ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাব

ড. মো. মোরশেদুল আলম

প্রকাশিত: ২০:২৪, ১১ এপ্রিল ২০২৫

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাব

ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর যে সব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, তার মধ্যে একটি হলোÑ যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি। আরেকটি হলোÑ জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইনসংক্রান্ত। ট্রাম্প এগুলো সই করার পরে প্রদত্ত ভাষণে বলেন, এ সব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া আশ্রয় ও শরণার্থী প্রোগ্রাম স্থগিতকরণ, সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং মাদক চোরাকারবারি চক্রকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এ সব পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের পথে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। এতে বিপদগ্রস্ত ও নিপীড়নের শিকার শরণার্থীদের সমর্থন-সহায়ক কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। যেমন- ‘মেক্সিকোয় থাকুন’ কর্মসূচি। এর আওতায় মেক্সিকো ছাড়া অন্য দেশগুলোর আশ্রয়প্রার্থীদের মামলা মার্কিন আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের মেক্সিকোয় থাকতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে সংযুক্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বৃহত্তর পরিসরে অভিবাসী বিতাড়ন কর্মসূচি চালু করার আশ^াস দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসার দিনই তিনি অবৈধ অভিবাসীদের ওপর খড়গহস্ত হন। জাতীয় সীমান্ত জরুরি অবস্থা ও দক্ষিণ সীমান্ত সুরক্ষায় সহায়তার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ প্রদানের কথাও তিনি বলেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ তিনি বন্ধ করে দেবেন। অবৈধ অভিবাসীদের অপরাধী হিসেবে বর্ণনা করে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এমন লাখো অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত কর্তৃপক্ষ এই আদেশের আওতায় অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার একটি প্রকল্পও বন্ধ করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি অভিবাসন সংক্রান্ত অনেক পুরানো একটি নীতির অবসান ঘটাতে যাচ্ছেন। এই নীতির কারণে আগে কেন্দ্রীয় অভিবাসন কর্তৃপক্ষ স্কুল ও চার্চে অভিবাসন চালাতে পারত না। যুক্তরাষ্ট্রে কেউ জন্মগ্রহণ করলে জন্মসূত্রে দেশটির নাগরিকত্ব পেতেন। প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরানো এই সাংবিধানিক অধিকারকে ট্রাম্প হাস্যকর বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি এই বিধান বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে শুধু নির্বাহী আদেশ দিয়ে এই নীতি পরিবর্তন করা কঠিন। ট্রাম্পের এই আদেশ মার্কিন সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনের বিরুদ্ধে যায়। ১৮৯৮ সালের ওই সংশোধনীতে বলা হয়, মার্কিন ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকেই দেশটির নাগরিকত্ব পাবে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, দেশটিতে কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলে সে জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে। এক্ষেত্রে ওই শিশুর বাবা-মা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে প্রচলিত নিয়মে ট্রাম্প প্রশাসন পরিবর্তন আনতে চান। নথিবিহীন অর্থাৎ অবৈধ কোনো অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান প্রসব করলে সেই শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্তের পর অভিবাসী নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্ত আমেরিকার মূল্যবোধ সমুন্নত রাখবে না বলে কোনো কোনো সংগঠন জানিয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের জীবন ধ্বংসের জন্য সক্রিয় তৎপরতা শুরু করেছে। