
শিক্ষা বিস্তারে সেনাবাহিনীর ভূমিকা
বিখ্যাত চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছিলেন, ‘যদি তোমার এক বছরের জন্য পরিকল্পনা থাকে, তবে ধান রোপণ করো, যদি তোমার দশ বছরের জন্য পরিকল্পনা থাকে, তবে গাছ রোপণ করো, যদি তোমার সারাজীবনের জন্য পরিকল্পনা থাকে, তবে মানুষকে শিক্ষিত করো।’ এই উক্তির মাধ্যমে কনফুসিয়াস বুঝিয়েছেন যে, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন এবং সমাজের অগ্রগতি অর্জনের জন্য শিক্ষার গুরুত্বই সর্বাধিক।
অর্থাৎ, শিক্ষা জাতির উন্নতির পূর্বশর্ত। ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদ-’। শিক্ষার অগ্রগতি রাষ্ট্রের জন্য উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলতে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই বাংলাদেশ সরকার শিক্ষার প্রসার ঘটাতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি যুগোপযোগী মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেনাসদস্যদের সুচিন্তিত নির্দেশনা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ভালোমানের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান সমাজের সর্বস্তরে প্রশংসিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত স্কুল, কলেজ (সাধারণ, চিকিৎসা ও ক্যাডেট) এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ (সাধারণ, কারিগরি ও বিশেষ) দেশকে আলোকিত করতে বিশেষ অবদান রাখছে। সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের একটি ব্র্যান্ড নাম। এটা স্পষ্ট যে, শিক্ষার মানোন্নয়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবদান বেশ স্পষ্ট এবং প্রশংসনীয়।
সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ, খেলার মাঠ, কম্পিউটার ও বিজ্ঞান ল্যাব, লাইব্রেরি এবং অডিটোরিয়ামসহ অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পায়। মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য সাধারণত সেনাবাহিনী পরিচালিত ইনস্টিটিউটে একজন একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করা হয়। তিনি সবসময় ছাত্রদের সংকটের মুহূর্তে তাদের মানসিক সমর্থনের জন্য সাহায্য ও পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের জন্য দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ করে। সকল শিক্ষক অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ সুবিধার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হন। পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা ক্রমশ দক্ষ হয়ে ওঠেন। শিক্ষকগণ ছাত্রদের ভিত মজবুত করতে সাহায্য করেন, যাতে তারা সারাদেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। এখানে এক একজন শিক্ষক আলোকবির্তকার মতো কাজ করেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত ১২টি ক্যাডেট কলেজ, ৪৪টি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, ১৯টি ইংলিশ মিডিয়াম-ভার্সনসহ সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্কুল-কলেজ দেশের শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। মূলত, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল-কলেজসমূহ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সন্তান-সন্ততি ও পোষ্যদের যুগোপযোগী শিক্ষা প্রদানের জন্য স্থাপিত হলেও সাধারণ বা বেসামরিক পরিবারের শিক্ষার্থীরাও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে।
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের পাশাপাশি ৩৯টি ক্যান্ট বোর্ড স্কুল ও কলেজে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে। দীপ্তিময় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ ইতোমধ্যে দেশের জন্য সুনাগরিক গড়ে তুলে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। সারাদেশের ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের আবাসিক ও অনাবাসিক এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভালো ফলের জন্য প্রতিবারই প্রশংসিত হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, ২০২৪ সালে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের ১৩০ শিক্ষার্থী সশস্ত্র বাহিনীতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদানের বিরল গৌরব অর্জন করেছে। যথাযথ অধ্যবসায় ও সুশৃঙ্খল নিয়ম-কানুন মেনে চলার জন্যই তাদের এই সাফল্য।
ক্যাডেট কলেজ সামরিক বাহিনী পরিচালিত বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে সপ্তম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করানো হয়। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত জাতীয় শিক্ষাক্রমের ইংরেজি ভার্সনে পাঠদান করানো হয়। বাংলাদেশে ছেলেদের ৯টি ও মেয়েদের ৩টি ক্যাডেট কলেজ রয়েছে।
আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় ভর্তির জন্য কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। সামরিক বাহিনীতে যোগ্য কর্মকর্তা তৈরির চেতনা থেকে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত শিক্ষামান, আবাসিক ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে পরিচালিত হয় এ সকল ক্যাডেট কলেজ। উচ্চ শিক্ষায় প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের পাশাপাশি চমৎকার পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের সুব্যবস্থা ক্যাডেট কলেজের প্রধান আকর্ষণ।
এসব দিক বিবেচনায় বাংলাদেশের অভিভাবকদের অতি আকাক্সিক্ষত চাহিদা ক্যাডেট কলেজে সন্তানকে ভর্তি করানো। ক্যাডেট কলেজগুলো একটি সুগঠিত দৈনন্দিন রুটিন, খেলাধুলা, বিতর্ক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিভিন্ন দিক থেকে সাফল্য অর্জন করেছে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় (খ ইউনিট) ২০২৫ সালে প্রথম স্থান অধিকারী, মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ২০২৩ সালে প্রথম স্থান অধিকারী ও আন্তঃকলেজ জাতীয় ইংরেজি টিভি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ২০২১ সালে রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে শ্রেষ্ঠ ক্যাডেট (Sword of Honour) হওয়ার সাফল্য অর্জন করার অধিকাংশ ক্যাডেটই বিভিন্ন ক্যাডেট কলেজের।
এছাড়া ক্যাডেট কলেজের আদলে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য অফিসার তৈরির লক্ষ্যে ২০০২ সালে মিলিটারি কলেজিয়েট স্কুল, খুলনা (গঈঝক) প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সকল প্রতিষ্ঠানের ক্যাডেটগণ জাতীয় পরীক্ষাসমূহে ঈর্ষণীয় সাফল্যের পাশাপাশি চৌকস ও নেতৃত্বদানে পারদর্শী দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নানাবিধ কর্মকা-ের মাধ্যমে সমাজে তাদের প্রতিষ্ঠিত করার আদর্শকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বিশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘প্রয়াস’। ‘বিশেষ শিশু বিশেষ অধিকার’ -এই স্লোগানকে ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মানসিক বিকলতা, অটিজম, বুদ্ধি, বাক, শ্রবণ, দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সম্বলিত বিশেষ শিশুদের সেবা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাভাবিক শিশুদের ন্যায় উপযোগী করে গড়ে তুলছে।
প্রয়াস স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকারা মনপ্রাণ ঢেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। বিশেষ বাচ্চা মানেই বিশেষ পরিবেশ। এখানে ‘মা’ ও ‘প্রতিবন্ধী শিশু’ দুজনকেই শেখানো হয়। এই পরিবেশ একমাত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘প্রয়াস’ স্কুলই করতে পেরেছে। ‘প্রয়াস’ স্কুল শুধু এখানেই থেমে নেই, বিশেষ শিশুদের পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলার পাশাপাশি তাদের কারিগরি (ভোকেশনাল) প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা আজ দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিম-লেও অবদান রাখছে। সেনা পরিবার কল্যাণ সমিতির পৃষ্ঠাপোষকতায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, বগুড়া, কুমিল্লা, সাভার, রংপুর, ঘাটাইল, রাজশাহী, রামু এবং সিলেটে সর্বমোট ১১টি সেনানিবাসে বিশেষায়িত স্কুল (প্রয়াস) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালিত বিশেষায়িত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নানা ধরনের কর্মকা-ের মাধ্যমে সমাজে তাদের সচেতনতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করেছে।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (ইটচ) বাংলাদেশের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা ২০০৮ সালে ঢাকার মিরপুর সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা পরিচালিত হয়। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (ইটচ) প্রতিষ্ঠার আগে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (প্রায় ৫৬টি প্রতিষ্ঠান) সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিভুক্ত এবং সম্পৃক্ত ছিল।
বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এনে একত্রিত করে সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়। ‘জ্ঞানের মাধ্যমে উৎকর্ষ সাধন’ Ñনীতিবাক্য নিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (ইটচ) যাত্রা শুরু করে। উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও আধুনিক জ্ঞান চর্চার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্।
ইটচ-এর ক্যাম্পাস অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, সবুজে ঘেরা এবং আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন। দেশের ৩১তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিইউপিÑএর ৬টি অনুষদের ২২টি বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতক প্রোগ্রাম শিক্ষা প্রদান করে। পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনন্য সফলতা অর্জন করেছে ইটচ। সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে বিইউপির কার্যক্রমে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ সেশনজটমুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে।
॥ ২ ॥
মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সংক্ষেপে এমআইএসটি (গওঝঞ) নামে পরিচিত। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (গওঝঞ) বাংলাদেশের একটি সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, যা মিরপুর সেনানিবাসে অবস্থিত। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর অফিসারদের বিএসসি প্রকৌশল অধ্যয়ন করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এটি প্রতিষ্ঠা করে।
