
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, যে ৭টি দেশ একই সঙ্গে যক্ষ্মা এবং ওষুধ প্রতিরোধে যক্ষ্মার প্রকোপ বেশি সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ। অন্য দেশগুলো হচ্ছে–অ্যাঙ্গোলা, দক্ষিণ কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি ও ভিয়েতনাম। দীর্ঘদিন থেকে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার পরও উন্নতি হচ্ছে না পরিস্থিতির। তদুপরি যক্ষ্মা রোগীর ১৭ শতাংশ এখন পর্যন্ত রয়েছে শনাক্তের বাইরে। এর কারণ প্রধানত যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর ফলে আন্তর্জাতিক উদরাময় সংস্থা আইসিডিডিআরবির ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। তদুপরি সংস্থাটিতে কর্মরত প্রায় ১ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতালে সেবাও পাওয়া যাচ্ছে না।
২০২৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক প্রতিবেদন বলেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর যক্ষ্মায় ৩ লাখ ৭৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। সম্প্রতি জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বলছে, গত বছর সারাদেশে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬২৪ জনের যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর অর্থ সন্দেহভাজন ৬৫ হাজার ৩৭৬ জন বা ১৭ শতাংশ যক্ষ্মা রোগী এখনো রয়েছে শনাক্তের বাইরে। চিকিৎসা না নেওয়ায় তারা যক্ষ্মা রোগ ছড়াতে সহায়তাও করছে। যদিও সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশী সহায়তা ছাড়াই তারা এগিয়ে নিয়ে যেতে চান যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, যেটি আশাব্যঞ্জক অবশ্যই।
আমাদের দেশে যক্ষ্মা এখনো একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। এতে শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে না, বরং এই রোগ যে কারোরই হতে পারে। সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসাই যক্ষ্মা থেকে রক্ষা করতে পারে মানুষকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ছয় হাজার যক্ষ্মারোগী মারা যায়। সারা বিশ্বে এ সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিউবারকিউলোসিস বা ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা। অনিয়মিত ওষুধ সেবন, পুরো ওষুধ সেবন না করার কারণে এ রোগের ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আশার কথা, বাংলাদেশ এমডিআর যক্ষ্মার দ্রুত চিকিৎসার ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ সফলতা অর্জন করেছে। এখন যক্ষ্মা প্রতিকার করা সম্ভব। যক্ষ্মা প্রতিরোধ করার জন্য ভ্যাকসিনও রয়েছে। সদ্যজাত বাচ্চাদের যক্ষ্মা প্রতিরোধের জন্য বিসিজি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ইপিআইয়ের অংশ হিসেবে এ টিকা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বয়সভেদে সঠিক মাত্রা, সঠিক সময়ে সঠিক ওষুধ সেবন করলে যক্ষ্মা সম্পূর্ণ নির্মূল সম্ভব। কিন্তু যক্ষ্মার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। রোগীকে একটানা ৬ মাস যক্ষ্মার চিকিৎসা নিতে হয়। যেটি দুঃখজনক তা হলো এ বিষয়ে রোগীরা তেমন গুরুত্ব দেন না। ফলে ঝুঁকিও বাড়ছে দিন দিন।