ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

জাল নোট চক্র

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ২৩ মার্চ ২০২৫

জাল নোট চক্র

পবিত্র রমজানের শেষে একরাশ আনন্দের বার্তা নিয়ে ঈদুল ফিতর যখন সমাগত, তখন স্বভাবতই রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জ পর্যন্ত জমে উঠেছে ঈদের বাজার ও কেনাকাটা। রমজানের ঈদের প্রধান আকর্ষণ নতুন পোশাক-পরিচ্ছদ হলেও এর অনুষঙ্গ হিসেবে জুতা, গহনা, সুগন্ধি, টুপি, জায়নামাজ, তসবিহ, আতর ইত্যাদির চাহিদাও কম নয়। এর সঙ্গে রয়েছে ঈদ উৎসব পালনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে ভালোমন্দ নানা খাবারের আয়োজন। সব মিলিয়ে প্রায় সবরকম পণ্যের বিপুল চাহিদা বেড়ে যায় এ সময়। প্রধানত বিশাল এই বাজার ও কেনাকাটাকে উপলক্ষ করে ঢাকাসহ অন্যান্য শহর-বন্দর এবং হাটবাজারে সক্রিয় হয়ে ওঠে একাধিক জাল নোট চক্র ও কারবারি। ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকও প্রচুর নতুন নোট ছাপিয়ে বাজারে ছাড়ে। জাল নোট চক্রের সামনেও থাকে এই সুযোগ ও সময়।
জাল নোট সহজে শনাক্ত করাও দুঃসাধ্য। উচ্চ বেতনের গ্রাফিক্স ডিজাইনার, উন্নতমানের কম্পিউটার, দামি কালি, প্রিন্টার, হিট মেশিন, বিভিন্ন ধরনের স্ক্রিন, ডাইস, উন্নতমানের কাগজ, জাল নোটের নিরাপত্তা সুতা, আঠা ও স্কেলকাটার ব্যবহার করে প্রায় নিখুঁতভাবে ছাপা হয় জাল নোট। যা হাতে নিলে সহসাই আসল টাকা বলে মনে হতে পারে ক্রেতা ও বিক্রেতার। বাংলাদেশী টাকা ছাড়াও মার্কিন ডলার, ভারতীয় রুপিও ছাপা হয় বাজারে চাহিদা বেশি থাকায়। এরপর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়া হয় এজেন্টের মাধ্যমে। ফেসবুক পেজ এবং গ্রুপ খুলেও জাল টাকা ছড়ানোর প্রচার চালানো হয়। ব্যতিব্যস্ত জমজমাট ঈদের কেনাকাটার লেনদেনের মধ্যে আসল টাকার গোছার মধ্যে দুই-চারটি জাল নোট চালিয়ে দেওয়া কঠিন কিছু নয়। গত ১৭ মার্চ ঢাকার আর কে মিশন রোডের একটি বাসায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে ৩৮ লাখ টাকা, ভারতীয় রুপিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি উত্তরা বিভাগ। আনুষঙ্গিক সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়। সে অবস্থায় টাকা লেনদেনের সময় তাড়াহুড়া না করে সতর্ক থাকতে হবে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে।
ঈদের বাজারে জাল টাকা ছড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট প্রায় সব ব্যবসায়ী। কারণ, জাল টাকা চেক করার মেশিন অধিকাংশ স্থানে নেই। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, পণ্য কেনাকাটায় লেনদেনের সময় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে টাকা যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা  রক্ষাকারী  বাহিনীর হাতে প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জাল টাকার কারবারি ধরা পড়লেও থেমে নেই জাল টাকার ব্যবসা। টাকা জাল করায় অনেককে প্রায়ই গ্রেপ্তার হচ্ছে। আবার জামিনে বেরিয়ে একই কারবারে জড়িয়ে পড়ছে। জেলে থাকা অবস্থায় জাল টাকার কারবারিদের সঙ্গে অনেকের পরিচয় হয়। তারপর তাদেরও বানানো হয় এজেন্ট। জালনোট বিক্রি করতে পারলে তাদের দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের কমিশন। জালনোটের কারণে অর্থনীতিতে সৃষ্ট নেতিবাচক প্রভাব, সন্দেহ, অবিশ্বাস, আতঙ্ক, অস্বস্তি দূর করতে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সর্বত্র সাঁড়াশি অভিযান চালানোও আবশ্যক। ইতোমধ্যে জাল টাকার কারবারির কয়েকটি চক্র ধরা পড়লেও সামগ্রিকভাবে তা পর্যাপ্ত নয়। যে কারণে জাল নোটের অপকর্মের হোতারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। যারা মানুষের প্রাত্যহিক লেনদেনে ভীতি, অনিশ্চয়তা, অস্বস্তি সৃষ্টি করছে, সেসব অপরাধীর কোনো ছাড় নয়। এক্ষেত্রে ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত নজরদারি এবং ঝটিকা অভিযান চালানোর বিকল্প নেই।

×