
সম্পাদকীয়
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২-৪ এপ্রিল পর্যন্ত থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্ককে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোট বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে দেশে ফিরে এসেছেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিমসটেকের পরবর্তী চেয়ারম্যানশিপ গ্রহণ করেছে।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদের স্বপ্ন লালন করে আসছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি অঞ্চলের স্বপ্ন দেখি যেখানে সব দেশ ও জনগোষ্ঠীর ন্যায্যতা, পারস্পরিক সম্মান, পারস্পরিক স্বার্থ ও যৌথ কল্যাণের ভিত্তিতে সম্পৃক্ত হতে পারে’। উল্লেখ্য, বিমসটেক অঞ্চল বিশ্ব জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশের আবাসস্থল, যেখানে বহু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান।
এই চ্যালেঞ্জগুলোকে সম্ভাবনা হিসেবে রূপান্তর করা গেলে সব দেশের জন্যই বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। বিমসটেক সচিবালয় হোস্টিং করার মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সংস্থার বিশাল সম্ভাবনাকে অর্থবহ উপায়ে কাজে লাগাতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে এর জন্য বিমসটেক সদস্য দেশগুলোকে পারস্পরিক স্বার্থ ও সবার কল্যাণে একযোগে কাজ করতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিমসটেক সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি সাইডলাইনে বিভিন্ন সময়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংকার্ন সিনাওয়াত্রা, শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হরিণী আমারাসুরিয়া, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় গণমাধ্যমে সবিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকটি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গত বছরের ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক টানাপোড়নের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এর মূলে রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার অধ্যাপক ইউনূসের প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনায় স্থান পেয়েছে শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ।
অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছে ঢাকা। অবশ্য এ বিষয়ে দিল্লির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। এর পাশাপাশি স্থান পেয়েছে সীমান্ত হত্যা, গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়ন, তিস্তা চুক্তি সইসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়।
ভারত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি তুলে ধরেছে এবং বাংলাদেশ আশ্বস্ত করে বলেছে যে, এমন যে কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে সরকার। নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে একটি গঠনমূলক ও জনগণকেন্দ্রিক সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা অন্তর্ভুক্তি ও গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের সুমহান সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত বাংলাদেশকে সর্বতোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তীও পালিত হয়েছে ইতোমধ্যে। সম্প্রতি বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ের পর শুরু হয়েছে বিবিআইএন কার্যক্রম। এর ফলে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালে আন্তঃবাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রভূত সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। তাই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক বজায় থাকাটাই সমীচীন। তবে এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিবেচনা হবে সমতা, ন্যায্যতা ও যথোচিত সম্মান। দু-দেশের সরকারপ্রধানের প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ সম্ভাবনার আশা জাগিয়েছে। এটি কম পাওয়ার নয়।