
দীর্ঘ এক মাস প্রতীক্ষার পর, সিয়াম সাধনায় লিপ্ত থাকার পরেই আসে ঈদের আমেজ। ঈদ মানেই যেন আনন্দ। ভরে যায় সবার মন এক খুশিতে। ঈদের দিনের কথা ভাবলেই যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে আগেকার দিনের কথা। আগে কতই না আনন্দ হতো। ঈদের জন্য বাবা-মায়ের সঙ্গে নতুন পোশাক কিনতে যাওয়া। দোকানে দোকানে সবার চোখে মুখে খুশির এক আমেজ ছিল।
ঈদের সকালে উঠেই যেন সবাই মিলে ঈদগাহ সাজানো দেখতে যাওয়া অন্যরকম ছিল। গোসল করে আতর গায়ে লাগিয়ে ছোটদের নামাজ পড়তে যাওয়া। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি, আর সৌজন্যবোধ যেনো ফুটে উঠত। ঈদ সালামি হিসেবে দোয়েল পাখি আর শহীদ মিনারের ভাসা সেই দুই টাকা ছিল যে আনন্দের। মেহেদি গাছের পাতা দিয়ে হাত রাঙানো কৃত্রিম এর কোনো ছোঁয়া যেন ছিল না। গ্রামের রাস্তার পাশে বসে ভাজতো গরম গরম পাপড় আর হরেক রকম খাবার। মেলা হতো ছিল তাতে হরেক রকম রঙের ছড়াছড়ি। আয়োজন হতো বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান। ছোঁয়া ছিল না কোনো পাশ্চাত্য সংস্কৃতির কোনো কিছু। বিটিভিতে সিসিমপুর, ইত্যাদি যেন এক ভিন্ন মাত্রা ফিরিয়ে দিত ঈদে। বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব বজায় ছিল। সবার বাড়ি যাওয়া তাদেরকে দাওয়াত দেয়া। মায়ের হাতের সেই লাচ্ছা সেমাই, জর্দা সেমাই, জর্দা ভাত ছিল মায়া ভালোবাসা দিয়ে মেশা।
সবার সঙ্গে আত্মিক বন্ধন যেন দৃঢ় ছিল। শহর আর গ্রামের ঈদে আনন্দ উদযাপনে মৌলিক কোনো পার্থক্য চোখে দেখা যেত না। শহরের ঈদে তেমন জৌলুষ আর বাড়াবাড়ি থাকত না, পরিবারের সবাই মিলে কাটানো হতো বেশ। আগে ছিল না সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, ইন্টারনেট। কিন্তু ছিল প্রত্যক্ষ সামাজিক বন্ধন। দিনগুলো খুব সুন্দর ছিল। এখন যেন যান্ত্রিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে তা ক্রমশ। এখনকার আধুনিকতার সংস্পর্শে এসে যেন গ্রামেও নেই আগের মতো ঈদের আমেজ। নেই কোনো সেই বন্ধন। এখন যেন একরত্তি হয়ে গেছে সব। পাল্লা দিয়ে কেনা হয় ঈদের পোশাক। কৃত্রিম মেহেদি দিয়ে রাঙানো হয় হাত। দোয়েল পাখি আঁকা সেই দুই টাকার নোটও নেই ঈদের সালামি হিসেবে। দলবেঁধে খাওয়া হয় না পাপড় ভাজা। এখন তো নামি-দামি সব খাবারের দোকান হয়ে গেছে। বাড়িতে বাড়িতে হয় না মায়ের হাতের স্পর্শের খাবার, ভুলে গেছে যেন সেই আন্তরিকতা। শহর আর গ্রামে তেমন কোনো পার্থক্য আর সহজে বোঝা যায় না। হারিয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন ঈদের সেই দিনগুলো। মন বলে ফিরে পেতে আগের দিনের ঈদ। কোলাহলময় ঈদের দিন না শান্তি আর আন্তরিকতায় ঘেরা ঈদের দিন চাই।
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা থেকে