
ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। একমাস সিয়াম সাধনার পর যখন আকাশে শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ দেখা যায়, তখনই শুরু হয় উৎসবের আমেজ। ঈদের সকাল মানেই নতুন পোশাক, সুগন্ধি, তাকবিরের সুর আর নামাজ শেষে কোলাকুলি। রমজান আমাদের জীবনে নিয়ে আসে সংযমের পবিত্র বার্তা, সহমর্মিতার সুধা আর আত্মশুদ্ধির নির্মল আলো। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা ক্ষুধার্তের কষ্টকে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করি, ধৈর্য ও সহনশীলতার অমূল্য গুণ অর্জন করি। তাই ঈদ কেবল নিজেদের নতুন পোশাক ও সুস্বাদু খাবার কিংবা ব্যক্তিগত আনন্দ-উল্লাসের জন্য আসে না। এটি আসে আনন্দ বিলিয়ে দিতে, সবার মাঝে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে। পথশিশুর চোখে-মুখে নতুন পোশাকের উজ্জ্বলতা, অসহায় বৃদ্ধের মুখে এক চিলতে হাসি, কিংবা নিঃস্বের হাতে সামান্য ভালো খাবার তুলে দেওয়ার মাঝেই লুকিয়ে থাকে ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য। তেমনি আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের একটুখানি খোঁজখবর নেওয়া, মিষ্টি পাঠানো, কিংবা বন্ধু-বান্ধব ও আপনজনদের সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটানো ঈদের আনন্দ আরও গভীর করে তুলে। এছাড়াও ঈদ হতে পারে সকল হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার ও অভিমান ভুলে হৃদয়ের দরজা খুলে দেওয়ার এক অনন্য উপলক্ষ, যেখানে সম্পর্কের বাঁধন নতুন করে গড়ে ওঠে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির সৌরভে। তাইতো কবি কাজী নজরুলের ভাষায় বলতে হয়। ‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত দুশমন, হাত মিলাও হাতে...’।
কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং নগরায়ণের কারণে ঈদ উদযাপনের ধরনে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। অনেকেই ঈদের ছুটিতে পরিবারসহ দূরে কোথাও বেড়াতে যান, যা একদিকে ব্যক্তিগত আনন্দ বাড়ালেও সামাজিক বন্ধনকে কিছুটা শিথিল করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আগে ঈদের দিনে গ্রামের বাড়িতে সবাই একত্রিত হতেন, প্রতিবেশীরা একে অপরের বাড়িতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। কিন্তু এখন অনেকেই শহরে থাকেন এবং দূরে কোথাও ভ্রমণে চলে যান, ফলে এই ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়া এখন ঈদ উৎসবের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঈদের শুভেচ্ছা জানানো থেকে শুরু করে ঈদের ছবি শেয়ার করা, সবই এখন অনলাইনে হয়ে থাকে। ভার্চুয়াল সংযোগের এই যুগে দূরত্ব কমলেও, সরাসরি মেলামেশার উষ্ণতা কিছুটা যেন মলিন হয়ে গেছে। অথচ ঈদের প্রকৃত আনন্দ শুধু স্ক্রিনের আলোয় নয়, বরং কাছের মানুষদের সঙ্গে হাসি-আড্ডা, গল্প আর সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করাতেই লুকিয়ে থাকে। সত্যিকার অর্থে ঈদের প্রকৃত আনন্দ তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সবার সঙ্গে তা ভাগ করে নেওয়া হয়। তাই আসুন, এবারের ঈদের আনন্দ সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে দেই সমাজের প্রতিটি শ্রেণি- পেশার মানুষের মাঝে। পথশিশু, অসহায় বৃদ্ধ, নিঃস্ব মানুষ। সবার মুখে হাসি ফোটানোই হোক আমাদের এবারের ঈদের অঙ্গীকার। তাহলেই ঈদ হয়ে উঠবে প্রকৃত অর্থে আনন্দের উৎসব।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