
বিবিএ, এমবিএ পাস করে কর্মহীন যুবক। তা ছাড়া অল্প পড়াশোনা করায়ও বেকার। কাজের খোঁজে বাংলাদেশ ছেড়ে ভীনদেশে চলে যাচ্ছে। কি করবে কাজ পায় না। একটা সময় ছিল যখন এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ কাজের জন্য বাংলাদেশে আসতেন। ইংরেজরা আসত দলে দলে। আফগানিস্তান থেকে কাবুলিওয়ালারা আসত দলে দলে। ইরাক-ইরান থেকেও বহু লোক এসেছিল। সেটা ছিল আমাদের গৌরবের দিন, যা এখন ইতিহাস। মারোয়াড়িপাড়া, ইরানিপাড়া, ইংরেজপাড়া, কাবুলপাড়া, সিন্ধুপাড়া, পাঞ্জাবিপাড়া, কাশ্মীরিপাড়া, বেলুচিস্তানপাড়া, সৌদি আরবপাড়া, ইহুদিপাড়াÑ এসবই ছিল।
ছিল বড় বড় শহরের নদীর পাড় ধরে দু’ধারে শ্রমিক-কুলিদের বস্তি। অন্যান্য কলকারখানার চিমনির ধোঁয়াও দেখা যেত বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ সব ছিল ‘এগিয়ে বাংলাদেশে’র প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এখন বাংলাদেশে কর্ম সংস্কৃতিতে একেবারেই ভাটার টান। প্রত্যেক বছর ঘটা করে বিদেশে গিয়ে শিল্পপতিদের সঙ্গে দেখা করে নয়তো দেশে ডেকে এনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে শিল্প ও বিনিয়োগ সম্মেলন করা হয়। কিন্তু একটা বৃহৎ মাপের শিল্পও বাংলাদেশে গড়ে ওঠে না। আন্দোলন আর ভোটের বাজারে সুবিধা তোলে আংশিক বাহুবলে, বাকিটা অকাতরে অনুদান বা খয়রাতিতে রাজকোষ ফাঁকা করে। কর্মসংস্থান কোথায়? লেখাপড়া করে তরুণরা কি করবে? পথে পথে ঘুরবে? এ দেশে এখন সম্ভাবনা দুটি, হয় ক্ষমতাবানদের লেজ ধরে তাদের মদতে পুষ্ট সিন্ডিকেট ব্যবসায় যোগ দেওয়া। না হয় জায়গা-জমি, ঘটিবাটি বিক্রি করে শ্রমিক হয়ে বিদেশে চলে যাওয়া।
বাংলাদেশ যে কর্মসংস্থানে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়ছে, তা বিক্ষিপ্তভাবে নানা ধরনের আলোচনা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমীক্ষায় উঠে আসছে। অভিজ্ঞতা বলছে, স্বাবলম্বী হতে বা কাজ করে খেতে ইচ্ছুক মাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনকারী ছেলেমেয়েদের একটা বড় অংশ দেশের বাইরে চলে গিয়েছে বা চলে যাওয়ার জন্য হাহুতাশ করছে। করবেই না কেন? শত শত পদে ইন্টারভিউ দিয়ে একটা চাকরি জোটাতে পারছে না। তারা তো আছেই। এ ছাড়া টেকনিশিয়ান যারা তারা অনেক চেষ্টা করে কখনো বিদেশে যেতে পারেন, আবার কখনো পারেনও না! হাসপাতাল, হোটেল, নার্সিং ইত্যাদিতে প্রশিক্ষিতরাও যে যেভাবে পারে সেদিকে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে রয়ে গেছে অসংখ্য বেকার। সেইসঙ্গে রয়ে গেছে তিন চাকার ট্রলিভ্যান, টোটো-অটোরিকশা চালানো, রাইস মিলে কাজ করা বা চিটিংবাজ, বিপথগামী অসংখ্য ছেলেমেয়ে। চিটিংবাজ বা বিপথগামী হবেই না কেন? কাজ পায় না বলেই তো অসৎ জীবনযাপনের ভয়ংকর পথ বেছে নিয়েছে সমাজের একটি অংশ। সবশেষে বলতে হয়, ক্ষমতাবানরা খুব যত্ন সহকারে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের কর্মহীনতার হাহাকারকে এত সহজে ঢাকা যাবে না।
লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, ঢাকা