ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের রোল মডেল হতে পারে চীনা কৌশল

প্রকাশিত: ১০:৫১, ২৪ মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের রোল মডেল হতে পারে চীনা কৌশল

ছবি:সংগৃহীত

১৪০ কোটির বেশি মানুষের দেশ চীন দারিদ্র্য দূরীকরণে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এর জ্বলন্ত উদাহরণ হলো চীনের ইউনান প্রদেশের নুজিয়াং সাহিত্যশাসিত অঞ্চল। মাত্র ১০ বছরে দারিদ্র্যপীড়িত এই অঞ্চলটি স্বাবলম্বী শহরে পরিণত হয়েছে। নুজিয়াংকে সামনে রেখে বাংলাদেশও উন্নয়নের সিঁড়িতে পা রাখতে পারে। এজন্য প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কঠোর পরিশ্রম।

 

 

 

নুজিয়াং অঞ্চলটি চীনের ইউনান প্রদেশে অবস্থিত। এক দশক আগেও এই অঞ্চলটি ছিল দারিদ্র্যপীড়িত। চাষযোগ্য জমির ৭৬ শতাংশই ছিল পাহাড়ের ঢালে। ২০১৮ সালেও নুজিয়াংয়ের ১ লাখ ৬৪ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করত। কিন্তু মাত্র ১০ বছরের কঠোর পরিশ্রম ও বহুমাত্রিক প্রচেষ্টায় এই অঞ্চলের চিত্র বদলে গেছে। পাহাড় কেটে টানেল তৈরি, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং চাষাবাদে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নুজিয়াং এখন স্বাবলম্বী অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।

দারিদ্র্য বিমোচনে নুজিয়াংয়ের মূল কৌশল ছিল দুটি: প্রথমত, যোগাযোগে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং দ্বিতীয়ত, কর্মসংস্থান তৈরি করা। শুরুতে পাহাড়ি জীবনে অভ্যস্ত মানুষদের স্থানান্তর করা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। তবে শিক্ষা ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় তারা এখন সমাজে প্রতিষ্ঠিত। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বয়স্করা নতুন দক্ষতা অর্জন করছেন, নারীরা গাড়ি চালানোসহ নানামুখী কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে নিজেদের দক্ষতা বাড়াচ্ছেন।

 

 

নুজিয়াংয়ের উন্নয়নের পেছনে রয়েছে স্থানীয় জনগণের আয়ের উৎস বৃদ্ধি এবং শিক্ষার প্রসার। এই অঞ্চলের জনগণকে সক্ষম করে তোলার পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি করা হয়েছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নুজিয়াংয়ের দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করছে, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে।

এখানকার একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো বেসবল তৈরির কারখানা। চীন মূলত ফুটবলপ্রেমী দেশ হলেও বেসবল বল তৈরির শিল্প এখানে বিকশিত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে জনপ্রিয় এই খেলার সরঞ্জাম তৈরির মাধ্যমে নুজিয়াংয়ের নারীরা কুটির শিল্পের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছেন। এই শিল্প স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

 

 

নুজিয়াংয়ের সাফল্য বাংলাদেশের জন্য একটি অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশও দারিদ্র্য দূরীকরণে নুজিয়াংয়ের মতো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন করতে পারে। এজন্য প্রয়োজন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার এবং স্থানীয় জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধি। নুজিয়াংয়ের গল্প প্রমাণ করে যে সঠিক পরিকল্পনা ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে দারিদ্র্য জয় করা সম্ভব।

×