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরই ফেডারেল সরকারের সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনো অবৈধ অভিবাসী অথবা সাময়িক ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, এমন কেউ সন্তান জন্ম দিলে সেই শিশুকে যেন মার্কিন নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নথি যেন দেওয়া না হয়। এ নির্বাহী আদেশে সই করার পরপরই আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন নামের একটি সংগঠন জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এমন আদেশের বিরুদ্ধে তারা মামলা করবে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুকে নাগরিকত্ব না দেওয়ার আদেশ শুধু আংবিধানিক নয়, একইসঙ্গে তা আমেরিকার মূল্যবোধের বেপরোয়া ও নির্মম প্রত্যাখ্যান। জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের এ সাংবিধানিক অধিকার যদি ট্রাম্প কেড়ে নিতে চান, তাহলে তাকে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ও উচ্চকক্ষ সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন পেতে হবে। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রভাব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘পলিটিকো’-এর একটি প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই আদেশের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সেই সকল শিশুকে নাগরিকত্ব না দেওয়া; যাদের মা অবৈধভাবে বা পর্যটনসহ বিভিন্ন ভিসায় দেশটিতে অবস্থান করছেন, শিশুটির বাবা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন বা আইনসঙ্গতভাবে স্থায়ী বাসিন্দা নন। এখন থেকে ৩০ দিন পর যে সব শিশু জন্মগ্রহণ করবে, তাদের মধ্যে কারও মা-বাবা দুজনের কোনো একজন যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না হন বা গ্রিন কার্ডধারী না হন, তাহলে সেই শিশুকে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট ও ভিসা দেওয়া হবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রেজিস্ট্রারের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত এক নোটিসে বলা হয়েছে, এ পরিবর্তনের প্রভাব জাতীয় নিরাপত্তা ও জনগণের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে। একইসঙ্গে অভিবাসনসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত গ্রহণের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে সরকারি খরচ কমবে। নতুন করে গৃহীত আরেকটি নির্দেশনায়, ‘মানবিকতার খাতিরে ছাড়’ প্রদানের সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে। সুবিধাটির আওতায় সুনির্দিষ্ট কিছু অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ প্রদান করা হতো। এখন প্রত্যেকের ক্ষেত্রে আলাদাভাবে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। অভিবাসীদের বিতাড়ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতির আওতা বৃদ্ধির জন্য ট্রাম্পের গৃহীত পদক্ষেপকে আটকে দেওয়ার জন্য অভিবাসন সংক্রান্ত একটি সংগঠন মামলা করেছে। ‘মেক দ্য রোড নিইউয়র্ক’ নামক অভিবাসীদের পরামর্শক সংগঠন ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ার আদালতে মামলাটি করেছে। তাদের মতে, দ্রুত অপসারণ নীতির আওতায় পড়া অভিবাসীদের কোনো আইনজীবীর সহায়তা নেওয়ার সুযোগ নেই এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের অপসারিত হওয়ার বিরুদ্ধে তাঁরা কোনো প্রমাণ দাখিল করতে পারবেন না। মামলায় বলা হয়েছে, ‘এক্সপিডাইটেড রিমুভাল’ নামে পরিচিত এ নীতি যথাযথ প্রক্রিয়া, অভিবাসন আইন ও প্রশাসনিক আইন অনুসরণ না করায় তা সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে। অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে অনুসরণ করা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের আইন সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও আওতা বাড়ানো ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতিতে তা নেই। এ নীতিতে আইন সুরক্ষা পেতে অনেক বছরও লাগতে পারে। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন, সম্প্রসারিত দ্রুত অপসারণ নীতি অভিবাসীদের বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া ও সংবিধান অনুসরণ করা এড়াতে ট্রাম্পকে প্রতারণামূলক একটি সুযোগ এনে দিতে পারে। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে অভিবাসীদের বিষয়ে যে নীতি অনুসরণ করেছিলেন, ‘দ্রুত অপসারণ’ নীতির সম্প্রসারণ তারই প্রতিফলন হিসেবে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আকারে অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করাকেই ট্রাম্প প্রশাসন অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নিইউয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে পরিচালিত অভিযানে প্রথম ৯ দিনে ৭ হাজার ২০০-এর বেশি অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে সর্বোচ্চ ১০ হাজার সেনা মোতায়েনের জন্য তৈরি থাকতে সামরিক বাহিনীকে