ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি: বিএনপি’র স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপরেখা

মাহবুব নাহিদ

প্রকাশিত: ২৩:২৯, ১১ এপ্রিল ২০২৫

১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি: বিএনপি’র স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপরেখা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে বিএনপি একটি সাহসী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। তাদের লক্ষ্য ২০৩৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করা। এটি শুধু একটি পরিসংখ্যানগত লক্ষ্য নয়— এটি একটি কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার রোডম্যাপ।

গণজাগরণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আজ এক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এই নতুন সময়ের প্রেক্ষাপটে বিএনপির লক্ষ্য একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা—যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নিরাপদে, আস্থার সঙ্গে ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে পারবেন। অতীতের ধারাবাহিকতায় বিএনপি ভবিষ্যতেও একটি মুক্ত বাজারভিত্তিক, নিয়মনিষ্ঠ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে।

বিনিয়োগভিত্তিক অর্থনৈতিক রূপান্তরের লক্ষ্যে বিএনপি এক বহুমাত্রিক ভিশন ঘোষণা করেছে, যেখানে ফার্মাসিউটিক্যাল ও API উৎপাদনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে স্বনির্ভরতা অর্জনের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও ব্যাটারি উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়িয়ে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। সৃজনশীল শিল্প—চলচ্চিত্র, সংগীত, ডিজাইন—নতুন অর্থনৈতিক খাত হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যাতে কর্মসংস্থান বাড়ে এবং সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ ও শিল্পভিত্তিক উৎপাদনে বিদেশি অংশীদারিত্বে নতুন খাত গড়ে তোলাও এই রূপরেখার অংশ।

যুবসমাজকে কেন্দ্র করে, বিশেষত Gen Z-এর জন্য, আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কারিগরি প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করা হবে, যাতে তারা আধুনিক শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারে। স্টার্ট-আপ সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করে প্রথম বছরেই অন্তত ১০ লক্ষ নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে উৎসাহ দেওয়া হবে। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ডেটা অবকাঠামো, সফটওয়্যার ও ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একটি শক্তিশালী ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলা হবে।

বিএনপি জিডিপিতে FDI-এর অংশ ০.৪৫% থেকে ২.৫%-এ উন্নীত করার উচ্চাভিলাষী কিন্তু বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই লক্ষ্যে কর ও আন্তর্জাতিক লেনদেন ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা ও সহজতা আনা হবে, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিমুক্তভাবে কাজ করতে পারেন। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে "প্লাগ অ্যান্ড প্লে" পদ্ধতি চালু করে দ্রুত উৎপাদন শুরু করা যাবে।

লাভ প্রেরণ, ভ্যাট ও কাস্টমস রিফান্ড ডিজিটালাইজেশন, দ্বৈত কর নিরসন চুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বৈদেশিক লেনদেন সহজ করা হবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি শক্তিশালী করতে রোডশো, দূতাবাস-নেতৃত্বাধীন প্রচার এবং ডেটাভিত্তিক ব্র্যান্ডিং কৌশল বাস্তবায়ন করা হবে।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা ও সুবিধা নিশ্চিত করতে নতুন বিনিয়োগকারী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, ১০ দিনের মধ্যে ভিসা ও পারমিট প্রদান, ৫ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ইনভেস্টর ভিসা চালু করা হবে। সালিশ ও বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গঠিত হবে “বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত”।

অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, আধুনিক বন্দর ও লজিস্টিক হাব, উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বড় আকারের বিনিয়োগ করা হবে। প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতে বিডার অধীনে কার্যকর ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে, যার মাধ্যমে কোম্পানি নিবন্ধন ৪৮ ঘণ্টায় ও ওয়ার্ক পারমিট ৭ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এতে ঘুষ ও অনিয়মের সুযোগ কমে যাবে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA)-কে সকল মন্ত্রণালয় ও সংস্থার মধ্যে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী হিসেবে ক্ষমতায়িত করা হবে এবং প্রতিটি প্রকল্পে একজন "FDI ক্যাপ্টেন” নিয়োগ দেওয়া হবে, যিনি বিনিয়োগের পুরো প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবেন। দক্ষ জনবল গঠনে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌথভাবে ট্রেনিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা, বেতন ভর্তুকি ও স্থানীয় নিয়োগে প্রণোদনা চালু করা হবে।

বিএনপি বিশ্বাস করে—বাংলাদেশকে একটি প্রতিযোগিতামূলক, নিরাপদ ও ভবিষ্যত-নির্ভর বিনিয়োগ গন্তব্যে রূপান্তরিত করা সম্ভব। এই লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ইনভেস্টমেন্ট সামিটকে বিএনপি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানায় এবং দেশের মানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

প্রতিশ্রুত ১ কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার অন্যতম চালিকা শক্তি। এটি বাস্তবায়নে কৃষি, শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি ও সেবা খাতে প্রণোদনা দিলে অল্প সময়ে বিপুল কর্মসংস্থান সম্ভব, যা তরুণদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

বিনিয়োগকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করতে ২৪x৭ অনলাইন হেল্পডেস্ক, তথ্য পোর্টাল ও দ্রুত সাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হবে। লভ্যাংশ নিজ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ ও স্বয়ংক্রিয় করা হবে। নির্দিষ্ট শিল্পখাতে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট গড়ে তুলে স্থানীয় দক্ষ জনবল তৈরি হবে, যা বিদেশি কোম্পানিকে সহজে শ্রমিক সরবরাহ করবে এবং বেকারত্বও হ্রাস পাবে।

