ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১

মুসলিম বিশ্বের দ্বিধা-বিভক্তির শেষ কোথায়?

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ১৭:২০, ২৪ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১৭:২০, ২৪ মার্চ ২০২৫

মুসলিম বিশ্বের দ্বিধা-বিভক্তির শেষ কোথায়?

ছবি: সংগৃহীত

মুসলিম বিশ্ব এক সময় ঐক্যবদ্ধ থাকলেও, বর্তমানে এটি গভীর বিভক্তির শিকার। মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা থেকে ইউরোপ—প্রত্যেকটি অঞ্চলে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য বেড়েই চলেছে। এই বিভক্তির পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন কারণ।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা চলছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) নিজেদের মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে চায়। তুরস্ক ও কাতার সৌদি নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করছে। মিসর, ইরান ও পাকিস্তান নিজেদের আলাদাভাবে শক্তিশালী করতে চাইছে। ফলে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের বদলে প্রতিযোগিতা ও অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে।

মুসলিম বিশ্বের একাংশ ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে, আবার অনেক দেশ ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। তুরস্ক, ইরান, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ফিলিস্তিনিদের সমর্থন দিচ্ছে। এই মতপার্থক্য মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে গভীর বিভাজন সৃষ্টি করেছে।

মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশ সরাসরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা চীনের ওপর নির্ভরশীল। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। ইরান, সিরিয়া, লেবানন রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াচ্ছে। এই বহিরাগত প্রভাব মুসলিম বিশ্বের অভ্যন্তরীণ বিভক্তি আরও গভীর করছে।

একসময় মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব ছিল উসমানীয় খিলাফতের হাতে। ১৯২৪ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব শূন্য হয়ে যায়। বর্তমানে সৌদি আরব, তুরস্ক, ইরান ও পাকিস্তান আলাদাভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বের অভাবে মুসলিম দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

মুসলিম দেশগুলোর অর্থনীতি ও সামরিক শক্তি নিয়ে প্রতিযোগিতা চলছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক নেতৃত্ব চায়। তুরস্ক ও ইরান নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়িয়ে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার করছে। পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনী রাখলেও তাদের আন্তর্জাতিক প্রভাব সীমিত।
এই প্রতিযোগিতা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য গঠনের পরিবর্তে বিভক্তি বাড়াচ্ছে।

মুসলিম বিশ্বে চীন ও রাশিয়ার প্রতি একেক দেশের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। পাকিস্তান, ইরান ও তুরস্ক চীনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ। কিছু মুসলিম দেশ রাশিয়াকে সমর্থন করে, আবার কিছু যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকে। এই ভিন্ন কৌশল মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য গঠনের পথে বড় বাধা।

মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের অভাবে রাজনৈতিকভাবে দুর্বল হচ্ছে। দেশগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক লড়াই চালাচ্ছে। ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না। মুসলিম বিশ্বের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস বাড়ছে। যদি মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, তাহলে ভবিষ্যতে পশ্চিমাবিশ্ব, ইসরাইল এবং ভারত মুসলিম দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিভক্তিকে আরও গভীরভাবে ব্যবহার করবে। এই বিভাজন যদি চলতে থাকে, তবে মুসলিম বিশ্ব আরও দুর্বল হবে এবং বাইরের শক্তিগুলো তাদের ওপর কর্তৃত্ব বিস্তার করবে।

ফারুক

×