ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১২ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি

ফিলিস্তিনে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী গণজাগরণ ঘটেছে। বাংলাদেশের মানবতাবাদী বিপুলসংখ্যক মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছেন। প্রায় সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য সংগ্রামের প্রতি সংহতি এবং এক বছরের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরাইলের ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে, যা অভূতপূর্ব। গাজায় যে হত্যাযজ্ঞ এবং জাতিগত নির্মূল ও বাস্তুচ্যুতির অভিযান চলছে, তা অতীতের সব মানবতাবিরোধী নারকীয় ঘটনার বীভৎসতার সীমা অতিক্রম করেছে। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে একটি ইভেন্ট  তৈরি করেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৭৩ হাজার মানুষ তাতে আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং ৬ হাজার ৩০০ জন অংশ নেবেন বলে জানিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে গতকালের এ সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ যোগ দেন। ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানে গোটা উদ্যান মুখরিত হয়ে ওঠে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপুল সংখ্যক মানুষের ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জ্ঞাপন এক ঐতিহাসিক ঘটনা।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিও দীর্ঘ র‌্যালি বের করেছে বৃহস্পতিবার। ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে র‌্যালি করে ঢাকা মহানগর বিএনপি। র‌্যালিপূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ফিলিস্তিনে যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্বে মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র। উল্লেখ্য, এর আগে সোমবার ঢাকায় আরেকটি বড়  প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘বয়কট ট্রাম্প, সেভ ফিলিস্তিন’,  ‘বয়কট ইউএসএ’ লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড  হাতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা গণহত্যার বিরুদ্ধে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া একটি অভিনব প্রতিবাদ। এর তাৎপর্য গভীর ও সুদূরপ্রসারী। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী আবারও জানিয়ে দিল কোনো দেশেই কোনো গণহত্যা চলবে না এবং হত্যাযজ্ঞ চালানো দেশটিকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।  
ঘৃণা ও ক্রোধের বর্শবর্তী হয়ে গাজার নিরস্ত্র, নিরপরাধ মানুষকে পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করার জন্য গুলি-বোমা দিয়ে এবং সুকৌশলে শিশু-নারী-বয়োবৃদ্ধসহ পুরুষদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা ভয়ঙ্করতম অপরাধ। এটাই জেনোসাইড বা গণহত্যা। এই গণহত্যাকে বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় দৃষ্টিকোনের বাইরে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে দেখা হচ্ছে। তাই বিশ্বের ইহুদীসহ খ্রীস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অপরাপর ধর্মের মানুষ গাজার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাঁদছে। প্রতিবাদে জ¦লে উঠছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে প্রধানত মুসলিমরাই প্রতিবাদে যোগ দিচ্ছে। গাজায় গণহত্যাকে কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবাধিকার বিরোধী অপতৎপরতা হিসেবে দেখাটাই সমীচীন।  বাংলাদেশের জনগণ গত সপ্তাহ ধরে ধারাবাহিকভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে যেসব কর্মসূচি পালন করছে, তা বিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছে।

×