ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ৭ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকার দিনরাত

অবশেষে চেনারূপে ফিরতে শুরু করেছে ঢাকা

অবশেষে চেনারূপে ফিরতে শুরু করেছে ঢাকা। চেনা রূপটা কি অপরূপ? মোটেই না। আমরা কাব্য করে বলছি বটে, ঢাকায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরছে। আসলেই কি প্রাণ-চঞ্চলতা, নাকি প্রাণ হাঁসফাঁস! ধুলো ধোয়া আর বিবিধ দূষণে ভারাক্রান্ত রাজধানীর নরকের দিন। সাময়িকভাবে মানুষ কমলে রাস্তাঘাট ফাঁকা ফাঁকা লাগে, কিন্তু উঁচু উঁচু দালানকোঠা তো থিতু থাকে। সড়কে যানজট কমে, কিন্তু কমে কি বায়ুদূষণ?

উত্তপ্ত এপ্রিল
শুরু হয়ে গেছে এপ্রিল। এপ্রিলের হাঁসফাঁস গরমে শনিবার সন্ধ্যায় হলো একপসলা বৃষ্টি ও ঝড়, পরদিন রোববার আবারও, তবে একটু রাত করে। বসন্ত ফুরোবে, গ্রীষ্মের দাপট প্রকৃতিতে এনে দেবে পরিবর্তন। সেই সঙ্গে বহু সংবেদনশীল মানুষের মনের গভীরেও অজ্ঞাত শুষ্কতা এসে ভর করবে। বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়ট তাঁর ওয়েস্ট ল্যান্ড (পোড়ো জমি) কবিতায় এপ্রিলকে ক্রুরতম মাস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এপ্রিল নিয়ে বাংলার কবিরাও পঙ্ক্তি রচনা করেছেন। মাত্রাবৃত্তে রচিত ‘এপ্রিল’ কবিতার ক’টি লাইন : ‘আবার এপ্রিল!- দুপুর নির্মম, বিকেল বরাবর চুলোর তন্দুর/বিদায় বসন্ত, দেরাজে চাপা থাক সুবাস সুখকর, পত্র অপঠিত/স্বপ্ন অগঠিত ঝিমোক সিঁড়িঘরে, বাতাস অভিজাত, উদাস স্পর্ধিত/টবের সবুজাভা ক্রমশ ম্রিয়মাণ, সন্ধ্যা স্নানার্থী, তারারা আরো দূর...।’
এ তো সবারই জানা যে, বোশেখ আসার আগে কালবৈশাখী হবেÑ এ বাধাধরা নিয়ম; আর রাজধানীও খানিকটা বিপর্যস্ত হবে। কালবৈশাখী তো কেবল ঝড়-বাদলা নয়, নয় বড় বড় মুক্তদানার মতো শিলার পতন, বরফ ভেবে যা খেয়ে ফেলে আলাভোলা কিশোরী। এইবার ঢাকায় কালবৈশাখীর অর্থ কিছুটা বদলে যাচ্ছে কি? তুমুল ঝড় কোথায়? শুধু মেঘের ঢাকঢোলই সার। 

তীব্র গরমে বাড়ছে অসুখ
ঈদের ক’দিন আগে থেকেই ঢাকায় তীব্র গরম। নিকটাত্মীয়দের কারও কারও ঈদ হয়নি, ঘরেই থাকতে হয়েছে। জ¦র, এমনকি পক্সও হয়েছে। যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা নানা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ভোগেন। বিশেষ করে, শিশু ও বয়স্করা এর শিকার।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, প্রকৃতিতে তাপমাত্রার পরিবর্তনের সময়ে সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, সিওপিডি, টনসিলাইটিস, ফ্যারিঞ্জাইটিস, সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত হয় মানুষ। দেশজুড়ে হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর। তীব্র গরমের সময়কে মোকাবিলা করতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডাক্তাররা বলেন, তীব্র গরমে মানুষ বাইরে যখন যায়, তখন ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়; ফলে শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি হয় এবং লবণের ঘাটতি দেখা দেয়। এতে পিপাসা বেশি পায়, মাথা ঘোরে, শরীর অবসন্ন লাগে, রক্তচাপ কমে যায় এবং তীব্র গরমে ‘হিট স্ট্রোক’ নামে একটি সমস্যা হয়, মানুষ এ সময় জ্ঞান হারাতে পারে। গরমের কারণে মানুষ অস্বস্তি বোধ করে, কর্ম-উদ্দীপনা কমে যায় বা কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, এক ধরনের অবসাদ তৈরি হয়।

