
ছবি: সংগৃহীত
ঈদ আসলেই রাজধানীর বাতাস ভারী হয়ে ওঠে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বঞ্চনার আহাজারিতে। বছরের পর বছর একই চিত্র—ঈদের আগে মজুরি পরিশোধ না হওয়া, বোনাসের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ, আর্থিক সংকটে শ্রমিকদের রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করা, এবং শেষ পর্যন্ত পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হওয়া।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত হলেও, এই শিল্পের প্রাণ—গার্মেন্টস শ্রমিকরা—এখনও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শ্রমিকদের অভিযোগ, বেশিরভাগ কারখানায় ঈদের আগে বোনাস তো দূরের কথা, দুই-তিন মাসের বেতনও আটকে রাখা হয়। মালিকপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই দেখা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন।
শ্রমিক নেতারা বলছেন, ঈদের আগে বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিশ্চিত করতে সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি বলেন, "গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের শ্রম থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করে, অথচ শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধে তারা অনীহা দেখায়। এটি মানবাধিকারের লঙ্ঘন।"
শ্রমিকদের এই অবস্থা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সংকট নয়, বরং একটি কাঠামোগত বৈষম্যের প্রতিফলন। মালিকপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার সীমিত সুযোগ, এবং সরকার ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা—এসব মিলিয়েই তাদের দুর্দশা চরমে পৌঁছায়। অথচ ঈদ এমন একটি উৎসব, যেখানে প্রতিটি পরিবার চায় অন্তত কিছুটা সুখের সময় কাটাতে। কিন্তু গার্মেন্টস শ্রমিকদের সেই মৌলিক আনন্দটুকুও হাতছাড়া হয় শুধুমাত্র তাদের ন্যায্য অধিকার না পাওয়ার কারণে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর মধ্যে কার্যকর সমঝোতা দরকার। না হলে, প্রতিবারের মতো এবারও গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য ঈদের আনন্দ হয়ে থাকবে শুধুই আক্ষেপের আরেক নাম। সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম আইন যথাযথ বাস্তবায়ন, সময়মতো মজুরি পরিশোধ নিশ্চিত করা এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর নীতিমালা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
ফারুক