ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

ইসরাইলি নৃশংসতা ভোলার নয়

সামিহা তাসনিম

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ৮ এপ্রিল ২০২৫

ইসরাইলি নৃশংসতা ভোলার নয়

ফিলিস্তিনের গাজা শহর আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন, যেন এক মৃত্যু উপত্যকা। দূরদূরান্ত যেদিকেই চোখ যায় শুধুই ধ্বংসস্তূপ। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় যে ইসরাইলে হামলার সূচনা হয়, তা এখনও চলমান। যেই হামলার নৃশংসতার সবচেয়ে বড় শিকার হয়েছে শিশুরা।

এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজায় প্রায় ১৯ হাজার শিশু শহীদ হয়েছে। নিহত শিশুদের মধ্যে ২৭৪টি নবজাতক আর এক বছরের কম বয়সী ৮৭৪ শিশু রয়েছে। হামলার পাশাপাশি উপত্যকাটিতে ঠান্ডায় জমে ১৭ এবং ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে ৫২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

মা-বাবা হারিয়ে এতিম হয়েছে ৩৯ হাজার শিশু। আধুনিক সময়ে সবচেয়ে বৃহত্তর এতিমখানা  এখন গাজায়। পিতৃহারা, মাতৃহারা, পরিবারহারা শিশুরা যেন সর্বকালের নিকৃষ্ট শৈশব কাটাচ্ছে।

একটু খাবার পানির খোঁজে, একটু আশ্রয়ের খোঁজে দিক্বিদিক ছোটাছুটি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে অবশেষে মৃত্যুর কামনা করা যেন বার্তা দেয়। এমন নৃশংসতা শেষ কবে দেখেছিলো বিশ্ববাসী।
আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তা, মুসলিম বিশ্বের প্রধানদের মৌনতা আর বিশ্ববাসীর নিরব দর্শকের ভূমিকা ইসরায়েল আগ্রাসন ও দখলদারিতাকে আরও প্রশয় দিচ্ছে। চলতি বছরের ২ মার্চের পর থেকে কোনো প্রকার খাবারসহায়তাও আর প্রবেশ করেনি গাজায়।

বিশুদ্ধ খাবার ও পানির সংকটের তীব্রতা চরমে। যুদ্ধবিরতি ভেঙে উগ্র হামলার পাশাপাশি ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দিয়ে এবার নেতানিয়াহু সরকার সর্বোচ্চ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডেরও সীমা অতিক্রম করেছে। শুধু তাই নয় হামলার পাশাপাশি চলছে দখলদারিতাও।

রাফা ও খান ইউনিসে চলছে স্থল অভিযান। হাসপাতাল-ক্লিনিক-অ্যাম্বুলেন্সকে কেন্দ্র করে ক্রমাগত হামলা চালিয়ে একের পর এক যুদ্ধবিরোধী ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ইসরাইলে সেনারা। তবুও খাদ্য, পানি, চিকিৎসা জন্য নয় এখন বাসিন্দারা ছুটছে অক্সিজেনের অভাবে। গত ১৭ মাসে ১ লাখ টন বোমা বিস্ফোরণে গাজা এখন প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়েছে।

স্থানীয় সাংবাদিকসহ আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমকর্মীদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারন গাজার বাতাস আজ একটুও নিরাপদ নয়। আর এদিকে ইসরায়েলকে পূর্ণসমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানায় আনার ও ফিলিস্তিনিদের নিজ উপত্যকা থেকে বিতাড়িত করার কথা বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এই সর্বাত্মক সমর্থন যেন প্রমান করে দেয় এটি কোনো যুদ্ধ নয়, বরং পরিকল্পিত নরকীয় হত্যাযজ্ঞ। যেই হত্যাযজ্ঞে অন্তত ৫০ হাজার ৬৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ক্ষমতার লোভে ও দখলদারিতার আকাক্সক্ষায় রাজনীতিবিদদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নজির বিশ্বে এর আগে থাকলেও ত্রান সামগ্রীর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে, শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপে, ড্রোন দিয়ে, দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দিনের পর দিন সাধারন মানুষের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞ ইতিহাসে দুর্লভ।

আর পুরো বিশ্বের মৌনতা যেন গাজাকে আরো একবার হত্যা করলো। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে বোমার আঘাতে মানুষের শরীর কয়েক তলা ভবনের সমান ওপরে ছিটকে পড়তে দেখা গেছে। ইসরায়েলি এমন নৃশংসতার সাক্ষী হয়ে থাকলো যেনো গাজার আকাশও।
তবু ইতিহাস থেকে গাজাকে মুছে ফেলা এত সহজ নয়। পুরো বিশ্বকে সাক্ষী রেখে চলমান এই নৃশংসতা যখন দ্বিগুণ হয়ে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রেই ফিরে আসবে। তখন গাজাকে আবার স্মরন করা হবে, যখনই পৃথিবীতে মজলুমদের ওপর হওয়া জুলুমের কথা উঠবে হবে তখন গাজাকে স্মরন করা হবে।

যখন নেতানিয়াহু ও ট্রাম্পের মত সরকারের ভাগ্যবিপর্যয় ঘটবে তখন গাজাকে স্মরন করা হবে। আর যখন মাতৃভূমি নাকি মৃত্যু প্রশ্নে আপস করা হবে না তখন গাজাবাসীদের স্মরণ করা হবে। ততদিন পর্যন্ত গাজাকে হৃদয়ে ধারণ করে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রের মত হত্যাকাণ্ড চালনাকারীদের সর্বাত্মক বিরোধিতা করে যেতে হবে।

আর মুসলিম বিশ্বের প্রধানদের নিরবতা যেন সাক্ষী হয়ে থাকবে ইতিহাসের সর্বোচ্চ কাপুরুষতায়। তবু প্রশ্ন থেকে যাবে, একদিন হয়তো ফিলিস্তিনের উপত্যকা স্বাধীন হবে। তবে সেদিন কী আর কোনো ফিলিস্তিনি সেখানে থাকবে?
লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

 

কুতুবে রব্বানী

×