ট্রাম্প প্রশাসন নির্দেশনা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সার ব্যুরোর ২০২৪ সালের প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ২০১০ এবং ২০২২ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা ২৯ লাখ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৪৬ লাখে পৌঁছছে। সীমান্ত  এজেন্ট মাইকেল ব্যাঙ্কস কর্তৃক ফক্স নিউজের একটি অনুষ্ঠানে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, ট্রাম্পের অভিষেকের পরদিন ২১ জানুয়ারি থেকে অবরুদ্ধ দক্ষিণ সীমান্ত পেরিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করা অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা আশ্চর্যজনকভাবে ৯০ শতাংশ কমে গেছে। সীমান্ত টহল কর্তৃপক্ষের হাতে আটক হওয়া অপরাধী অভিবাসীদের বিচারের হার ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, মার্কিন সীমান্ত টহল বাহিনী কীভাবে কাজ সম্পন্ন করতে হয়, কীভাবে সীমান্ত সুরক্ষিত করতে হয় তা জানে। আমাদের শুধু একজন প্রেসিডেন্টের প্রয়োজন ছিল, যিনি আমাদের ক্ষমতাবান করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ পথে প্রবেশের চেষ্টাকারী অভিবাসীদের সংখ্যায় এই বিপুল পরিমাণ হ্রাস পাওয়াÑ ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর সীমান্ত নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতির সরাসরি ফল বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেন। সবচেয়ে সহিংস অপরাধীদের গুয়ান্তানামো বে-তে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ জানিয়েছেন, ৩০ হাজার অভিবাসী রাখার জন্য গুয়ান্তানামো বে তৈরি করা হচ্ছে। ট্রাম্পের গৃহীত এই কঠোর অভিবাসননীতির কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর কিছু সুফলও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ১ কোটিরও বেশি অবৈধ অভিবাসীকে বিতাড়িত করা হলে দেশটিতে অপরাধ কমবে। একইসঙ্গে মার্কিনসহ সকল বৈধ অভিবাসীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে বলে ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আসা হিস্পানিক অভিবাসন ঠেকানো। যুক্তরাষ্ট্রে হিস্পানিক অভিবাসন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে চাচ্ছেন। তিনি অবশ্য বৈধ অভিবাসন বন্ধ করতে চান না। গত ২০ জানুয়ারি থেকে মার্কিন সেনাবাহিনী অনুপ্রবেশকারীদের আটক করা শুরু করেছে। লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সামরিক হেলিকপ্টারে করে তাদের পাঠানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে আতঙ্ক ছড়ালেও বৈধ অভিবাসীরা লাভবান হবেন। দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে থাকা বহু অবৈধ অভিবাসী অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মার্কিনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বৈধ অভিবাসীরা। এ অভিযান সফল হলে যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে এবং বৈধ অভিবাসীরা নিরাপদে থাকবেন। ট্রাম্পের গৃহীতি নীতিগুলো মূলত মেক্সিকো, মধ্য আমেরিকা এবং কানাডা থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের লক্ষ্য করে হলেও সমগ্র বিশ^ব্যাপী এর প্রভাব পড়বে। ট্রাম্প প্রশাসনের গৃহীত অভিবাসন নীতির ফলে বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে রেমিটেন্স আসা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে অন্যতম। এতে করে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও অধিকতর যাচাই-বাছাই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সাস ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সে দেশে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন। অন্যরা অভিবাসী। ট্রাম্প এই ৩৪ শতাংশকে অবৈধ ঘোষণা করে ভারতে ফেরতে পাঠালে সে দেশে আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, অবৈধ বসবাসকারী ভারতীয়দের সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজারের মতো। তাদের মধ্যে ২০ হাজার ৪০৭ জন ভারতীয়ের নিকট কোনো নথি নেই। ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিশিল্পে সংকট দেখা দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫০ শতাংশ খামার শ্রমিকদের বৈধ অভিবাসন মর্যাদা নেই। এসব শ্রমিক যদি কাজ করতে না পারেন বা আটক হন, তাহলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন নীতি আরও কঠোর করার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×