ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

উৎসবের অর্থনীতি

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ২১:০৬, ৯ এপ্রিল ২০২৫

উৎসবের অর্থনীতি

পহেলা বৈশাখ ‘১৪৩২ সাল’কে বাংলা নববর্ষ বরণ

পহেলা বৈশাখ ‘১৪৩২ সাল’কে বাংলা নববর্ষ বরণ করে নেওয়ার জন্য বাঙালি উন্মুখ হয়ে আছে। বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। সারা বছর বাঙালির কোনো না কোনো উৎসব লেগে আছে। বাঙালির মুসলমানের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর গেল। এর পরে নতুন বারতার সাজে বাংলা নববর্ষের বরণ উপলক্ষে নানা আয়োজন থাকবে।

এ উৎসব ধর্ম, বর্ণ, জাতি গোষ্ঠী নির্বিশেষে সর্বজনীন। পহেলা  বৈশাখে বাংলা নববর্ষের আমেজ অন্য রকম এবং আলাদা। আলাদা এ কারণে সর্ব শ্রেণির মানুষ বাংলা নববর্ষের উৎসবের অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে পালন করে। তার পরে পহেলা বৈশাখের উৎসব ভাতা সরকার থেকে পেয়ে আসছে সরকারি চাকরিজীবীরা। এটা একটা আনন্দের সাথে উৎসব পালনে নতুন মাত্রা পাবে।
পহেলা বৈশাখে নতুন বছরকে বরণের মধ্যে যেমন আয়োজন থাকে তা প্রভাতে পান্তা ভাতের সঙ্গে কাঁচা মরিচ ও ইলিশ মাছ খাওয়ার প্রথা। পহেলা বৈশাখের উৎসব উপলক্ষে লাখ লাখ টাকার ইলিশ বেচা-কেনার ব্যবসা-বাণিজ্য জড়িত। তরুণী নারীরা মাথা ফুল দিয়ে সাজে বা প্রিয়জনকে ফুল দেওয়ার ব্যাপার থাকে। এতে করে প্রতিদিন ৩০-৪০ লাখ টাকার বেচাকেনা চলে সে হিসেবে বৈশাখ ঘিরে ৭০-৮০ কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়।

তার পরে পহেলা বৈশাখে উপলক্ষে সারাদেশে  বৈশাখী ব্র্যান্ডের আঙ্গিকে নানান ধরনের পোশাক ছোট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত রঙিন সাদা লাল নানান ধরনের পায়জামা পাঞ্জাবি ফতুয়া, মেয়েদের সালুয়ার কামিজ শাড়ি এমন পোশাক বেচাকেন হয়। সারাদেশে পাইকারি মাল বিক্রি সরবরাহ করা হয় কেরানীগঞ্জ, ইসলামপুর, নবাবপুরে, পুরান ঢাকা থেকে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ২৫-৩০ হাজার কোটি ব্যবসা-বাণিজ্য হয়ে থাকে অর্থনীতিবিদদের ধারণা। তা ছাড়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শুরু করে শহর নগর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন মেলার আয়োজন চলে এক সপ্তাহ থেকে মাস পর্যন্ত। মেলাতে মিষ্টি মান্ডা বিশেষ করে জিলাপি মুড়ি মুড়কি, বাচ্চাদের খেলনাপাতি, কুমারদের মাটির তৈরি শিল্পের নানান হাঁড়ি পাতিল, পুতুল এমন আছে হস্তশিল্পের নানান জিনিস ও কাঠের তৈরি নানান ফার্নিচার।

তা ছাড়া মেয়েদের চুরি ফিতা বা কসমেটিকসের কত রকমের জিনিস বেচাকেনা হয়। এখানে বিশাল অঙ্কের বৈশাখী অর্থনীতি জড়িত। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে, বিশেষ কোনো কোম্পানি নানান সংস্কৃতি অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে। এতে অর্থনীতি জড়িত আছে। দেশে ষাটের দশক থেকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে হাঁটি হাঁটি পা করে দোকান পাটের হালখাতার হিসাব-নিকাশ শুরু করে বিশাল অঙ্গীকারের বিস্তার লাভ করেছে।

নতুন বছরকে শুধু বরণই নয়; এখানে আনন্দ উৎসব অর্থনীতি সব কিছুর প্রাণের ঐতিহ্যে জড়িত। তাই বাংলা নববর্ষের শেকড় এদেশের মাটির গভীরে প্রোথিত হয়েছে যেমন গ্রোথিত হয়েছে। এটা জাতি, বর্ণ, ধর্ম নির্বিশেষে এ দিনটিকে রাজনীতির বাইরে নিয়ে গিয়ে সামাজিক প্রেক্ষাপটে গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে।
    চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে

×