
ঈদ মানেই আনন্দ। ঈদ মানেই হৃদয়ের এক অন্যরকম অনুভূতি। ঈদ মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ আনন্দ আয়োজন। ঈদ সবার কাছে সমান গুরুত্ব বহন করে। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই শৈশবের ঈদ আনন্দের স্মৃতি রয়েছে। পরিবেশ, অবস্থা ও পরিবারভেদে এই স্মৃতিতে রয়েছে তারতম্য। আমি গ্রামের ছেলে। শহরের ঈদের চেয়ে গ্রামের ঈদে শৈশব কাটানো আমার হৃদয়ের অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। গ্রাম্য পরিবেশে শৈশবের ঈদুল ফিতরে যতটুকু বিনোদন ছিল আর বর্তমানে যা যা মনে আছে তা থেকেই লেখা।
নতুন জামা কেনা: ছোট বয়সে ঈদ আসলেই নতুন জামা কেনার জন্য পাগল হয়ে যেতাম। বাবার কাছে নতুন জামার বায়না ধরতাম। নতুন জামা ছাড়া যেন ঈদ হবেই না। বাবার সঙ্গে মার্কেটে যেতাম পছন্দমতো জামা কিনে নিয়ে আসতাম। খুব আনন্দ লাগত। ঈদের চাঁদ দেখা : ঈদের চাঁদ না দেখলে আনন্দে শতভাগ পূর্ণতা আসত না। ২৯ রোজার সন্ধ্যা হলেই ছুটে যেতাম চাঁদ দেখতে। চাঁদ দেখা নিশ্চিত হলে সবাই মিলে খুব আনন্দ করতাম। চাঁদ উঠেছে, চাঁদ উঠেছে বলে মিছিল বের করতাম। মেহেদি লাগানো ও আতশবাজি : ঈদের চাঁদ দেখে ঈদ নিশ্চিত করার পর আতশবাজির খেলায় মেতে উঠতাম বাড়ির সবাই। আর রাত জেগে হাতে মেহেদি লাগাতাম। মেহেদি লাগানোর জন্য বাড়ির আন্টি বা আপুদের কাছে বাড়ির সবাই গিয়ে ভিড় জমাতাম। সালামি নেওয়া: ঈদের দিন ঈদের সালামি পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতাম। তখন ১০ টাকা ২০ টাকা ও ৫০ টাকাসালামির প্রচলন ছিল। ঈদগাহে যাওয়ার আগেই বাবা, চাচা, দাদা, দাদি ও মায়ের কাছ থেকে সালামি পেতাম। সালামির কিছু টাকা খরচ করতাম আর কিছু টাকা মায়ের কাছে জমা রাখতাম। ঈদগাহে যাওয়া: ঈদের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতাম। বাড়ির সবাই মিলে বাড়ির আশপাশে ও আঙ্গিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতাম। এরপর গোসল করে নতুন কাপড় পরে বাড়ির সব সমবয়সীরা মিলে ঈদগাহের যেতাম। ঈদের সালাত শেষে সবাই মিলে ঈদের মেলাতে কেনাকাটা করতাম। কি যে মজা হতো।
ঘুরে বেড়ানো : ঈদের পর বিনোদন হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানো ছিল শৈশবের ঈদ আনন্দের একটি অংশ। ঈদের দিন বিকেল বেলা বাড়ির সমবয়সী সবাই নানান জায়গায় ঘুরতে যেতাম।
শৈশবের ঈদ আনন্দের স্মৃতি লিখতে গেলে এর যেন শেষ নেই। শৈশবের ঈদ খুব মনে পড়ে। এখন কেমন যেন সব আনন্দেই ভাটার টান। বাস্তবতার চাপে সব যেন হারিয়ে যাচ্ছে। মনে হয় ভালো ছিল আমাদের ছোটবেলা। ঈদ বয়ে আনুক শান্তি, সৌন্দর্য ও একত্রিত সমাজ।
বুড়িচং, কুমিল্লা থেকে