
সম্পাদকীয়
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪তম বছরটি এসেছে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আলোকিত ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনের ব্যতিক্রমী বার্তা নিয়ে। ইতোপূর্বে পালিত হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতার সূর্য উঠবেই, উঠেছেও। বিজয় নিশানও উড়ছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে, ঘরে ঘরে, আকাশে-বাতাসে সর্বত্র। কেননা, স্বাধীনতা অমলিন, চিরকালের। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস।
একটি সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এইদিন বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা হয়। এর জন্য এ দেশের মানুষকে দীর্ঘ ৯ মাস পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করতে হয়েছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যে অর্জনগুলো ক্রমশ দৃশ্যমান হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম যমুনা ও পদ্মা সেতু, প্রধান প্রধান হাইওয়ের উন্নয়ন, চট্টগ্রামে নিউমুরিং টার্মিনাল নির্মাণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের আধুনিকায়ন, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ইত্যাদি।
ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এলএনজি যুগে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম, মোংলার উন্নয়নের পাশাপাশি মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বনির্ভরতা অর্জন করেছে দেশ। গার্মেন্টস রপ্তানিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। রপ্তানি আয়ও ক্রমবর্ধমান। বেড়েছে প্রবাসী আয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারায় মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
সর্বোপরি বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু-৭২ বছরের বেশি। এসবই বলতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুফল। জাতিসংঘ কর্তৃক ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বীকৃতি পেয়েছে উন্নয়নশীল দেশের, যা কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী এ দেশের নিরস্ত্র অসহায় মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের এই ভয়াবহ তা-ব চলে সারারাত। এই রাতেই শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। মূলত ২৬ মার্চ প্রত্যুষেই শুরু হয় বাংলার গণমানুষের সশস্ত্র প্রতিরোধ।
ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন এবং অগণিত মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে এনেছি একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার জন্য এমন আত্মত্যাগ খুব কম জাতিই করেছে বিশ্বে। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর শুরু হয় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের কাজ।
মহাকালের বিচারে ৫৪ বছর খুব বড় সময় নয়। তবে এ সময়ের ব্যবধানে কোনো কোনো জাতির অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার নজিরও আছে। আজ আমাদের বিচার-বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন স্বাধীনতার প্রায় সাড়ে পাঁচ দশকে আমরা কতটা এগিয়েছি, কী ছিল আমাদের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা, পূরণ হয়েছে কতটা। কোথায় আমাদের ব্যর্থতা, কী এর কারণ। স্বাধীনতার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয় ভৌগোলিকভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা ভূখণ্ডের অধিকারী হওয়া, তাহলে তা অর্জিত হয়েছে বটে।
তবে শুধু এটুকুই গণমানুষের প্রত্যাশা ছিল না। বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সার্বিক অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যেও কাজ করতে হবে। স্বাধীনতা দিবসে নানা আনুষ্ঠানিকতা, নানা আয়োজন করা হয়েছে। আমরা এই মহান দিনটিতে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও নির্যাতিত মা-বোনদের। যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, নিয়েছিল জীবনপণ শপথ, তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের সবার।