ব্যাহত হয়, যার ফলে বৃষ্টিপাত কমে যেতে পারে এবং খরার ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও ভূমিধস এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। বন উজাড়ের ফলে জলবায়ু ভারসাম্যহীনতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন ঘটে। বন আমাদের গ্রহের ফুসফুস। বন উজাড়ের ফলে আর্দ্রতার মাত্রা হ্রাস পায়, যার ফলে বাকি গাছপালা শুকিয়ে যায় এবং দাবানলের ঝুঁকি বাড়ে। বনভূমি ধ্বংসের কারণে জীবের আবাসস্থল বিনষ্ট হয়, ফলে ধীরে ধীরে জীবের বিলুপ্তি ঘটে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে প্রকৃতিতে ভূমিক্ষয় ও ভূমিধস দেখা দেয় এবং বায়ুম-লে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়, যা জীবজগতের জন্য হুমকিস্বরূপ। বনভূমি ধ্বংস একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। বন ক্ষতির কারণে বন্যা, মাটি ক্ষয়, মরুভূমি এবং উচ্চ তাপমাত্রা আরও দ্রুত এবং তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখা দেয়। এ ঘটনাগুলো আরও বনভূমি ধ্বংসকে উৎসাহিত করে, যা পরিবেশের জন্য একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করে।
পরিবেশের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার এবং বনভূমি ধ্বংসের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস করার জন্য বনায়ন (যেখানে আগে বন ছিল না সেখানে বন তৈরি করা) এবং পুনর্বনায়ন (পূর্বে বন ছিল এমন এলাকায় পুনরায় বন তৈরি করা) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে বায়ুম-ল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করা সম্ভব, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক। নতুন গাছের আচ্ছাদন মাটি ক্ষয় রোধ করতে, মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং জলের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। বনায়ন এবং পুনর্বনায়ন নতুন আবাসস্থল তৈরি করে জীববৈচিত্র্যকে সমর্থন করে। এছাড়াও এটি বায়ু ও জলের গুণমান উন্নত করে এবং টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনার সুযোগ তৈরি করে। সামাজিক বনায়ন, যেখানে জনগণ বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি শস্য উৎপাদন ও গবাদিপশু পালন করে, পরিবেশ সুরক্ষার একটি কার্যকর উপায়।গাছ বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবকে কমাতে সাহায্য করে।

গাছ কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং আমাদের বাঁচিয়ে রাখে। গাছ ছায়া প্রদান করে এবং বায়ুম-লকে ‘ইভাপোট্রান্সপিরেশন’ নামক একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শীতল করে। যদিও উচ্চমাত্রার বায়ুম-লীয় কার্বন-ডাই অক্সাইড প্রাথমিকভাবে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের হার বাড়াতে পারে, এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব জটিল এবং কিছু ফসলের পুষ্টিগুণ এবং কীটপতঙ্গ প্রতিরোধের ক্ষমতা কমাতে পারে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সামগ্রিক প্রভাব প্রশমিত করার জন্য বনভূমি সংরক্ষণ এবং বৃক্ষরোপণ অপরিহার্য।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের ভূমিকা অপরিসীম ও বহুমাত্রিক। অক্সিজেন সরবরাহ, কার্বন-ডাই অক্সাইড শোষণ, মাটি ক্ষয় রোধ, জলচক্র নিয়ন্ত্রণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হ্রাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে গাছের অবদান অনস্বীকার্য। বনভূমি ধ্বংসের ফলে পরিবেশের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তা পুনরুদ্ধার করতে বনায়ন এবং পুনর্বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের সবার উচিত পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানো ও বনভূমি সংরক্ষণে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা, যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুস্থ ও বাসযোগ্য পৃথিবী পায়।

প্যানেল

×