ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

মধু সংগ্রহ

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ৯ এপ্রিল ২০২৫

মধু সংগ্রহ

সম্পাদকীয়

বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্গত সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট বাংলাদেশের সুন্দরবনে সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে মধু সংগ্রহ অভিযান। সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশনের কেয়াখালের একটি গাছ থেকে চাক কেটে মধু সংগ্রহের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

প্রতিবছরের মতো ১ এপ্রিল থেকে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহের জন্য অনুমতিপত্র বা পাস দেওয়া শুরু হয়েছে এবারও। আপাতত সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশনে মধু সংগ্রহের জন্য ইস্যুকৃত ৮৪টি পাসের বিপরীতে ৫৪৫ জন মৌয়াল ঢুকেছেন সুন্দরবনে। 
এবার মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৫শ’ কুইন্টাল, যা আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক কম। উল্লেখ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে মধু আহরণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৬৩ কুইন্টাল। এরপর থেকে এর পরিমাণ কমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৮৩ কুইন্টাল। এবার মধু সংগ্রহের পরিমাণ আরও কমেছে।

এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই একশ্রেণির জেলে ও চোরাশিকারি চুরি করে মধু সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। এর বাইরেও গত কয়েক বছরে বনদস্যুদের উৎপাত, বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনে আগুন লাগা, সর্বোপরি চোরাশিকারিদের উৎপাত-উপদ্রবে মধু সংগ্রহের পরিমাণ কমছে দিন দিন। বনের আয়তনও কমেছে ইতোমধ্যে। সেই প্রেক্ষাপটে সুন্দরবনের বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত নজরদারি আরও বাড়ানোর বিকল্প নেই। 
সুন্দরবন বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনিবার্য অংশ। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষাও বটে। সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদ, তা সে বনজ ও জলজÑ যাই হোক না কেন, এর ওপর নির্ভরশীল স্থানীয় অধিবাসীদের জীবন-জীবিকা। সরকারের রাজস্ব আহরণের অন্যতম একটি প্রাকৃতিক উৎসও বটে। বন সম্পদের বাইরে সুন্দরবনের মাছ ও মধুর ওপর অনেকেরই জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল।

মধু একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পুষ্টিকর পানীয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ প্রাকৃতিক নিরাময়ও বটে। শ্লাঘার বিষয় এই যে, বিলম্ব হলেও ভৌগোলিক জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে সুন্দরবনের মধু। তবে এখানে একটি কথা আছে। ইতোমধ্যে সুন্দরবনের মধুকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত।

অথচ সুন্দরবনের ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র ভারতে অবস্থিত। সুন্দরবন থেকে প্রতি বছর যে পরিমাণ মধু আহরিত হয়ে থাকে, তার দুই-তৃতীয়াংশই আহরণ করা হয় বাংলাদেশ থেকে। তদুপরি এই মধু চাষকৃত নয়, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। সেই হিসেবে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। 
দুঃখজনক হলো, সুন্দরবনের  মধুকে ভারত জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত করার পরেই টনক নড়েছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্যাটেন্ট শিল্পনক্সা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের। অথচ বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট সুন্দরবনের মধুকে জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন পাঠিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।

রহস্যজনক কারণে এতদিন পর্যন্ত লালফিতার দৌরাত্ম্যে আটকে ছিল ফাইলটি। সরকারের মনে রাখা উচিত, বহির্বিশ্বে মেড ইন বাংলাদেশে যেতে এবং ব্র্যান্ডিং করতে হলে দেশীয় পণ্যের মেধাস্বত্বকে সুরক্ষা দিতে হবে। তা না হলে বিদেশী বিনিয়োগ, পর্যটক ও ক্রেতা আকর্ষণ করাও হবে দুঃসাধ্য।

×