
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্মানজনক আন্তর্জাতিক মহাকাশ জোটের অংশ হয়েছে। এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে। বাংলাদেশ এখন ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’-এর ৫৪তম স্বাক্ষরকারী দেশ। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ নাসার মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমে সরাসরি অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। এর ফলে বাংলাদেশের বিজ্ঞানী, গবেষক এবং শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক মানের মহাকাশ গবেষণার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। তারা মহাকাশ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং এর ব্যবহারিক ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে নতুন ধারণা ও জ্ঞান অর্জন করবেন, যা দেশের বৈজ্ঞানিক সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করবে। ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত আর্টেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ৫৩টি দেশ। বাংলাদেশ এই চুক্তিতে যুক্ত হওয়ায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।
নাসার সঙ্গে পার্টনারশিপ বাংলাদেশের মহাকাশ প্রযুক্তি খাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাসার প্রযুক্তিগত সহায়তায় বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট তৈরির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ, আবহাওয়া পূর্বাভাস, কৃষি মনিটরিং, জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর হবে। এ চুক্তির মাধ্যমে বৃদ্ধি পাবে বাংলাদেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের মহাকাশ সংস্থার সহযোগিতাও। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য নাসা থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এর ফলে দেশের তরুণ প্রজন্ম সক্ষম হবে আন্তর্জাতিক মানের মহাকাশ বিজ্ঞানী হিসেবে গড়ে উঠতে। আর্টেমিস প্রোগ্রাম মূলত মানবিক অভিযান পরিচালনা করবে চাঁদ ও আরও গভীর মহাকাশে। বাংলাদেশ এই প্রোগ্রামের অংশীদার হিসেবে মহাকাশে মানুষের অভিযানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক সাহায্য পাবে। নাসা মহাকাশে বিভিন্ন মিশন পরিচালনা করে, যার মাধ্যমে সূর্যজগৎ, চাঁদ, মঙ্গল, গ্রহ, উপগ্রহ এবং অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তু সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া যায়। নাসা বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রকেট এবং মহাকাশযান নির্মাতা সংস্থা। তাদের তৈরি রকেট, যেমন- ‘অরিয়ন স্পেসক্রাফট’ এবং ‘স্পেস শাটল’ মহাকাশ অভিযানে ব্যবহৃত হয়। এগুলো মহাকাশে মানব মিশন এবং গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নাসা পৃথিবীর আবহাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য উপগ্রহ প্রেরণ করে। তাদের গবেষণায় পাওয়া তথ্য পৃথিবী সম্পর্কিত নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়তা করে। নাসার গবেষণা শুধু মহাকাশ প্রযুক্তির উন্নয়নই নয়, বরং পৃথিবী বসবাসযোগ্য করতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের নিজস্ব মহাকাশ কর্মসূচি এবং এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য নাসার সঙ্গে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশের জন্য একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হবে নিজস্ব মহাকাশ গবেষণা ও উন্নয়ন উদ্যোগকে সুসংগঠিত ও স্বাধীনভাবে পরিচালনা করা। যদিও নাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি সই করার ফলে বাংলাদেশ অনেক সুবিধা পাবে, তবে রয়েছে কিছু সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জও। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশের সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক কূটনীতি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার দিকে নিয়মিত সজাগ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। বাংলাদেশ যদি সতর্কভাবে এই সহযোগিতা পরিচালনা করতে পারে, তবে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলেই আশা করা যায়।