
‘বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, যার বিশ্বকে বদলে দেওয়ার অভিনব সব ধারণা রয়েছে। এসব ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। তাই আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাই, যেন আপনারা শুধু বাংলাদেশকে নয়, পুরো বিশ্বকেই বদলে দেওয়ার যাত্রায় যুক্ত হন।’ রাজধানীর একটি হোটেলে চার দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) যৌথ উদ্যোগে ৪ দিনের (৭-১০ এপ্রিল) বিনিয়োগ সম্মেলন রাজধানী ঢাকায় শেষ হয়েছে। এবারের এই সম্মেলন অন্য দশটা সম্মেলনের মতো শুধু ইনডোর আয়োজনে সীমাবদ্ধ ছিল না। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের বাণিজ্যিক স্পটগুলো সরেজমিনে দেখানোর জন্য ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল, আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল এবং ৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করানো হয়। সম্মেলনে বিনিয়োগকারীরা ৫টি প্রধান সমস্যা চিহ্নিত করেছেনÑ দুর্নীতি, বিদ্যুৎ, অর্থায়নে সীমিত সুযোগ, অনানুষ্ঠানিক খাতের আধিক্য এবং উচ্চ করহার। বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পুরানো ধ্যান-ধারণা ভাঙতেই এবারের সম্মেলনের আয়োজন। সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন ৪০ দেশের ছয় শতাধিক বিনিয়োগকারী। চারদিনের এই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে আমরা অনেক আশার আলো দেখতে পেয়েছি আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে।
আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাত সামনে আনা হয়েছেÑ নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতি, টেক্সটাইল ও পোশাক, স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধ শিল্প এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ। উদ্দেশ্য এ খাতগুলোয় বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশ একটি হ্রাসকৃত শুল্ক কাঠামো প্রস্তুত করছে। অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), বিশেষ ইপিজেড এবং হাইটেক পার্কগুলোতে বাংলাদেশ দেশী ও বিদেশী উভয় বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ ও ঝামেলামুক্ত নিবন্ধন, রপ্তানি প্রণোদনা, নিরাপদ জমি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির নিশ্চয়তা, উচ্চগতির ইন্টারনেট, আইটি সুবিধা, ডেটা সেন্টার, নমনীয় অবকাঠামো এবং সহজ কৌশল প্রণয়ন করছে। বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি ইতোমধ্যেই দৃশ্যমান হওয়ায় বিশ্বজুড়ে মার্কিন শুল্কের প্রভাব বিনিয়োগকারীদের আস্থায় ধাক্কা দিয়েছে। মার্কিন শুল্কনীতি প্রতিযোগী দেশগুলোকেও প্রভাবিত করবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুটা সফলতা দেখিয়েছে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত করতে। ফলে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকগণ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এ শুল্কারোপ বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে।
বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ এখনো শক্তিশালী। কারণ, সস্তা শ্রম, রয়েছে একাধিক সমুদ্রবন্দর। দেশীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে যদি বিদেশীদের চাহিদামতো বিনিয়োগবান্ধব সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং লালফিতার দৌরাত্ম্যমুক্ত করা যায়, তবে বিদেশীরা অতিমাত্রায় আগ্রহ প্রকাশ করবে বাংলাদেশে বিনিয়োগে। সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থান।