
বাংলাদেশ ও চীন অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি চুক্তি এবং ক্ল্যাসিক সাহিত্যের অনুবাদ ও প্রকাশনা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময় ও সহযোগিতা, সংবাদ বিনিময়, গণমাধ্যম, ক্রীড়া ও স্বাস্থ্য খাতে আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। বিনিয়োগ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর ঘোষণা, চীন শিল্প অর্থনৈতিক অঞ্চল শুরুর ঘোষণা, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর, রোবট ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণ এবং হৃদরোগ সার্জারি যানবাহন দানের বিষয়ে পাঁচটি ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ দেশে বিনিয়োগের জন্য চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার বেজিংয়ের ‘দ্য প্রেসিডেনশিয়াল’-এ চীনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক বিনিয়োগ সংলাপে চীনা বিয়োগকারীদের উদ্দেশে মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ব্যবসার সম্ভাবনার সুবিধা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।
শুক্রবার সকালে বেজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় চীনকে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। বাংলাদেশে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই অভ্যুত্থান ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের পথ সুগম করেছে। বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় আসীন। চীনের সঙ্গে রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিসহ (এফটিএ) আলোচনার জন্য নতুন পথ উন্মুক্ত। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের ঐতিহাসিক বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ককে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত করে। ওই সফরে দুই দেশ প্রায় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ২১টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এ পর্যন্ত চীন বাংলাদেশকে ২১টি সেতু, ১১টি মহাসড়ক নির্মাণে সহায়তা করেছে। এছাড়া ২৭টি জ্বালানি শক্তি ও বিদ্যুৎসহ অসংখ্য প্রকল্পে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে চীন।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারিত্ব দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা থেকেই গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনের ধারাবাহিক সমর্থনের কথা, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ্য। মিয়ানমারের গৃহহীন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সংকট সমাধানেও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করায় চীনের ভূমিকা রয়েছে। এসবই উভয় দেশের সম্পর্কের উষ্ণতার পরিধি ও পরিচয় তুলে ধরেছে। বাংলাদেশ-চীনের এই সম্পর্ক শুধু বাংলাদেশের জন্যই গড়ে ওঠেনি, বরং নানা কারণে চীনেরও স্বার্থ রয়েছে দুই দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণে চীনের সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মৈত্রী বন্ধনকে অটুট রাখার জন্য উভয় দেশের ইতিবাচক ভূমিকা বরাবরের মতো সমুন্নত থাকবে বলেই বিশ^াস। তিস্তা প্রকল্পে চীনের প্রতিষ্ঠানকে স্বাগত জানানো তাৎপর্যপূর্ণ। চীনে আম-কাঁঠাল-পেয়ারা রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হওয়া, গুরুত্বপূর্ণ। চীনের ২১০ কোটি ডলারের বিনিয়োগ-ঋণ ও অনুদানের প্রতিশ্রুতি সংস্কারমুখী বাংলাদেশের জন্য বিশেষ সুসংবাদ। ঈদের আগে প্রধান উপদেষ্টার চার দিনের চীন সফর বাংলাদেশের জন্য বড় সফলতার উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি করবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা।