ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়ানো হোক

নাদিরা হক অর্পা

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ১২ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বাড়ানো হোক

বিশ্ববিদ্যালয় হলো উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষা প্রদানের উদ্দেশে বর্তমানে ৫৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। স্বশাসিত সংস্থা হিসাবে পরিচালিত এসব বিশ্ববিদ্যালয় সরকার দ্বারা অর্থায়ন করা হয়। এছাড়াও রয়েছে ১০৯ টির বেশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
একটু পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যায় আমাদের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার গোড়াতেই রয়েছে গলদ। অন্যান্য দেশের উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্য যেখানে জ্ঞান অর্জন এবং গবেষণা করা, সেখানে আমাদের দেশে এর মূল উদ্দেশ্য চাকরি পাওয়া। উন্নত দেশগুলোয় কলেজ পেরিয়েই একজন ছাত্র চাকরিতে প্রবেশ করে। এরপর যদি কারো অধিক জ্ঞান অর্জন এবং গবেষণার উদ্দেশ্য থাকে তবেই সে বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতিটি চাকরির জন্য গ্র্যাজুয়েট চাওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা বাধ্য হয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে। দেখা যায়, চাকরি পরীক্ষার সিলেবাসের সঙ্গে অনার্সের পড়ার কোনো মিল নেই। এজন্য ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ওপর গুরুত্ব না দিয়ে চাকরির পড়ার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। আবার এমন অনেক সাবজেক্ট রয়েছে যার আমাদের দেশে বিষয়ভিত্তিক কোনো চাকরি নেই।
আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো সনাতন প্রক্রিয়ায় জ্ঞান অর্জন করা হয়। পাঠ্যপ্রক্রিয়া ও পাঠ্যপুস্তকে নেই কোনো সময়োপযোগী পরিবর্তন। স্কুল, কলেজে সৃজনশীল পদ্ধতি থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে মুখস্থনির্ভর পড়াশোনা। বইপত্র না পড়ে চলে শিট পড়ার প্রতিযোগিতা। পাস করাই যেন শিক্ষার্থীদের মূল উদ্দেশ্য। এক সময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশী শিক্ষার্থীদের পদচারণা থাকলেও এটি এখন তুলনামূলক অনেক কমে এসেছে। অপরদিকে গ্র্যাজুয়েটরা পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে।
দেশের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষায় সফলতা দেখালেও বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় চলছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতো। অপরদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধীরে ধীরে রাজনীতির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে স্বেচ্ছাচারিতা দেখা যায়। যার ফলে যোগ্য ব্যক্তি শিক্ষক হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম প্রজন্মের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক সময় শিক্ষার মান ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক উত্থান-পতনের কারণে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়কেই সেশনজটের দীর্ঘ সারিতে আটকে থাকতে হয়েছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্পসংখ্যক ছাড়া বাকিগুলোর শিক্ষার মানের আশা করা দুরূহ ব্যাপার। বেশিরভাগই যুক্ত হয়েছে সনদ বাণিজ্যে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল শিক্ষার্থীদের দিকে। খাওয়ার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ডাইনিং ও ক্যান্টিনে নেই শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা। জীবন বাঁচানোর তাগিদে তাদের খেতে হয় নিম্নমানের খাবার। যাদের মেধা দিয়ে সরকার ভবিষ্যতে দেশের ভালো কিছু আশা করে, তারা পুষ্টিকর খাবার না পেলে মেধা বিকশিত হবে কেমন করে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নেই পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা। তাদের পড়াশোনা ও গবেষণা করার জন্য নেই মানসম্পন্ন পরিবেশ। মেধাবী শিক্ষার্থীদের গণরুমে জীবনযাপন করতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। আধুনিক পাঠ্যক্রম তৈরি ও নিয়মিত আপডেট করা গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া ও গবেষণা অনুদান বৃদ্ধি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা বিকাশে উৎসাহ দেওয়া,গবেষণার জন্য ফান্ডিং ও ল্যাব সুবিধা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়া, গবেষণা প্রকাশনা ও প্যাটেন্ট বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া ইত্যাদি।

×