ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৫ চৈত্র ১৪৩১

ঈদের সেকাল একাল

কাজি সুমাইয়া

প্রকাশিত: ২০:১৯, ২৬ মার্চ ২০২৫

ঈদের সেকাল একাল

ছবি : সংগৃহীত

ঈদ মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য আনন্দের বার্তা নিয়ে আসে। এই দিনে সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ,  প্রেম এবং সংহতির বার্তা। তবে বিগত প্রজন্মের ঈদগুলোর সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের ঈদে যে কিছু পার্থক্য এসেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঈদের আনন্দের গতিপথে একাধিক পরিবর্তন এসেছে, যা দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় আগের ঈদ আর বর্তমান ঈদের মধ্যে একটি বড় ব্যবধান তৈরি হয়েছে। আগে ঈদের আনন্দ শুরু হতো নতুন চাঁদ  দেখার মাধ্যমে। সবাই একসঙ্গে ঈদের নতুন চাঁদ  দেখার পর একে অপরকে জানাতো। ‘চাঁদ উঠেছে, চাঁদ উঠেছে!’ এই দৃশ্য ছিল ঈদের অন্যতম স্মরণীয় অংশ। তখন পাড়ায়-পড়শিরা একত্রে ঈদের নামাজে অংশ নিতো এবং নামাজের পর কোলাকুলি করে সবাই একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতো। বাড়ির নারী সদস্যরা ফজরের নামাজ পড়ে ঈদের  সেমাই, জর্দা তৈরি করতেন, আর পুরুষেরা সেমাই  খেয়ে নামাজে যেতেন। শিশুরাও নতুন জামা পরে বড়দের সঙ্গে ঈদের নামাজে অংশ নিত। নামাজ  শেষে সবাই হাসিমুখে একে অপরের সঙ্গে কথা বলতো এবং পাড়া-প্রতিবেশী সবাই মিলেমিশে ঈদের আনন্দে মেতে উঠতো। শিশুদের মধ্যে সালামি গ্রহণের এক উৎসব তৈরি হতো। কে কত সালামি পাবে, তা নিয়ে ছোটদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকতো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে।  বর্তমানে ঈদের  সেই আগের আনন্দ নেই। এখন ঈদের শুরু হয়  মোবাইলে চাঁদের ছবি শেয়ার করে বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে। ঈদের নামাজও যেন শুধু একটা আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গেছে, যেটি সারা বিশ্বে একইভাবে পালিত হয়। নামাজের পরের আনন্দ,  কোলাকুলি এবং খোঁজখবর নেওয়ার ঐতিহ্য যেন  কোথাও হারিয়ে গেছে। শিশুদের সেই আনন্দ আর  নেই, তারা এখন মোবাইল ফোনে গেমস অথবা কার্টুন দেখেই সময় কাটায়। ঈদের সালামি  নেওয়ার আনন্দও যেন কিছুটা মলিন হয়ে গেছে, আগের মতো প্রতিযোগিতা আর দেখা যায় না। এমনকি সম্পর্কগুলোও এখন আর আগের মতো উষ্ণ নয়। আগে যেখানে ঈদের দিন একে অপরের বাড়িতে যেত, আনন্দ ভাগাভাগি করত, সেখানে এখন দূরত্ব বেড়ে গেছে। এখন ঈদ হয়ে উঠেছে এক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা, যেখানে সবাই একে অপরের সঙ্গে কেবল ফোনে যোগাযোগ রাখে। সম্পর্কগুলো ধুলোমলিন স্মৃতির মতো হয়ে গেছে। তবে, এখনো কিছু কিছু পরিবারে আগের সেই ঈদের আমেজ রয়ে গেছে। সেখানে এখনো শিশুদের মুখে ঈদের আনন্দ ফুটে ওঠে। ছোটরা নতুন জামা পরে, বড়দের সঙ্গে ঈদের নামাজে অংশ  নেয় এবং কোলাকুলি করে। সেখানে সেমাই, জর্দা  তৈরি হয় এবং পরিবারের সবাই একসঙ্গে ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে। এই ধরনের পরিবেশে ঈদ এখনো তার পুরানো আভা নিয়ে আসে। সর্বোপরি, ঈদ আমাদের জন্য এক অনন্য উৎসব, যা প্রতিটি মুহূর্তে আনন্দ, শান্তি এবং সংহতির বার্তা ছড়িয়ে  দেয়। আমরা চাই ঈদ আসুক এবং যেন সবাই সেই আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারে, সম্পর্কগুলো আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক এবং শান্তি ও ভালোবাসার পরিবেশে ঈদের আনন্দ উদযাপিত হোক।
কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকা থেকে

×