ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ

এ.এফ.এম ফৌজি চৌধুরী

প্রকাশিত: ২১:০৩, ৯ এপ্রিল ২০২৫

সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ

পহেলা বৈশাখকে ঘিরে গ্রামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন

পহেলা বৈশাখকে ঘিরে গ্রামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লাঠি খেলা, ঘোড়দৌড়, ষাঁড়ের লড়াই, মোরগের লড়াই, বাউল গান, পালাগান, গ্রামীণ কিচ্ছা এবং বাহারি খাবারের নানা আয়োজন। গ্রামের আরেকটি ঐতিহ্যের বিষয় ছিল বৈশাখী মেলা। গ্রামের কোনো নদীর তীরে বা বড় বটগাছের নিচে যেখানে বিস্তৃত জায়গা রয়েছে, সেখানে বসত মেলা। দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসত মেলায়, আর এই মেলায় ফুটে ওঠে বাঙালি সংস্কৃতির আসল বাস্তবতা।
পহেলা বৈশাখের সকাল থেকেই ঘরে ঘরে চলত রান্নাবান্নার আয়োজন। তবে সে আয়োজনটা থাকত প্রতিদিনের চেয়ে একটু ভিন্ন। বিশেষ কিছু রান্নার পাশাপাশি অবশ্যই পায়েস রান্না করা হতো। বউ-ঝিরা সকাল থেকেই আনন্দের সঙ্গে রান্নাবান্নায় অংশগ্রহণ করত। মেয়েরা বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসত পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে।

জামাইরা আসত শ^শুরবাড়িতে, এটা যে কত আনন্দের একটা উৎসব ছিল তা বলে বোঝানো কঠিন। মেলায় পাওয়া যেত গৃহস্থালির নানা জিনিসপত্রও। সেই সেেঙ্গ থাকত মুড়ি-মুড়কি আর খেলনা। ছোট ছেলে-মেয়েদেও মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। তারা মেলা থেকে বাঁশি, মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল ইত্যাদি কিনত। মেলায় আরও থাকত নাগরদোলা, পুতুলনাচ, বানরের খেলা, যা দেখে সবাই খুব আনন্দ পেত।

শিশু থেকে শুরু করে বড়রাও এই আনন্দ ভাগ করে নিতে কার্পণ্য করতেন না। সন্ধ্যার পর মেলায় শুরু হতো বাউল গানের  আসর। সারাদিনের কাজ শেষ করে দলে দলে লোকজন গান শোনার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হতো। গভীর রাত পর্যন্ত চলত বাউল, জারি সারি গান। এ ছাড়া গ্রামজুড়ে খণ্ড খণ্ড অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদ্যাপন করা হতো পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষকে।

এছাড়া আরেকটি উল্লেখযোগ্য উৎসব হলো হালখাতা। অনেক ক্রেতা সারা বছর দোকান থেকে বাকিতে পণ্য ক্রয় করতেন। দোকানিরাও তাদের বাকিতে পণ্য দিতেন। তবে যখন হালখাতার আয়োজন করা হতো তখন সমস্ত টাকা বা বেশিরভাগ টাকা পরিশোধ করে দিতেন। তবে সে হালখাতাটাও ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে করে থাকেন।

ব্যবসায়ীরা পুরাতন খাতায় হিসাব শেষ করে নতুন খাতা খোলেন। এসবসহ আরও নানা আয়োজন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী আয়োজনগুলোর সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদেরই। এই ঐতিহ্যগুলো যেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম লালন করতে পারে।
    কুলাউড়া, মৌলভীবাজার থেকে

×