
বাংলা নববর্ষ, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ
বাংলা নববর্ষ, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখ, বাঙালির অন্যতম প্রধান উৎসব। এই দিনটি শুধু ক্যালেন্ডারের নতুন পাতা নয়- এটি বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির প্রাণ। বছরের প্রথম দিনটিকে ঘিরে দেশজুড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। শহর থেকে গ্রাম- সবখানেই ধরা পড়ে বৈশাখের উচ্ছ্বাস।
পহেলা বৈশাখ মানেই সকালবেলা রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন, চারুকলার রঙিন মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ, হালখাতা আর বৈশাখী মেলা। চারুকলার ছাত্রছাত্রীরা রং-তুলিতে তৈরি করে নানা মুখোশ ও লোকজ শিল্প। ইউনেস্কো স্বীকৃত মঙ্গল শোভাযাত্রা আজ আমাদের সংস্কৃতির গর্ব হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
শহরের মতো বাংলার প্রতিটি গ্রামেও বৈশাখের প্রথম দিনে উদযাপিত হয় উৎসব। বিভিন্ন গ্রামে বসে বৈশাখী মেলাÑ যেখানে মাটির পুতুল, বাঁশের সামগ্রী, কাঠের খেলনা, দেশী কাপড় আর খাবারের বাহার থাকে চোখজুড়ানো। এসব মেলা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, বরং গ্রামীণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন সুযোগ।
বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়Ñ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই হয় বৈশাখী আয়োজন। শিক্ষার্থীরা বাহারি রঙের পোশাক পরে অংশগ্রহণ করে ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসবে, দেয়াল পত্রিকা, কবিতা আবৃত্তি, নাচ-গানসহ নানা অনুষ্ঠানে। এতে নতুন প্রজন্ম দেশীয় সংস্কৃতি ও শিকড়ের সঙ্গে পরিচিত হয়।
পহেলা বৈশাখ শুধু আনন্দের দিন নয়- এটি আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, ঐক্য এবং সৌহার্দ্যরে প্রতীক। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে নববর্ষকে বরণ করে। এই দিনে দেখা যায় সম্প্রীতির এক অনন্য চিত্র, যা আমাদের জাতীয় ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করে। তবে উৎসব উদযাপন যেন হয় শালীনতা ও সচেতনতায় পরিপূর্ণ। অতি উৎসাহে অপসংস্কৃতি, শব্দদূষণ বা পরিবেশের ক্ষতি যেন না হয়। বরং পরিবেশবান্ধব, সৃজনশীল ও সমাজবান্ধব আয়োজনের মধ্য দিয়েই হোক আমাদের সংস্কৃতির পরিচয়।
নতুন বছরের এই শুরু আমাদের মনে করিয়ে দেয়। পুরানো দুঃখ পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এসেছে। বৈশাখ আমাদের শেখায় সাহস নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখার কথা। এই উৎসব হোক আনন্দ, ঐক্য আর সচেতনতায় ভরপুর একটি সুন্দর যাত্রার শুরু।
মল্লিকপুর, সুনামগঞ্জ থেকে