
সম্পাদকীয়
জাকাত ইসলামের মূল পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। জাকাত শব্দের আভিধানিক অর্থ পবিত্রতা ও প্রবৃদ্ধি। জাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্পদ পবিত্র হয়, জাকাতদাতার আত্মা শুদ্ধ হয় এবং জাকাত প্রদানে সম্পদে বরকত হয়, তাই এ নামকরণ। জাকাত শব্দটি পবিত্র কুরআনে আছে ৩৪ বার। নামাজের সঙ্গে জোড়া শব্দ হিসেবে রয়েছে ২৬ বার।
এ ছাড়া জাকাতের সমার্থক হিসেবে এসেছে ইনফাক ও সদাকাত। ইনফাক অর্থ আল্লাহর পথে ব্যয় করা বা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় ব্যয় করা। সদাকাত অর্থ সততা বা সত্যবাদিতা। সদাকাত প্রদানের মাধ্যমে ইমানের দাবির সত্যতা ও অন্তরের সততার প্রমাণ হয়।
কোনো মুসলিম নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে সেদিন থেকে এক চান্দ্র বছর (৩৫৪-৩৫৫ দিন) পূর্ণ হলে তাকে জাকাত প্রদান করতে হবে। এরপর তিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে থাকলে প্রতি চান্দ্র বছরে একবার জাকাত প্রদান করতে হবে। জাকাত প্রদান না করলে হালাল বা বৈধ সম্পদও হারাম মিশ্রিত হয়ে যায়। হালাল উপার্জন, হালাল সম্পদ ও হালাল খাদ্য ব্যতীত নামাজ, রোজা, হজ কোনো ইবাদতই কবুল হয় না।
জমি, বাড়ি ও গাড়ি যা বিক্রির জন্য রাখা হয়নি, তা জাকাত হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হবে না। জমি, গাড়ি, বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট, যেগুলো বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে, সেগুলোর বর্তমান বিক্রয়মূল্য (বাজারদর) জাকাতের হিসাবে আসবে এবং এর মূল্য হিসাব করে প্রতিবছর জাকাত দিতে হবে।
দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির জন্য জাকাত একটি নির্ভরযোগ্য আর্থিক ব্যবস্থা এবং তহবিল সংগ্রহের খাত। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিকল্পনা, সমন্বয়ের ঘাটতি ও ব্যবস্থাপনার অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না। রাজস্ব আদায়ের মতো জাকাত আদায় করা গেলে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ কোটি টাকা জাকাতের অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব। সুষ্ঠুভাবে জাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ না করায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করার পরও দরিদ্র মানুষের তা কাজে আসছে না।
ইসলামি অর্থনীতিবিদরা জানান, জাকাতের বরাদ্দ সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে অর্থনীতির উৎপাদন স্তরে প্রভাব পড়ে। এতে দারিদ্র্যের হার কমে। তবে বাংলাদেশে সরকারিভাবে জাকাত আদায় ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। এর ফলে সমাজ থেকে দারিদ্র্য ও বৈষম্য মুছে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না।
২০২২ সালে বাংলাদেশে জাকাত সংগ্রহের সম্ভাব্যতা অনুমান করার একটি গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। গবেষণায় সরকারি অফিস, ওয়েবসাইট, বই এবং জার্নাল থেকে ডেটা ব্যবহার করে বাংলাদেশে সম্ভাব্য জাকাত অনুমান করা হয়েছে। জাতীয় সম্ভাব্য জাকাত অনুমান করার প্রক্রিয়ায়, নয়টি উৎস বিবেচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক আমানত, শেয়ার এবং সিকিউরিটিজ, প্রভিডেন্ট ফান্ড, পশুসম্পদ, মৎস্য, কৃষি-শস্য ও বনজ, শিল্প উৎপাদন, বাণিজ্য পরিষেবা এবং খনি।
এসব খাত থেকে অর্থনীতিতে অতিরিক্ত মূল্য বিভিন্ন উপায়ে পাওয়া যায়, অর্থাৎ নিসাবের বিভিন্ন হার। দেশে সরকারি পর্যায়ে জাকাত সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় কার্যকরী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্বব হলে সমাজের বিরাট উপকার এবং দারিদ্র্যের মাত্রা অনেকটাই যে কমে আসবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। জাকাত প্রদানে চাই শতভাগ সততা ও ধর্মীয় অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলা।