
সম্পাদকীয়
গাজায় ফিলিস্তিনিদের চলমান ধ্বংসযজ্ঞ ও প্রাণহানির প্রতিবাদে বৈশ্বিক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি সংগঠন নিউইয়র্ক হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন এবং ডক্টর্স অ্যাগেইন্সট জেনোসাইড। সোমবার নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়ের সামনে স্থানীয় কর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধ তথা গণহত্যার বিরুদ্ধে বৈশি^ক ধর্মঘটের ডাক দেওয়া একটি অভিনব প্রতিবাদ। এর তাৎপর্য গভীর ও সুদূরপ্রসারী। এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিশ^বাসী আবারও জানিয়ে দিল কোনো দেশেই কোনো গণহত্যা চলবে না এবং হত্যাযজ্ঞ চালানো দেশটিকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন তাদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে লিখেছে, গাজায় গণহত্যা বন্ধে আমরা বৈশ্বিক ধর্মঘটের আহ্বান জানাচ্ছি।
এই উদ্দেশ্য সফল করতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থল বন্ধ থাকবে। পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সময়। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের দিকে ইঙ্গিত করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ব এখন নবজাতক ও মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনেক সচেতন। অথচ গাজাবাসী জীবন ধারণের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মার্কিন বোমার আঘাতে হাসপাতাল গুঁড়িয়ে যাচ্ছে। অগণিত মা ও শিশু সাধারণ যতেœর অভাবে এবং বিস্ফোরণের আঘাতে মৃত্যুবরণ করছে।
গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর চলমান বর্বরতার প্রতিবাদে এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে সোমবার বাংলাদেশের রাজধানীসহ সারাদেশে সাধারণ পালিত হয়েছে ধর্মঘট। গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিশ্বব্যাপী গড়ে ওঠা আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ‘নো ওয়ার্ক, নো স্কুল’ কর্মসূচি সফল করতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়।
রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য ও অপরাজেয় বাংলার সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘বয়কট ট্রাম্প, সেভ ফিলিস্তিন’, ‘বয়কট ইউএসএ’ লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
ঘৃণা ও ক্রোধের বশবর্তী হয়ে গাজার নিরস্ত্র, নিরপরাধ মানুষকে পরিকল্পিতভাবে নিশ্চিহ্ন করার জন্য গুলি-বোমা দিয়ে এবং সুকৌশলে শিশু-নারী-বয়োবৃদ্ধসহ পুরুষদের হত্যা করা হচ্ছে। এটা ভয়ংকরতম অপরাধ। এটাই জেনোসাইড বা গণহত্যা। এই গণহত্যাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বাইরে বৃহত্তর প্রেক্ষিতে দেখা হচ্ছে।
তাই বিশ্বের ইহুদিসহ খ্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও অপরাপর ধর্মের মানুষ গাজার হত্যাকাণ্ড নিয়ে কাঁদছে। জ¦লে উঠেছে প্রতিবাদে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের মাসের পর মাসব্যাপী হামলায় হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের অপমৃত্যু ঘটেছে। নতুন করে আবারও হামলা চলছে। ইসরাইলের প্রধান সমর্থক ও অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই বিভিন্ন সময়ে এই হত্যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছে।
প্রধানত শিক্ষার্থীরাই এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে এবং বিশ^বাসী দেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অত্যন্ত কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে এই বিক্ষোভ রুখতে। চলতি এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে এখন গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে বিশে^র বহু দেশ। এই বৃহত্তর প্রতিবাদই হত্যা বন্ধে অন্যতম আশার আলো।
এটা স্পষ্ট যে, বর্তমান প্রজন্ম যুদ্ধ ও সংঘাত চায় না। মানবতাবিরোধী কর্মকা-কে তারা সমর্থন করে না। এখানেই পৃথিবীব্যাপী ভরসার জায়গা। বিশ^ব্যাপী শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা ও প্রভাবে যদি সার্বিকভাবে তরুণ ও নবীনরা যে কোনো ধ্বংসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, তাহলে কোনো বিশ^মোড়লের আর সাহস হবে না হীন গোষ্ঠীস্বার্থের কারণে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করার। বিশ^শান্তি নিহিত রয়েছে এই জায়গাটিতেই।