
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা, সেহরি, ইফতার, সালাত, কোরান তেলাওয়াত এর মধ্য দিয়ে পার হলো পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাস শেষে অসীম কল্যাণ, শান্তি, মুক্তি, সহমর্মিতা, সম্প্রীতি, সহানুভূতি আর ঐশী সাহায্য নিয়ে মুসলিম উম্মাহে নেমে এলো মহাখুশির ঈদ। ইচ্ছা অনিচ্ছায় রোজায় ভুল ক্রটি দ্বারা যে ক্ষতি হয় তার ক্ষতিপূরণ করা হয় কাফফারার মাধ্যমে। কাফফারার নাম সদকাতুল ফিতর। গরিব দুঃখীর মাঝে ফিতরা এবং যাকাত প্রদান একজন মহৎ ও সর্বোৎকৃষ্ট মুসলিমের আদর্শ। পারস্পরিক সহযোগিতা অন্তরে দয়ার অনুকম্পার বার্তা নিয়ে আসে এ দিনটি। এ দিনে রেষারেষি, হিংসা-বিদ্বেষ, জাত-কুল-মান ভুলে একে অপরের হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলায়। সকল প্রকার বৈষম্য ভুলে ঈদগাহ ময়দানে সমবেত হয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে। সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করাই ঈদের মূল বার্তা। সমাজের দরিদ্র, অসহায়, নিঃস্ব মানুষকে সহযোগিতা করা, নিজের কথা ভাবার আগে পড়শির কথা ভাবার মধ্যেই ঈদের মূল আনন্দ লুকায়িত। নিজের খুশি বা আনন্দ প্রতিটি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেওয়া, নিজের জন্য নতুন পোশাক কেনার সঙ্গে গরিব দুঃখীর জন্য নতুন পোশাক কেনা, নিজের আভিজাত্যপূর্ণ খাবারের সঙ্গে গরিব দুঃখীকে যুক্ত করার নামই হলো ঈদ। নতুন পোশাক, সুগন্ধি, হাস্যোজ্জ্বল মুখ, প্রিয়জনদের আলিঙ্গন, সুস্বাদু খাবার, উপহার, নিকটাত্মীয়দের বাড়িতে বেড়ানো সব মিলিয়ে খুশির জোয়ারে ভাসিয়ে দেয় ঈদ। আধুনিক এ যুগে, ইন্টারনেটের ব্যাপকতায়, স্মার্টফোনের দাপটে, আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনের কারণে ঈদ আনন্দের ধরন পাল্টেছে। সশরীরে নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে কোলাকুলি, মুসাফাহ, রঙিন ঈদকার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা বিনিময় অনেক কমে গিয়েছে। স্মার্টফোনের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমুর ঝলসে ওঠা ইমেজ দিয়েই চলছে ঈদ আনন্দ আর শুভেচ্ছা বিনিময়। আনন্দ বিনিময়ের ধরন পাল্টালেও বিশ্বব্যাপী খুশির প্লাবনে ভাসায় ঈদ। আসলে কি তাই? ঈদ মানে কি খুশি? ঈদের চাঁদ কি সবার মাঝে সমানভাবে আলো ছড়ায়? না। বিশ্ব মুসলিম যখন ঈদের আনন্দের জোয়ারে ভাসছে তখন ফিলিস্তিনি মুসলিমদের মাঝে আনন্দের রেশমাত্র নেই। তাদের মাঝে রোজা ছিল কিন্তু ইফতার ছিল না, তারাবি ছিল, সেহরি ছিল না। ইসরাইলের নির্মমতায় প্রতিনিয়ত মরছে মানুষ। নেই খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান। ভুখা, নির্ঘুম রক্তাক্ত দেহে খোলা আকাশের নিচ মানবেতর জীবন পার করছে। স্বজন হারানোর আর্তনাদ, বুক ভরা হাহাকার, সন্তানহারা মায়ের করুণ বিলাপ, শোকাহত নারীর বোবাকান্না, অনাহারে থাকা শিশুদের আর্তচিৎকার আজ ফিলিস্তিনের আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে। ঈদের আনন্দে আমরা যেন ভুলে না যাই শরণার্থী, অনাথ, দুঃখী নির্যাতিত, অসহায় মানুষগুলোর কথা। প্রার্থনায় জোড়া হাত তুলে দোয়া মাগি ‘হে দুজাহানের মালিক, বিশ্ব মুসলিমকে শান্তি দাও, শান্তি দাও বিশ্বের সকল মানুষকে।
কিশোরগঞ্জ থেকে