নিরাপত্তা নিশ্চিতে পৃথক বিনিয়োগ নিরাপত্তা আইন, অর্থনৈতিক অঞ্চলে উন্নত রোড, বিদ্যুৎ, ওয়াই-ফাই, নিরাপত্তা ক্যাম্প গড়ে তোলা হবে। একইসাথে, তথ্যপ্রযুক্তি, ভাষা, ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতীয় স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম চালু হবে। বিদেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সরকার-পর্যায়ে নতুন চুক্তি, প্রশিক্ষণ ও প্লেসমেন্ট সাপোর্ট নিশ্চিত করা হবে।

কর আহরণে বলপ্রয়োগ নয়, বরং করদাতার সম্মান ও আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে করজাল সম্প্রসারণ, অনলাইন ট্যাক্স ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও কর নীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই হবে বিএনপির নীতি। এতে করে রাজস্ব বাড়বে, ব্যবসার পরিবেশও হবে আরও অনুকূল।

বিনিয়োগবান্ধব ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে তারেক রহমান অতীতের সফল নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই ছিলেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উদারীকরণের পথিকৃৎ, যাঁর শাসনামলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) আকৃষ্ট করতে প্রথম আইন প্রণয়ন করা হয়। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশের গার্মেন্টস খাতের ভিত্তি স্থাপন হয়, যা পরবর্তীতে বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশের পরিচিতি তৈরি করে। একই ধারাবাহিকতায়, বেগম খালেদা জিয়ার সরকার অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার এবং বেসরকারি উদ্যোগকে উৎসাহ দিয়ে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলে। বৈদেশিক শ্রমবাজারেও বাংলাদেশের অবস্থান দৃঢ় হয় এই সময়েই। এই ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারকে ধারণ করেই তারেক রহমান আগামীতে একটি উন্নয়নশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেখানে বিনিয়োগ হবে উন্নয়নের চালিকাশক্তি এবং জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের প্রধান মাধ্যম।

বিএনপির শাসনামলে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার সময়কালে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও অগ্রগতি সাধিত হয়। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে (১৯৭৮-১৯৮১) যুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ওপর জোর দেওয়া হয়। এই সময়ে সরকার বাজার অর্থনীতি প্রবর্তনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়, যার মধ্যে বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করা এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করা অন্যতম। জিয়াউর রহমানের সরকার "১৯-দফা কর্মসূচি" প্রণয়ন করে, যা স্বনির্ভরতা, গ্রামীণ উন্নয়ন, বিকেন্দ্রীকরণ, এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দেয়। এই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যানগুলো হলো:

• জিডিপি ১৩.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২০.২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা প্রায় ৫২% বৃদ্ধি পায়।
• জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার স্থিতিশীল থাকে, যা ছিল ৭.০৭% থেকে ৭.২৩% এর মধ্যে।
• মাথাপিছু জিডিপি ১৫৮.৩২ মার্কিন ডলার থেকে ২২২.২৪ মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পায়, যা ৪১.৬% বৃদ্ধি।
• শিল্পখাতে মূল্য সংযোজন ১.৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪.০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা ১১১% বৃদ্ধি।

খালেদা জিয়ার প্রথম মেয়াদে (১৯৯১-১৯৯৬) সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই সময়ে তৈরি পোশাক শিল্পখাতের দ্রুত প্রসার ঘটে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে অর্থনৈতিক উন্নতির প্রধান পরিসংখ্যানগুলো হলো:

• জিডিপি ৩০.৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ৪৬.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা প্রায় ৪৯.৯% বৃদ্ধি পায়।
• মাথাপিছু জিডিপি ২৭১.০৬ মার্কিন ডলার থেকে ৩৭১.৯২ মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পায়, যা ৩৬.৬% বৃদ্ধি।
• শিল্পখাতে মূল্য সংযোজন ৬.৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১০.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়, যা ৫৪% বৃদ্ধি পায়।
• বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) ১.৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১৩.৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বৃদ্ধি পায়, যা ৮৭৩% বৃদ্ধি।

খালেদা জিয়ার দ্বিতীয় মেয়াদে (২০০১-২০০৬) অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকে, তবে মূল্যস্ফীতিও বৃদ্ধি পায়। এই সময়ে শিল্পখাত আরও সম্প্রসারিত হয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।

এই পরিসংখ্যানগুলো বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সাধিত পরিবর্তন এবং প্রবৃদ্ধির একটি চিত্র তুলে ধরে।

এই ধারাবাহিকতাকে ধরে রেখে বিএনপি নতুন প্রজন্মকে অর্থনৈতিকভাবে নিরাপদ ও কর্মমুখী বাংলাদেশ উপহার দিতে চায়।

"ঐক্যই ভবিষ্যৎ"—এই বার্তাটি কেবল রাজনৈতিক স্লোগান নয়, এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের দর্শন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক সহনশীলতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা—এই তিনটি স্তম্ভেই উন্নয়ন টেকসই হয়। বিএনপি সেই ঐক্যের ভিতর থেকেই উন্নয়নের গতি বাড়াতে চায়।

বিএনপির এই পরিকল্পনা কেবল রাজনৈতিক প্রচার নয়—এটি একটি টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যতমুখী অর্থনৈতিক দর্শনের বহিঃপ্রকাশ। যদি যথাযথ রূপরেখা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, তাহলে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি আর স্বপ্ন থাকবে না— বাস্তবতা হয়ে উঠবে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

এম.কে.

×