ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২

খামেনির মতো প্রফেসর ইউনূসও হবেন সুপ্রিম লিডার!

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১২ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১২:০৩, ১২ এপ্রিল ২০২৫

খামেনির মতো প্রফেসর ইউনূসও হবেন সুপ্রিম লিডার!

ছবি : সংগৃহীত

সূর্য ঠিক মাথার ওপর। ঢাকার একটি পুরনো মসজিদ থেকে জুম্মার নামাজ শেষে মানুষ বেরিয়ে আসছে। দূরে শিরীষ গাছের ডালে পাখিরা কলতান তুলছে। বাতাসে শীতল আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে শহরের এক কোণে। একটি জরাজীর্ণ বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আরিফ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তার হাতে একটি পুরনো বই—'ইরানের বিপ্লব ও খামেনী'। পাতার পর পাতা উল্টে সে ভাবছে, একজন মানুষ কীভাবে একটি জাতিকে নিজের আদর্শে গড়ে তুলতে পারে।  

 

 

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী ছিলেন ইরানের সেই নেতা, যিনি বিশ্বশক্তির মুখে চপেটাঘাত করে দেশটিকে নৈতিকতার পথে এগিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আরিফের চোখে এখন ভাসছে আরেকজনের ছবি—প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস। নতুন বাংলাদেশে তিনিই কি হতে পারেন সেই আলোর দিশারি?  


২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনে ক্ষমতার গদি থেকে বিদায় নিয়েছিল একটি সরকার। রাস্তায় রক্ত ঝরেছে, চোখে পানি গড়িয়েছে, কিন্তু জনগণের কণ্ঠ শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে। ৫ই আগস্টকে অনেকেই 'দ্বিতীয় স্বাধীনতা' বলে আখ্যায়িত করেন।  

কিন্তু এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের পরও রাজনৈতিক নেতারা আবারো তাদের পুরনো খেলায় মেতে উঠেছেন—ক্ষমতার লোভ, দলীয় কোন্দল, স্বার্থের লড়াই। জনগণ আর সেই পুরনো গল্প শুনতে চায় না। তারা একজন নতুন নেতার খোঁজ করছে, যিনি তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনবেন। এই শূন্যতার মধ্যেই একটি নাম বারবার উঠে আসছে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।  


ইউনূস শুধু একজন অর্থনীতিবিদ নন; তিনি একটি আদর্শের প্রতীক। তার গ্রামীণ ব্যাংক মডেল বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত। বাংলাদেশের ৯০ লাখ নারী তার মাইক্রোফাইন্যান্সের মাধ্যমে আর্থিক স্বাধীনতা পেয়েছেন। তার সামাজিক ব্যবসা ধারণা ১৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি রাজনীতির চেয়েও বড় কারণ এটি সরাসরি মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে।  

২০২৫ সালের ঈদে, তার নেতৃত্বে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দেশের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে সাশ্রয়ী ঈদ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে তার কঠোর অবস্থানের কারণে। তিনি বিনিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে আশিক চৌধুরীর মতো মেধাবীদের দায়িত্ব দিয়েছেন, যার ফলে অর্থনীতিতে নতুন গতি এসেছে।  

 

 


৫ই আগস্টের পর বাংলাদেশে ভারতবিরোধী চেতনা জেগে উঠেছে। বাণিজ্য, সীমান্ত, পানি বণ্টনে ভারতের আধিপত্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে জনগণ ক্ষুব্ধ। তারা এমন একজন নেতা চায়, যিনি ভারতের শোষণের বিরুদ্ধে স্পষ্ট কণ্ঠে কথা বলবেন।  

প্রফেসর ইউনূস এই ক্ষেত্রেও একটি শক্তিশালী সম্ভাবনা। তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বারবার। তার কণ্ঠে দ্বিধা নেই, ভয় নেই। তিনি যখন বিশ্বনেতাদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন বাংলাদেশের স্বার্থই সামনে থাকে।  

  
ইরানে আয়াতুল্লাহ খামেনী সরকারের দৈনন্দিন কাজে হস্তক্ষেপ করেন না, তবু তার নৈতিক প্রভাবে দেশটি আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। তিনি আলোর দিশা দেখান, কিন্তু পথে হাঁটার দায়িত্ব অন্যের।  

বাংলাদেশের জন্য কি এমন একজন দরকার? আরিফ ভাবে, ইউনুসই হতে পারেন সেই 'নৈতিক কম্পাস'-যিনি রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে জাতিকে পথ দেখাবেন।  


২০২৪ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬৮% তরুণ কোনো রাজনৈতিক দলের উপর ভরসা করতে পারছে না। ৫ই আগস্টের পর তাদের মনে নতুন স্বপ্ন জেগেছে। তারা এমন একজন চায়, যিনি তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবেন।  

ইউনূস তরুণদের কাছে আদর্শ। তিনি বিশ্বমঞ্চে সম্মানিত, তবু মাটির মানুষ। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি আত্মনির্ভরশীল, গর্বিত জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।  

সূত্র: https://youtu.be/o2ONZpnJN48?si=oB7BpnEwfSM82fqx

 

আঁখি

×