এর বাইরে হঠাৎ গরম থেকে ঘরে এসে ঠান্ডা এয়ারকন্ডিশন রুমে বা ঠান্ডা পানি খেলে, শরীরের তাপমাত্রার হঠাৎ পরির্তন হয়। এই পরিবর্তনের কারণে শরীরের ভেতরে বাস করা সুবিধাবাদী যে রোগ জীবাণুগুলো রয়েছে তা সক্রিয় হয়ে ওঠে, যে কারণে গলাব্যথা, ফ্যারিঞ্জাইটিস, জ্বর কাশি হয়। তাই এ সময়টায় বেশি সাবধান থাকতে হবে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কজনদের ক্ষেত্রে।

সন্জীদা খাতুন স্মরণাঞ্জলি 
এই ঢাকা শহরে একজন সন্জীদা খাতুন ছিলেন বলেই সদ্যস্বাধীন দেশে শিক্ষিত সমাজের সংস্কৃতিচর্চায় নতুন প্রাণ ও প্রেরণার প্রাপ্তি ঘটেছিল। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট’-এর ভূমিকা ঐতিহাসিক। দেশব্যাপী রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রসারের জন্য তিনি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের বাণী বহুজনের কাছেই যথার্থভাবে বোধগম্য নয়। অনেক শিল্পীও না বুঝেই গান করেন। ড. সন্জীদার লেখা ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের ভাবসম্পদ’ গানের ভাব ও বক্তব্য বোঝার জন্য এক অসামান্য গ্রন্থ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে তিনি প্রত্যাশিত অবদান রেখেছেন।  ‘বায়ান্ন সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। আবেদনপত্রের পেছনে নানান শর্ত লেখা রয়েছে। তার একটি, মাথায় ঘোমটা দিয়ে চলা বাধ্যতামূলক। আরও ছিল ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতে হলে প্রক্টরের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে বলতে হবে।

কথা না হয় না-ই বললাম কিন্তু ঘোমটা? উঠতি বয়সের নবজাগ্রত সম্মান আর স্বাতন্ত্র্যবোধের দরুন মনের ভাব হয়েছিল যে, সেই পাকিস্তান আমলে কলেজের প্রথম ঘণ্টা পড়তেই লাইনে দাঁড়িয়ে হালিমা আপার সঙ্গে গলা মিলিয়ে সুরা পড়ার সময়েও ঘোমটা দিতাম না। তবে মাথানত করে শ্রদ্ধাভরে নীরব থাকতাম ঠিকই।

অবাক বিষয়, শিক্ষকরা আমাকে এ নিয়ে কোন প্রশ্ন করেননি। ঘোমটা দেইনি কখনও।’ কথাগুলো লিখেছেন সন্জীদা খাতুন তাঁর ‘সহজ কঠিন দ্বন্দ্বে ছন্দে’ বইতে। সংস্কৃতি জগতে নববসন্ত এনে দেয়া এই প্রাজ্ঞজন জন্মগ্রহণ করেছিলেন বসন্তেই। তাঁর প্রয়াণও হলো বসন্তে।
মাত্র কদিন অশ্রুসজল চোখে হাতে ফুল নিয়ে সন্জীদা খাতুনের শেষ বিদায়ে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল। জ্যেষ্ঠ শিল্পীরা গাইলেন, ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে’, ‘কান্না হাসির দোল দোলানো’। গান আর ফুলেল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শেষবিদায় জানালেন সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক, শিল্পী, ছায়ানটের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মীসহ হাজার মানুষ।

ছায়ানট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে কফিন নেওয়া হয়। এরপর কফিন নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে, সেখানে বিকেল পর্যন্ত তাঁকে শেষবিদায় জানান সর্বস্তরের মানুষ। তাঁরই চাওয়া অনুযায়ী অন্তিম বিদায় জানানো, বিশেষ করে গানে-গানে বিদায় জানানো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বহুজন বিরূপ সমালোচনা করেন।

এটি প্রত্যাশিত ছিল না। এক বছরেরও বেশি সময় আগে শিল্পী সাদী মহম্মদের অন্তিম বিদায়েও শিল্পীরা রবীন্দ্রসংগীত গেয়েছিলেন। তখন কিন্তু কোথাও কোনো বিরূপ মন্তব্যর প্রকাশ ঘটেনি। এ থেকে বোঝা যায় সমাজ ধীরে ধীরে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। 
শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে সন্জীদা খাতুনের জন্মদিন স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যদিও সংগত কারণেই সন্জীদা খাতুনের সদ্যপ্রয়াণে অনুষ্ঠানে শোকের আবহ ছিল। তাঁর প্রিয় সুর-বাণী-ছন্দের পরিবেশনা ও স্মৃতিচারণায় অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন।

