
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পের প্রভাব আমাদের দেশে এসেও পৌঁছেছে। মিয়ানমারের আশপাশের দেশে ক্ষতির পরিমাণও কম নয়। ব্যাঙ্ককের একটি ভবন ধসে পড়ার ঘটনা ছিল আতঙ্কের। মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতেও ভবন ধসের দৃশ্য দেখা গেছে। সড়ক এবং ব্রিজ ভেঙে পড়ে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির ভয়ংকর দৃশ্য রেখে গেছে দেশটিতে। হতাহত হয়েছে কয়েক হাজার। এমন দৃশ্যের মধ্যে বাংলাদেশে যে ঝাঁকুনির সৃষ্টি হয়ে আমাদের সতর্ক বার্তা দিল, তাতে করে আমরা কি ভূমিকম্প মোকাবিলায় কোনো ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি রেখেছি। ১৮৫০ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশের মধ্যে ভয়াবহ ভূমিকম্পের রেকর্ড রয়েছে। যার মাত্রাস্কেল ছিল ৮.৫ থেকে ৮.৭ পর্যন্ত কোনো কোনোটির। কিন্তু তখন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র লক্ষ্য করা যায়নি। তার কারণ হলো- তখনকার সময়ে দেশের মধ্যে এত ইমারত ছিল না। শুধু পাহাড়ি এলাকায় নিচ থেকে কাঁদা মাটি উদগীরণ আর সুনামি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে তখকার সুনামীতে বুড়িগঙ্গা নদীর আশপাশের বহু বাড়ি ঘর ভেসে গিয়ে ৫ শতাধিক লোকের প্রাণহানির পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। তাছাড়া তখনকার সময়ের বড় ভূমিকম্পের কারণেই সেন্টমার্টিন আইসল্যান্ড ডুবন্ত দীপটি ৯ ফুট ভেসে ওপরে ওঠে দৃশ্যমান হয়। সে ঘটনায় মিয়ানমারের একটি দ্বীপেরও উত্থান ঘটে। সেটি ২৭ ফুটের মতো ওপরে উঠে আসে। আমরা যদি বিশ্বের ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই একটা সময় জাপানের ভূমিকম্পে হতাহতের সংখ্যা ছিল ব্যাপক। মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলোতে হাজার হাজার লোকের প্রাণ যেত ভূমিকম্পে। কিন্তু সে চিত্র অনেক দেশই পাল্টাতে পেরেছে। জাপান তার নির্মাণ ব্যবস্থাপনায় ভূমিকম্প সহনীয় স্ট্রোকচার আদলে রূপ দিতে পেরেছে। সেখানে ভূমিকম্প হবে। বিল্ডিংয়ে ঝাঁকুনি হয়ে দোলবে কিন্তু বিল্ডিং ধসে পড়বে না। প্রযুক্তি তারা ভূমিকম্প সহনীয় করতে পেরেছে।
কিন্তু আমাদের দেশের ইমারত নির্মাণে নেই কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা। যে যেভাবে পারছে অনিয়মই যেন নিয়মের নিয়তি করে নিয়েছে। রানা প্লাজা কোনো ধরনের ভূমিকম্প ছাড়াই ধসে হাজার হাজার শ্রমিকের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছে। পুরো ঢাকার চিত্র বলে দেয় কি পরিমাণ ভবন রযেছে এ শহরে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি ভায়াবহ কোনো ধরনের ভূমিকম্পের দুর্যোগ নেমে আসে, তাহলে তার সামান্য উদ্ধার তৎপরতা চালানো সম্ভব হবে না। তার কারণ-আমাদের আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জাম নেই। প্রশিক্ষিত লোকবল নেই। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দারের মতো দশা হবে তখন ফায়ার ফাইটারদের অবস্থা। বিল্ডিং করার সময় ভূমিকম্প প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বারবার বলা হলেও কে শোনে কার কথা। একটি বহুতল ভবন করার জন্য তার সামনে যতটুকু সড়ক রাখার কথা, তার কোনো ধরনের নিয়মই মানা হয় না। বিল্ডিং ধসে পড়লে উদ্ধারকারী সেখানে পৌঁছার মতো কোনো ধরনের ব্যবস্থা পর্যন্ত নেই। উত্তরাঞ্চলের বন্যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছে সেখানে উদ্ধার সরঞ্জামের কি পরিমাণ অভাব ছিল। ঢাকা থেকে স্পিডবোট নিয়ে সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে হয়েছে। এটা ভাবা যায়? ভূমিকম্পে ক্ষতিসাধন ঘটলে সে পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়, তার পূর্ব প্রস্তুতি এখন থেকেই গ্রহণ করতে হবে। ঢাকা শহরে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে তার ৭০ ভাগই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার উদ্ধার কাজের জন্য দক্ষ জনবল এবং আধুনিক উদ্ধার সরঞ্জাম এখনই সংগ্রহ করে রাখতে হবে। নইলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অত্যন্ত জটিল এবং কঠিন হয়ে পড়বে।
অলিউর রহমান ফিরোজ
মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার মুন্সীগঞ্জ