
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতির জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তন এবং শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কর্মমুখী শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ বাড়ছে।
কর্মমুখী শিক্ষা হচ্ছে এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা, যা শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কাজের দক্ষতা ও বাস্তব জ্ঞান প্রদান করে। ফলে তারা কর্মক্ষেত্রে সরাসরি অবদান রাখতে সক্ষম হয়।
বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মূল লক্ষ্যই হলো কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়ন করা। অধিদপ্তরটি মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা, একাডেমিক কার্যক্রমের তদারকি এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে কাজ করে।
বর্তমানে অধিদপ্তরের অধীনে ২০৫টি সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা এবং ডিগ্রি স্তরে পাঠদান করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড দেশের কারিগরি শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করে।
বিটিইবি বিভিন্ন স্তরের কারিগরি শিক্ষার পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ এবং সনদ প্রদান করে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করে।
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি মিলে প্রায় ৮,৬৭৫টি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে প্রায় ১২ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জন করে, যা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায়।
উদাহরণস্বরূপ-রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি, ওয়েল্ডিং কাজ, সেলুন বা হেয়ার ড্রেসারের মতো পেশায় দক্ষতা অর্জন করে তারা স্বনির্ভর হতে পারে। এসব পেশায় দক্ষ কর্মীর চাহিদা সবসময়ই থাকে। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। প্রযুক্তিনির্ভর সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত মানবসম্পদের চাহিদা অনেক বেশি।
সাধারণ শিক্ষার তুলনায় কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দ্রুত কর্মসংস্থানে প্রবেশ করতে পারে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখতে সক্ষম হয়।
তবে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সচেতনতার অভাবে শিক্ষার্থীরা কারিগরি শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয় না।
এ ছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সার্বিকভাবে, দক্ষ মানবসম্পদ গঠনে কর্মমুখী শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করা, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে বাংলাদেশে দক্ষ মানবসম্পদ গঠন আরও ত্বরান্বিত হবে।
যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়