
সম্পাদকীয়
পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরে দীর্ঘদিন পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছু কমায় নিত্যপণ্যের বাজার ছিল মোটামুটি স্থিতিশীল। বিশেষ করে শাক-সবজি, তরিতরকারি এবং মাছ-মুরগির মাংস-ডিম-দুধসহ কিছু নিত্যপণ্যের দাম ছিল সাধারণ মানুষের নাগালে। তবে চাল ও ভোজ্যতেলের বাজারে বিদ্যমান ছিল অস্থিরতা ও দামের উল্লল্ফন, যা এখনো চলমান।
সরকারের হস্তক্ষেপে ও শুল্ক কর কমানোয় ভোজ্যতেলের দাম কিছু নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ভোজ্যতেল আমদানিকারকরা আবারও তেলের দাম বাড়ানোর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এর জন্য মাঝেমধ্যেই বোতলজাত সয়াবিনসহ তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে বাজারে। অথচ এবারে চাল ও ভোজ্যতেলের এলসি খোলা হয়েছে অনেক বেশি। আমদানিও পর্যাপ্ত।
অন্যদিকে চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে গত প্রায় ১ বছর ধরে, যা ভোগাচ্ছে সাধারণ মানুষকে। অথচ দেশে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দফায় দফায় আমদানি বেড়েছে চালের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার সমমূল্যের চাল আমদানি হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০৫ শতাংশ বেশি।
বাস্তবে বাজারে এর তেমন কোনো প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, অর্থবছরের শেষ ৬ মাসে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে বাজারে প্রতিকেজি মোটা চাল ৬০ টাকা এবং সরু চাল সর্বনিম্ন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, চলতি বোরো মৌসুমে নতুন ধান বাজারে না আসা পর্যন্ত চালের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তবে খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা সম্প্রতি হাওড়ে বোরোর ফলন পরিদর্শনকালে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আশঙ্কা নেই। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক।
বাঙালির প্রধান খাদ্যপণ্য চালের ওপর প্রায় সব রকম শুল্ককর প্রত্যাহার করা হলেও এর আদৌ কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি চালের দাম বেড়েছে ৮ থেকে ১০ টাকা। এর ফলে খুব কষ্টে আছেন গরিব ও নি¤œআয়ের মানুষ। চালের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে খুচরা চাল ব্যবসায়ীরাও ক্ষুব্ধ। উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে চালের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে চাল আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক-করাদি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়।
বর্তমানে মাত্র দুই শতাংশ অগ্রিম আয়কর ব্যতীত চাল আমদানিতে অন্য কোনো শুল্ক দিতে হয় না। ব্যাংকও কিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরের হিসেবে, এর ফলে প্রতিকেজি চাল আমদানি ব্যয় ২৫ দশমিক ৪৪ টাকা কমার কথা। ফলে, চালের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে এবং নিশ্চিত হবে খাদ্য নিরাপত্তা।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের মতে, চাল ব্যবসায়ীদের ফ্রিস্টাইল মনোভাবের কারণে চালের দাম কমছে না কিছুতেই। কৃষক নিজস্ব খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ধান-চাল মজুত করেছেন। দ্বিতীয়ত, বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানিসহ আড়তদার ও চাতাল মালিকরা চালের বিপুল মজুত গড়ে তুলেছেন অতি মুনাফার আশায়। তৃতীয়ত, সচ্ছল ভোক্তা শ্রেণিও বেশি পরিমাণে খাদ্যপণ্য কিনছেন দাম বাড়ার আশঙ্কায়।
অথচ সরকারের চাল ও গমের মজুত সন্তোষজনক। প্রধানত ব্যবসায়ী, মিল মালিক, আড়তদার, কয়েকটি বড় কোম্পানি ও আমদানিকারকদের কারসাজিতে চালসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না কিছুতেই। সে অবস্থায় আমদানিকারকসহ খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের উচিত, জনগণের স্বার্থে সরকারকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করে চালের দাম যুক্তিযুক্ত পর্যায়ে রাখা।