ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

গাজার কান্না ও করুণ বাস্তবতা: মানবিকতার নামে নির্বাক বিশ্ব

ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১১ এপ্রিল ২০২৫

গাজার কান্না ও করুণ বাস্তবতা: মানবিকতার নামে নির্বাক বিশ্ব

ছবিঃ সংগৃহীত

বিশ্ব যখন করোনা মহামারিতে স্তব্ধ, মানুষ যখন জীবনের জন্য লড়ছে—ঠিক তখন ইসরায়েলি বাহিনী যেন মানবতার বিপরীতে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। করোনা মোকাবেলায় যেখানে আন্তর্জাতিক সহমর্মিতা ও সহযোগিতা প্রত্যাশিত, সেখানে ফিলিস্তিনিদের জন্য নির্মিত চিকিৎসা শিবিরের সামগ্রী ইসরায়েল দখল করে নিয়ে গেছে, একটি নির্মম ও অমানবিক সিদ্ধান্তে।

২০২০ সালের ২৬ মার্চ, ইসরায়েলি সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সদস্যরা সেনাবাহিনী ও ক্রেন-ট্রাকসহ হাজির হয় উত্তর জর্ডান উপত্যকার খিরবেত ইবজিক নামক ফিলিস্তিনি এলাকায়। তারা আটটি তাবুর জন্য নির্ধারিত খুঁটি ও কাপড়, দু'টি অস্থায়ী হাসপাতাল, চারটি জরুরি আবাসন কেন্দ্র ও দু'টি অস্থায়ী মসজিদের সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে থাকা একটি টিনের ঘর, জেনারেটর, বালু-সিমেন্ট ও সিমেন্টের ব্লকও তারা নিয়ে যায় অথবা ধ্বংস করে।

এই ঘটনা যেন এক প্রতীকী বার্তা—ইসরায়েল চিকিৎসা নয়, নির্যাতনকেই বেছে নিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা বেতসেলেম বলেছে, গাজায় করোনা ছড়িয়ে পড়লে তা হবে “একটি বিপর্যয়কর মানবিক ট্র্যাজেডি”, কেননা অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ।

আজ, ২০২৫ সালের গাজা—আরও ভয়াবহ এক চিত্র। হাসপাতালগুলো ভেঙে পড়ছে, শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ওষুধের অভাবে মারা যাচ্ছে, গর্ভবতী মায়েরা নিরাপদ প্রসবের সুযোগ পাচ্ছেন না। পানি, বিদ্যুৎ ও খাদ্য সংকট এমন পর্যায়ে যে, একে গণহত্যার ছায়াযুদ্ধ বললেও কম বলা হবে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রতিদিনের বোমাবর্ষণ, হাসপাতালের ওপর হামলা, সাংবাদিক হত্যার ধারাবাহিকতা এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের কণ্ঠরুদ্ধ নীরবতা আমাদের বিবেককে প্রশ্নবিদ্ধ করে। জাতিসংঘ, ওআইসি, মানবাধিকার সংগঠনগুলো মাঝে মাঝে বিবৃতি দিলেও, কার্যকর পদক্ষেপ আজও অনুপস্থিত।

ফিলিস্তিন শুধু একটি ভৌগোলিক ভূখণ্ড নয়, এটি বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের প্রতিবাদের প্রতীক। গাজার প্রতিটি শিশুর আর্তনাদ যেন বিশ্ব বিবেকের ব্যর্থতার দলিল। যখন চিকিৎসার সামগ্রী কেড়ে নেওয়া হয়, তখন তা শুধু একটি শিবির ধ্বংস নয়, বরং তা একটি জাতির আশা-ভরসার উপর সরাসরি আঘাত।

একজন সমাজকর্মী ও মানবিক চিন্তাবিদ হিসেবে আমি বলবো—এই বিশ্বব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। গাজার এই করুণ চিত্র আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শুধু উন্নয়ন নয়, ন্যায়বিচার ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠাই হওয়া উচিত সভ্যতার মূল লক্ষ্য।

বাংলাদেশ একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছে। তাই আমাদের দেশ এবং জনগণের উচিত—সর্বস্তরে ফিলিস্তিনের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামের পক্ষে কণ্ঠস্বর উত্থাপন করা। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে গাজার জন্য আমাদের সহানুভূতি ও সক্রিয় ভূমিকা থাকা প্রয়োজন।

শেষে বলবো—আজকের নববর্ষ হোক সেই শপথের দিন, যেদিন আমরা প্রতিজ্ঞা করি—বিশ্বের নিপীড়িতের পাশে থাকবো, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে থাকবো, আর গাজার শিশুর কান্না যেন আর অবহেলিত না হয়।

 

লেখক : ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
চেয়ারম্যান, আলহাজ্ব কে. এম. আব্দুল কারীম (রহ.) ট্রাস্ট।

রিফাত

×