ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

বিমানের সামনে চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:৫০, ২৩ মার্চ ২০২৫

বিমানের সামনে চ্যালেঞ্জ

রাষ্ট্রীয় বাংলাদেশ বিমান পরিবহন সংস্থাটি দীর্ঘদিন যাবৎ নানা সমস্যায় জর্জরিত। গুণগতমান, সময়সূচি, নিরাপত্তা ও গ্রাহক সেবায় অসন্তুষ্টি সৃষ্টিসহ এই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে রয়েছে নানা সমস্যা। তবে অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও গত সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসে বিমানের টিকিট বিক্রি হয়েছে চার হাজার ৫৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। মাসিক গড়ে হয় ৯ শতাধিক কোটি টাকা, যা বিমানের ইতিহাসে একক মাসের সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় সম্ভব। একইসঙ্গে বিমানের রুট ও যাত্রী বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব পরিচালনায় জনবল নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। ব্যবস্থাপনার এই চিত্র দেখে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদ আলম আশা প্রকাশ করেছেন, ‘এবার ভালো কিছু হচ্ছে। চোখে পড়ার মতো পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বলা যেতে পারে বিমানে এখন ছন্দ ফিরছে।’
বাংলাদেশ বিমানের বিমান বহর (ফ্লিট) পুরানো। নতুন প্রযুক্তির আধুনিক বিমান যুক্ত করা এবং পুরানো বিমানের আধুনিকায়ন একান্ত প্রয়োজন। অনেক সময় ফ্লাইট বিলম্বিত হওয়ায় যাত্রীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বিমান চলাচলে সময়সূচি মেনে চলাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকার বিমান ব্যবস্থার উন্নতির জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন টার্মিনাল চালু হয়েছে, যা যাত্রীদের আরও উন্নত সেবা প্রদান করছে। চট্টগ্রাম, সিলেট ও অন্যান্য শহরের বিমানবন্দর উন্নত করার কাজও চলছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়েছে, যেখানে নতুন নিরাপত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকার ডিজিটাল টিকিটিং সিস্টেম চালু করে বিমান যাত্রা আরও সহজ করেছে। অনলাইন চেক-ইন ব্যবস্থার মাধ্যমে যাত্রীরা তাদের টিকিট সংগ্রহ ও ফ্লাইটের তথ্য পাচ্ছেন দ্রুত। চেক-ইন, সিকিউরিটি স্ক্যানিং এবং ব্যাগেজ চেকিং পদ্ধতি আরও উন্নত করা হয়েছে।
বিমানের সেবার মান আরও উন্নত করার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী নিয়োগ ও সেবা প্রক্রিয়া আরও দক্ষ করতে হবে। খাবারের মান, সিট ব্যবস্থা ও শৌচাগার পরিষ্কার রাখতে নিতে হবে উন্নত ব্যবস্থা। সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার জন্য বিমান সংস্থাগুলোর পাইলট ও কেবিন ক্রুদের প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি করা উচিত। পাশাপাশি নতুন রুটসহ বিমান চলাচলের পরিকল্পনা সঠিকভাবে  তৈরি করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিমানে যাত্রীর সংখ্যার ১২ মিলিয়ন। আগামী দশ বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে ২৫ মিলিয়ন হবে। তাই বিমানের সামনে এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নতুন উড়োজাহাজ কেনা। এছাড়াও বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের পুরানো দুর্নাম ঘুচিয়ে যাত্রীদের আস্থায় ফেরাতে ৬০০ কোটি টাকার বিশ্বমানের ইক্যুইপমেন্ট কেনা হয়েছে। থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সব কৌশলই নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমান সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও, সরকারের পদক্ষেপে বিমান পরিবহন ব্যবস্থা ইতোমধ্যে অনেক উন্নত হয়েছে। তবে বিমান সেবাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে, যাতে যাত্রীদের অধিকতর সুবিধা প্রদান করা সম্ভব হয়। সেবার মান, নিরাপত্তা এবং আধুনিকীকরণে গুরুত্ব দিলে বাংলাদেশের বিমান পরিবহন ব্যবস্থা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।

×