পরিবারের ক’জন সদস্য কথা বলতে গিয়ে অশ্রুসংবরণ করতে পারেননি। সব মিলিয়ে অনুষ্ঠানে ভাবগাম্ভীর্য যেমন ছিল, তেমনি এদেশে ড. সন্জীদা খাতুনের মতো একজন মহীয়সীর জন্মলাভের কারণে গৌরব ও পরোক্ষ আনন্দবার্তাও ছিল। 

ছাদ বাগান, ছাদে সোলার সিস্টেম এবং ছাদ রেস্টুরেন্ট
ইউরোপের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন শহরের ভবনের ছাদে সোলার প্যানেলের পাশাপাশি ছাদবাগান গড়তে হাতে-কলমের গবেষণায় পেয়েছে আশানুরূপ ফল। সেসব গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু সমস্যা থাকলেও ছাদে বাগানের পাশাপাশি ৬০ বর্গমিটারের সোলার প্যানেল স্থাপন করলে তা থেকে বিদ্যুৎ এবং একটি পরিবারের প্রয়োজনীয় সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব।

সেই সঙ্গে তৈরি করা যাবে ফুলের বাগানও। ছাদবাগান ও সোলার প্যানেল পাশাপাশি করার উপায় হতে পারে দুটি। প্রথমটি হলো পারগোলা স্টাইল আর দ্বিতীয়টি সোলার প্যানেলের পাশাপাশি উদ্ভিদের চাষ।
ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করে তার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন উদ্ভিদের চাষাবাদ করা হয়। এই পদ্ধতি এখনো বেশ জনপ্রিয়। আলাদা করে কাঠামো তৈরি করার দরকার হয় না বলে এই পদ্ধতি তুলনামূলক সাশ্রয়ীও। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ছাদে সবুজের উপস্থিতি বেশি থাকার কারণে সোলার প্যানেলের ফটোভোল্টেইক টেকনোলজির কার্যকারিতা অনেকটাই বেড়ে যায়। এ ছাড়া ছাদে সরাসরি স্থাপন করার কারণে সোলার প্যানেল অনেকটাই মজবুত হয়।
ঢাকা মহানগরী নিয়ে নানা সময়ে আন্তর্জাতিক সমীক্ষা ও গবেষণায় নেতিবাচক চিত্র উঠে এসেছে। দূষিত বায়ুর শহর হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশে^র বসবাস-অযোগ্য শহরের তকমাও পেয়ে গেছে। পরিবেশগত নানা বিপদ ও ঝুঁকি রয়েছে এই শহরে বসবাসকারী নাগরিকদের। অধুনা মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর ঢাকায় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করছেন অনেকেই।

ভূমিকম্পের পরে উদ্ধার তৎপরতা নিয়ে নানা কথাও শোনা যাচ্ছে। বলাবাহুল্য সেখানে কোনো আশার আলো নেই। অতি জনঅধ্যুষিত ও গায়ে গা লাগা অনাধুনিক আবাসনের বাহুল্যের কারণে পুরান ঢাকা ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে কিনা সেটি নিয়ে আলোচনা আছে। এদিকে রোজার ঈদের আগে-পরে ঢাকায় অসহনীয় গরম পড়ছে, তাপমাত্রা ৩৭ পেরিয়ে যাচ্ছে।

এরকম একটা পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে গরম কমিয়ে নাগরিক জীবনে স্বস্তি আনার প্রসঙ্গ আলোচিত হচ্ছে। ঢাকায় বহুতল ভবনের ছড়াছড়ি। এসব ভবনের ছাদে বাগান গড়ে তোলা গেলে উষ্ণতা কমানো যায়; ভবনের ছাদে বাগান থাকলে তা আশপাশের এলাকার তাপমাত্রা কমাতে বড় ভূমিকা পালন করে। অথচ বছর বছর ছাদ-বাগানের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ছাদ রেস্তোরাঁ।

ইতোমধ্যে ভবনের ছাদে ২০০টির মতো রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার সংবাদ এসেছে গণমাধ্যমে। বলা দরকার, রাজধানীর বহুতল ভবনের ছাদে স্থাপিত রেস্তোরাঁর ৯৯ শতাংশই অননুমোদিত, রাজউকের পক্ষ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। ছাদে উচ্চ তাপে রান্না এবং প্লাস্টিক-জাতীয় দাহ্যবস্তু ব্যবহার করে সাজানোর কারণে সংশ্লিষ্ট ভবন ও এর আশপাশের ভবনে আগুন লাগা এবং তা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁঁকি রয়েছে। 

