ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৯ মার্চ ২০২৫, ১৫ চৈত্র ১৪৩১

ডিজিটাল প্রভাব

নায়িমা আখতার

প্রকাশিত: ২০:১৬, ২৬ মার্চ ২০২৫

ডিজিটাল প্রভাব

‘ঈদ মোবারক!’ এই শব্দবন্ধেই যেন এক অপার আনন্দের দিগন্ত উন্মোচিত হয়। ঈদ মানেই উৎসব, ঈদ মানেই মিলনমেলা। যুগে যুগে ঈদের রূপ বদলেছে, কিন্তু হৃদয়ের উচ্ছ্বাস আজও একই রয়ে গেছে।
ভার্সিটি থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরার অনুভূতি অদ্ভুত এক মধুর তৃপ্তি, যেন হাজারো স্মৃতি ও ভালোবাসা নিয়ে নিজের ঘরে ফিরছি যেখানে শান্তি, স্নেহ এবং অমূল্য সম্পর্ক অপেক্ষা করে।
একসময় ঈদ ছিল অপেক্ষার নাম। নতুন কাপড় বানানো হতো অনেক আগেই। ঈদের সকাল মানেই নতুন জামা পরে কচিকাঁচাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস, উঠোন জুড়ে আত্মীয়স্বজনের মিলন। বাড়ির মুরব্বিরা ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি করতেন, মিষ্টিমুখ হতো সবার। বড়দের কাছ থেকে সালামি নেওয়ার আনন্দ ছিল অনন্য। শহর থেকে মানুষ ছুটে যেত গ্রামে, আপনজনের সান্নিধ্যে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে।
কিন্তু সময় বদলেছে, সঙ্গে বদলেছে ঈদ উদযাপনের ধরনও। শহুরে জীবনে ঈদের আনন্দ এখন অনেকটাই ডিজিটাল। সকালবেলার ঈদগাহের ভিড় শেষে সেলফি তারপর সেই ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা আর মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে শুভেচ্ছা জানানোর হিড়িক পড়ে যায়। ফেসবুক-ইন্টারনেট ঈদের আনন্দকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই সঙ্গে যেন পারিবারিক ঘনিষ্ঠতাও খানিকটা কমিয়ে দিয়েছে।
গ্রামের ঈদ এখনো অনেকটা আগের মতোই। দাওয়াতের ধুম, পাড়া-প্রতিবেশীর একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, সন্ধ্যার পর চায়ের আড্ডা সব মিলিয়ে ঈদের উষ্ণতা এখানে এখনো প্রাণবন্ত। অন্যদিকে শহরে ঈদ অনেকটা ব্যক্তিগত আনন্দে পরিণত হয়েছে। নামাজের পর অনেকেই ঘরে বসে টেলিভিশন দেখে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যস্ত থাকে কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে।
তবে ঈদ যেভাবেই পালিত হোক, এর অন্তর্নিহিত আনন্দ রয়ে গেছে অটুট। সময়ের সঙ্গে ঈদের রং বদলালেও, তার হৃদস্পন্দন আজও একটাই ‘ভালোবাসা, সংযোগ, আর আনন্দ ভাগাভাগি করা।’ সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদেরও দরকার ঈদের চিরায়ত উষ্ণতাকে ধরে রাখা, প্রযুক্তির মাঝে হারিয়ে না গিয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আসল আনন্দ উপভোগ করা। কারণ ঈদ কেবল উৎসব নয়, এটা আত্মার বন্ধন আরও দৃঢ় করার দিন।

গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ থেকে

×