
রমজান পবিত্রতা, সংযম ও শান্তির মাস। কিন্তু ২০২৫ সালের রমজানেও গাজায় সেই শান্তির ছিটেফোঁটাও নেই। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার মাঝেও মৃত্যুর মিছিল থামছে না। প্রতিবারের মতো এবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের শান্তির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হয়েছে। যুদ্ধবিরতির ঘোষণা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। বাস্তবে, গাজার রাস্তাগুলো রক্তে ভিজছে, শিশুরা মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ছে হাজারো স্বপ্ন। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপের মুখে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তবে গাজার আকাশে এখনো ড্রোনের গুঞ্জন, বোমার বিস্ফোরণ, আর্তচিৎকার থামেনি। সংঘাত বন্ধের নামে যেসব চুক্তি করা হয়, সেগুলো বারবারই ভেস্তে যাচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনীর দখলদার নীতি অব্যাহত থাকায় যুদ্ধবিরতির অর্থ হয়ে উঠেছে আরও টার্গেটেড হামলা, আরও নিরীহ মানুষের মৃত্যু। একদিকে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, অন্যদিকে ইসরাইলি বাহিনীর টার্গেটেড হামলায় প্রতিদিনই বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। মাত্র কয়েক সপ্তাহের স্বস্তি ভেঙে নতুন করে দুঃস্বপ্ন নেমে এসেছে ফিলিস্তিনিদের জীবনে। ধ্বংসস্তূপের মাঝে চলছিল রমজানের ইবাদত। কিন্তু যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে সেহরির সময় ইসরায়েলি বাহিনীর নজিরবিহীন এই হামলায় নিহত হয়েছে কয়েকশ’ মানুষ, তাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বিমান হামলার পাশাপাশি শুরু হয়েছে স্থল অভিযান। উত্তর ও দক্ষিণ গাজা খালি করতে লিফলেট ফেলছে ইসরাইল। প্রাণভয়ে হাজারো ফিলিস্তিনি নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করছে ইসরাইল ও হামাস। তবে গাজার মানুষ আবারও মৃত্যু আর অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে।
ইসরাইল গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর হামলার ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ অস্ত্র ব্যবহার করছে, যা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধের শামিল। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটিকে গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুললেও বাস্তবতা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা যেন এই ধ্বংসযজ্ঞকে আরও দীর্ঘায়িত করছে। গাজায় যা ঘটছে, তা কেবল একটি ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, এটি এক পরিকল্পিত গণহত্যা। এই সংকট নিরসনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, গাজার ওপর থেকে সমস্ত অবরোধ প্রত্যাহার করতে হবে এবং ফিলিস্তিনিদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের যথাযথ বিচার করতে হবে। তৃতীয়ত, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে হবে এবং জাতিসংঘকে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। জাতিসংঘ, ওআইসি এবং শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোকে মধ্যস্থতাকারী হয়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। মুসলিম দেশগুলোর উচিত কেবল নিন্দা জানানোর পরিবর্তে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ফিলিস্তিন সংকট শুধু রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়, এটি মানবতার চরম পরীক্ষা। নিরপরাধ শিশুদের রক্তে রঙিন হচ্ছে রমজানের রাত, অথচ বিশ্ব এখনো নীরব। যখন পুরো বিশ্ব নীরব থাকে, তখন অবিচারের শিকার মানুষের আর্তনাদ ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে থাকে। আজ সময় এসেছে ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ানোর। নিরপরাধ শিশুদের হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। গাজার মানুষের কান্না বিশ্ব মানবতার পরীক্ষা নিচ্ছে। আমরা কি নীরব দর্শক ছিলাম, নাকি মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম?Ñ ইতিহাস একদিন এই প্রশ্নের উত্তর চাইবে। শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবতার স্বার্থে অবিলম্বে এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। অবরোধ ভাঙুক, ফিলিস্তিনের মুক্তি আসুক।
মোসা. মিশকাতুল ইসলাম মুমু
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়