প্রাথমিক অবস্থায় পুরকৌশল, তড়িৎ, ইলেক্ট্রনিক ও যোগাযোগ প্রকৌশল, যন্ত্র প্রকৌশল এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও পরবর্তীতে অন্যান্য নতুন বিভাগ খোলা হয়।
২০০৮ সালের আগে এমআইএসটি (গওঝঞ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আগে শুধু সামরিক বাহিনীর অফিসারদের অংশগ্রহণ থাকলেও ২০০২ সাল থেকে বেসামরিক শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ পায়। এমআইএসটিতে বর্তমানে ৪টি অনুষদে ১২টি প্রকৌশল এবং স্থাপত্য বিভাগ রয়েছে।
প্রকৌশলে বিএসসি, এমএসসি/এম. ইঞ্জিনিয়ারিং, এম. ফিল. এবং পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে থাকে এমআইএসটি (গওঝঞ)। প্রকৌশল শিক্ষায় উৎকর্ষ সাধনের জন্য অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি এবং গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকৌশলী শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত করার লক্ষ্যে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলোজির (গওঝঞ) পাশাপাশি ২০১৪ সালে কুমিল্লা, সৈয়দপুর ও কাদিরাবাদ সেনানিবাসে ৩টি আর্মি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পেশায় দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করছে।
বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সংক্ষেপে বিএইউএসটি (ইঅটঝঞ) হলো খুলনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে খুলনায় ব্যতিক্রমধর্মী প্রযুক্তিনির্ভর বেসরকারি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়।
এছাড়াও ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে শিক্ষা প্রসারে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (অওইঅ) নামে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাভার ও সিলেট সেনানিবাসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (অওইঅ) বর্তমান বিশ্বে তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ মুক্তবাজার অর্থনীতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অবদান রাখছে।
এছাড়াও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চৌকস কর্মকর্তাগণের দক্ষ পরিচালনার ফলে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (ইকঝচ) দেশীয় গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে সুনাম অর্জন করছে।
দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য ‘সুস্বাস্থ্য উন্নয়নের হাতিয়ার’- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্ববাবধানে আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ (অঋগঈ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ২০১৩ সালে যশোর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রংপুর সেনানিবাসে ‘আমি মেডিক্যাল কলেজ’ যাত্রা শুরু করে। আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ (অঋগঈ) এবং আর্মি মেডিক্যাল কলেজ সশস্ত্র বাহিনীর আলাদা দুটি প্রতিষ্ঠান।
দুটি প্রতিষ্ঠান থেকেই সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির সন্তানদের চিকিৎসা শিক্ষা দেওয়া হয়। মেডিক্যাল কলেজসমূহে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীর পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা অধ্যয়ন করায় এই কলেজসমূহের সুনাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে সেবিকাদের ঘাটতির কথা বিবেচনায় এনে বাংলাদেশের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবাখাতে সুদক্ষ ও মানসম্পন্ন নার্স তৈরির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর ও বগুড়ায় ৬টি আর্মি নার্সিং কলেজে এ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে।
শিক্ষা বিস্তারে সেনাবাহিনীর ভূমিকায় যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় মিলেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা যুগোপযোগী আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষা বিস্তারে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও সুপরিকল্পিত পরিবেশে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা হয় বলে তা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনুকরণীয় মাত্রা যোগ করেছে।
বর্তমানে প্রায় অর্ধকোটি মানুষ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ অর্জন করেছে। সেনাবাহিনীর আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ আরও গতিশীল ও বেগবান করার জন্য আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে জ্ঞান অর্জন করে ছাত্র-ছাত্রীরা দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি করেছে।
শিক্ষা বিস্তারে সেনাবাহিনীর অবদান বাংলাদেশের সকল শ্রেণির নাগরিকের কাছে প্রশংসিত। সেনাবাহিনীর নিয়ম-শৃঙ্খলা, সুষ্ঠু পরিবেশ, যুগোপযোগী পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে যথাযথ তদারকির পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকের আন্তরিকতা এবং নিষ্ঠার কারণে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতির নিকট এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
লেখক : সেনা কর্মকর্তা