ঈদ অবকাশে ঢাকার বাতাস 
ঈদের সময় বিপুলসংখ্যক মানুষ ঢাকা থেকে বাইরে চলে যান। এ সময় কলকারখানা বন্ধ থাকে এবং যানবাহনের চলাচলও কমে যায়। ধারণা করা গিয়েছিল, এ সময় ঢাকাবাসী মানসম্পন্ন বায়ুতে নিশ্বাস নিতে পারবেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২ এপ্রিল কিছুটা ভালো ছিল বায়ুর মান, অর্থাৎ ৫১-এর নিচে।

এবার ঈদের ছুটির পাঁচ দিনের গড় বায়ুর মান (একিউআই) ছিল ১৫১। এটি ২০২৪ সালের রেকর্ড ১৯০-এর তুলনায় ভালো। যদিও তা নিরাপদ সীমার ওপরে। ২০১৬ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান এয়ার নাওÑ এর তথ্য বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
বায়ূদূষণ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সবুজ আচ্ছাদন তৈরি করতে হবে। শহরে যত বেশি গাছ লাগানো হবে, তত বেশি বায়ু নির্মল হবে। দ্বিতীয়ত, কলকারখানার ধোঁয়া বন্ধ করতে হবে। উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণকাজ করা যাবে না। সড়কে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা যাবে না। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নাগরিকদেরও সচেতন থাকতে হবে।

ঢাকা নিয়ে ভাবনা
নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আর্কিটেক্ট নবনীতা ইসলাম ভার্চুয়াল ভুবনে শুরু করেছেন ঢাকা নিয়ে মনোজ্ঞ তথ্যনিষ্ঠ যৌক্তিক আলোচনা। ‘ইসলামে নগর ভাবনা’ শীর্ষক পর্বে তিনি বলছেন: ‘ইসলামের আবির্ভাব যে মধ্যপ্রাচ্যে, সেখানকার নগরগুলো কেমন ছিল? ঢাকা শহর পরিচিত মসজিদের শহর নামে। এখানে আছে ৬ হাজারের বেশি মসজিদ। তাই কৌতূহল হয় ইসলামি দর্শন ও নগরভাবনা থেকে কী শেখার আছে ঢাকা শহরের। এ শহরের মুসলিমরা আমরা নিজের ধর্ম থেকে কি শিখি।’ 
ইসলাম একটি আধ্যাত্মিক ও সমাজভিত্তিক ধর্মব্যবস্থা। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ও হাদীসে বারবার মানবজাতিকে তার পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হতে সচেতন করা হয়েছে। মদিনায় পরিকল্পিত জনবসতি গড়ে তোলার বিষয়টি তিনি আধুনিক স্থাপত্য-দৃষ্টিভঙ্গি এবং ইসলামের ইতিহাসের আলোকে ব্যাখা করার প্রয়াস পেয়েছেন। নবনীতা বলছেন, ‘মহানবী (সাঃ) মদিনায় বসতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং সড়কের প্রস্থ কত হবে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা দেন।

অতিরিক্ত বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় উঁচু স্থাপনাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল, কেননা এটি আশেপাশের নিচু বাড়িগুলোয় আলো ও বাতাসের প্রবাহে বাধা দেয়। বসতি ও স্থাপনার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করা হয়েছিল প্রাকৃতিক ও এলাকাভিত্তিক নির্মাণ উপকরণ ব্যবহারে। ১৫০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত মদিনা শহরের নগরায়নে যেসব নীতি অনুসরণ করা হয়েছিল তা আজও আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক।

টেকসই নগর পরিকল্পনা বিশ্বব্যাপী চর্চিত বিষয়, যার মূলনীতিগুলো প্রথম ইসলামিক নীতিগুলোর সঙ্গে অত্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ।’ নবনীতা ইসলাম গত শতাব্দীতে ইসলামিক নগর পরিকল্পনায় কোরানের মূলনীতি অনুসরণে সাম্য সংহতি সম্প্রীতি ও শান্তি এসব অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রয়োগের কথা বলেছেন। ধর্মের এই মর্ম বা স্পিরিট অব ইসলাম সেটির প্রয়োগ ঢাকার জীবনে কোথায়?

তিনি প্রশ্ন তুলে বলছেন, ‘ইসলামের শিক্ষা হলো পরিচ্ছন্নতা। জনগোষ্ঠির ৯৯ শতাংশ মুসলমানের শহরে সেই পরিচ্ছন্নতা কোথায়, দূষণবিরোধী পরিকল্পনা কোথায়, পরিমিতি কোথায়। সমতা, ন্যায্যতা সম্প্রীতি কোথায়। এই ঢাকা শহর পরিকল্পনায় ও আচরণে কতোটা মানবিক এবং বৈষম্যহীন?’ 

০৬ এপ্রিল ২০২৫

[email protected]

×