ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

মা ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি

-

প্রকাশিত: ২০:৪১, ৮ এপ্রিল ২০২৫

মা ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি

সম্পাদকীয়

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস-২০২৫ উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এবারের নির্ধারিত প্রতিপাদ্যের আলোকে বাংলাদেশের অবহেলিত মা ও শিশু মৃত্যুর বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। সংস্থাটির এবারের সেøাগান হলোÑ ‘জন্ম থেকে সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করেছে, যা আশাব্যঞ্জক।

তবে  যেটি দুঃখজনক তা হলো, দেশে বিভিন্ন সময়ে সরকারের নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও গত দুই দশকে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবার অগ্রগতি আপাতত থমকে আছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নবজাতক ও মাতৃ মৃত্যু অবস্থান করছে একই জায়গায়। 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ১ লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ১২৩ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এ হার ২০২০ সাল থেকে একই অবস্থানে রয়েছে। ২০২৩ সালে প্রতি ১ হাজার জীবিত শিশুর জন্মের পর মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। ২০২১ সালে প্রতি হাজার নবজাতকের মধ্যে মারা গেছে ২২ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) পুরোনে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাতৃ মৃত্যুর হার ৭০-এর নিচে এবং নবজাতকের মৃত্যুর হার নামিয়ে আনতে হবে ১২ জনের নিচে। 
এর অবশ্য নানাবিধ কারণ রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, এখন পর্যন্ত অনেক হাসপাতালে মিডওয়াইফ নেই, ডাক্তার তো দূরের কথা। অনেক ক্ষেত্রে সংকটাপন্ন প্রসূতিকে হাসপাতালে নেওয়ার মতো অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায় না। জরুরি ওষুধপত্র এবং আনুষঙ্গিক সরঞ্জামের অভাব প্রকট।

নানা সমস্যা-সংকটে সরকারি হাসপাতালে ৪৮ শতাংশ মাতৃমৃত্যু হচ্ছে। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যাচ্ছে ১৯ শতাংশ প্রসূতি। সর্বোপরি ৪৭ শতাংশ প্রসূতি প্রসব পরবর্তী সেবা পান না অথবা দেন না। তবে সার্বিক স্বাস্থ্য সেবার পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন দেশের সব উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রায় সব চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে  দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

এটি বাস্তবায়ন হলে তৃণমূল পর্যায়ে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ অস্ত্রোপচারÑ প্রায় সবই বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করতে বলেছে কমিশন। 
দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে দৈনন্দিন সুসম খাবারের অভাবে পুষ্টি ঘাটতির বিষয়টিও সুবিদিত। তবে নারী ও শিশুর মধ্যে তা আরও ব্যাপক এবং প্রকট। কর্তৃত্বপরায়ণ পুরুষ সদস্যের জন্য দৈনিক খাদ্যের একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকলেও বঞ্চিত থেকে যায় অথবা কম খেতে হয় পরিবারের নারী ও শিশুকে। অথচ তাদেরই বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন, বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও শিশুর।

দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পুষ্টি তথা ভিটামিনস ও মিনারেলসের অভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। একই সঙ্গে জিংকের ঘাটতিও। দেশের প্রায় ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ শিশু এবং ৪৫ দশমিক ৪০ শতাংশ নারী রয়েছে জিংকের ঘাটতিতে। বাস্তবে দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পুষ্টি জিংকসমৃদ্ধ চালে পূরণ করা সম্ভব। তাই জিংকসমৃদ্ধ চাল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি একে জনপ্রিয় ও সুলভ করে তোলার চেষ্টা চলছে দরিদ্র শ্রেণির জন্য। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছেন।

×